গল্প — নতুনপাতা
শ্রাবণী ও বুলবুলিটা
সৌরীশ মিশ্র
রবিবারের সকাল। প্রায় আটটা বাজতে চলেছে। নিজের ঘরে পড়াশোনা করছিল শ্রাবণী।
শ্রাবণীর ঘরটা বেশ নিরিবিলি। এই বাড়ির দোতলায় একেবারে পিছনের ঘর এইটি। এইদিকে রাস্তা নেই কোনো। তাই লোকজনের আনাগোনাও নেই। এই পাশে শুধু আছে একটা মস্ত ফলের বাগান। শ্রাবণীদের এক প্রতিবেশীর বাগান এটা।
শ্রাবণীর এইবার ক্লাস নাইন হোলো। পড়াশোনায় এক কথায় বলতে গেলে ব্রিলিয়ান্ট শ্রাবণী। এখনও অবধি প্রতিটি অ্যানুয়াল এক্সামে ও ফার্স্ট ছাড়া সেকেন্ড হয়নি কক্ষনো। ক্লাসে ওঠার পরীক্ষায় ওর প্রথম স্থান পাওয়া একেবারে বাঁধা।
যাই হোক। এই মুহূর্তে, ও ইতিহাস পড়ছে। ইতিহাস ওর প্রিয় বিষয়গুলোর মধ্যে একটি। খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছিল সে চ্যাপ্টারটা। আর তখুনি, কোথা থেকে যেন একটা বুলবুলি পাখি শ্রাবণীর ঘরের একমাত্র খোলা জানলাটা দিয়ে এসে আচমকাই ঐ ঘরে ঢুকল।
শ্রাবণীর ঘরের দরজা বন্ধ করে পড়ার অভ্যাস চিরকাল। এখনও তাই ঐ ঘরের দরজাটা বন্ধই ছিল। তাই পাখিটা ঘরে ঢুকে হঠাৎই এক বদ্ধ জায়গায় এসে পড়ে ভয়ের চোটে উদভ্রান্তের মতোন সারা ঘরময় ডানা ঝাপটাতে-ঝাপটাতে ঘুরতে থাকল।
এদিকে শ্রাবণীও পাখিটা ঘরে আচমকাই ঢুকে পড়ায় প্রথমে হকচকিয়ে গিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু কয়েকক্ষণের মধ্যেই সে নিজেকে সামলে নিল। পরিচিতজনদের কাছে মেধাবী হিসেবে যেমনটি সুনাম আছে শ্রাবণীর, ঠিক তেমনই সবাই তারিফ করে সবসময়ই শ্রাবণীর প্রত্যুৎপন্নমতিত্বরও। আর তা করে কেন, তা আজো প্রমাণ করল শ্রাবণী।
সে বিদ্যুৎ গতিতে প্রথমেই পড়ার টেবিলের চেয়ার থেকে উঠে ফ্যানের সুইচটা অফ্ করে দিয়ে ঘরে ফুল স্পিডে চলা পাখাটা বন্ধ করে দিল, যাতে ফ্যানের ঘোরা ব্লেডে লেগে কোনোভাবে আহত না হয়ে যায় বুলবুলিটা। সে তারপরই ঘরের বাকি দুটো জানলাও খুলে দিল ঝটপট। ঐ জানলাগুলো কিছুক্ষণ আগেই বন্ধ করেছিল শ্রাবণীই, বাইরে হয়ে চলা ভীষণ বৃষ্টির ঝাট্ তখন ঘরে ঢুকছিল বলে।
আর এদিকে ততক্ষণে কিছুটা সময় কাটায় বুলবুলিটিও শান্ত হয়েছে বেশ কিছুটা। সে এই মুহূর্তে এসে বসেছে এই ঘরের বড় আলমারিটার উপর। ঘাড় ঘুরিয়ে-ঘুরিয়ে এখন ঘরের চারদিক দেখছে সে তার ছোট্ট ছোট্ট চোখ দুটো দিয়ে।
জানলাগুলো খুলে জানলার পাশ থেকে সরে এল এবার শ্রাবণী। আর যেই না শ্রাবণী সরে গিয়েছে, ওমনি পাখিটা শ্রাবণীর ঠিক মাথার উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে ঘরের বাইরে বেড়িয়ে গেল, শ্রাবণী একটু আগে যে জানলা দুটো খুলল, তারই একটা জানলার গ্রিলের ফাঁক গলে।
শ্রাবণী প্রায় ছুটে এল ঐ জানলাটার সামনে, পাখিটা কোথায় গেল তা দেখার জন্য। সে দেখতেও পেল। সে দেখল, বুলবুলিটা গিয়ে বসেছে ওদের বাড়ির পিছনের সেই যে ফলের বাগানটা, সেটারই একটা মস্ত আমগাছের ডালে। এদিক-ওদিক চাইছে পাখিটা। তারপর কি মনে করে হঠাৎই ফুরুৎ করে উড়ে গেল সেটা কোথায় যেন!
শ্রাবণী পায়ে পায়ে এবার এগিয়ে গেল ঘরের সুইচ বোর্ডের কাছে। অন্ করল সে ঘরের ফ্যানটা। এসে বসল তারপর ফের সে তার পড়ার টেবিলে। টেনে নিল ওর হিস্ট্রির বইখানা। তারপর, ডুবে গেল শ্রাবণী পুরো ফের সেটা পড়াতেই।
Comments :0