MD SALIM POLICE

অপরাধের কাজে পুলিশের বিশেষ  টিম রাজ্যে, অভিযোগ সেলিমের

রাজ্য

৫ অক্টোবর সিজিও কমপ্লেক্সের সামনে তোলা ছবি।


 বিজেপি শাসিত গুজরাট, উত্তর প্রদেশের মতোই পশ্চিমবঙ্গেও জেলায় জেলায় পুলিশের বিশেষ অপারেশন টিম তৈরি করে অপরাধমূলক কাজ চালাচ্ছে মমতা ব্যানার্জির সরকার। সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বুধবার একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই অভিযোগ করে বলেছেন, মোদী আর মমতা ব্যানার্জির রাজনীতি এক। গুজরাট এবং উত্তর প্রদেশের মতো এরাজ্যেও পুলিশে বিশেষ অপারেশন টিম তৈরি করা হয়েছে বেআইনী এবং অসাংবিধানিকভাবে। হাওড়ায় আনিস খানকে তারাই খুন করেছে। 
সেলিমের আরও অভিযোগ, জেলায় জেলায় যত নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে, অজ্ঞাত লাশ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে, এসবের পিছনে হাত কাদের? ওদের হাত আছে বলেই কোনো তদন্ত করছে না। পুলিশমন্ত্রী বলুক, কোন সার্কুলারে পুলিশের এই টিম তৈরি করা হয়েছে? কী তাদের কাজ, আর কী তারা করছে? 
তৃণমূল এবং বিজেপি’র মধ্যে সেটিংএর কারণেই রাজ্যের পুলিশ এবং কেন্দ্রের পুলিশ ও তদন্তকারী এজেন্সিগুলি এরাজ্যের শাসকদলের কোনো দুর্নীতির তদন্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা করছে না বলে জানিয়েছেন সেলিম। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, রাস্তায় ট্রেনে বাসে চায়ের দোকানে ‘বিজেমূল’ তো এখন রাজ্যের মানুষ বলছেন। হাইকোর্টে স্পষ্ট হয়ে গেছে ওদের সেটিং। ইডি সিবিআই লেগে থেকেও ভাইপো’র ঠিকানা এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাচ্ছে না। উনি গৃহহীন ভবঘুরে নাকি? লোকে দেখতে পাচ্ছে যে সাজানো প্রচারে তৃণমূল এবং বিজেপি’র বাইনারি তৈরি করা হচ্ছে। আমরা আন্দোলনের জোয়ারে সেই বাইনারি ভাঙছি। তাতে হয়তো অনেকের জ্বালা যন্ত্রনা হচ্ছে। 
আগামী লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে কোনো সমঝোতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে সেলিম বলেছেন, বিরোধীদের মুম্বাই বৈঠক থেকে বলে দেওয়া হয়েছে সর্বভারতীয় স্তরে কোনো আসন সমঝোতা হবে না। তৃণমূল এবং আপ চেয়েছিল, কিন্তু তাও হবে না। রাজ্যস্তরে হবে। তৃণমূল ভেবেছিল বিজেপি লিস্ট করে দেবে আর সেই অনুযায়ী ওরা নানা রাজ্যে কোথায় বাঙালি ভোট আছে দেখে নিয়ে প্রার্থী দিয়ে দেবে। কিন্তু সর্বভারতীয় তৃণমূলকে আমরা রাজ্যস্তরীয় তৃণমূল করে দিয়েছি, যা নির্বাচন কমিশন করে পারেনি। পশ্চিমবঙ্গে আমরা বলেছি, বিজেপি এবং তৃণমূল বিরোধী সবাইকে এককাট্টা করবো, হচ্ছেও তাই। কে আছে তৃণমূলের সঙ্গে? একটা দলের নাম বলতে পারবে? কংগ্রেসকে পাওয়ার চেষ্টা করেছিল, পারেনি। সিপিআই(এম)’র সঙ্গে বামফ্রন্ট আছে, আরও বামপন্থী দল আছে, কংগ্রেস আছে, আইএসএফ আছে, আরও অন্য সব তৃণমূল বিজেপি বিরোধী শক্তিকে আমরা এককাট্টা করার চেষ্টা করছি।


সেলিম বলেছেন, গোয়া মেঘালয় দেখে সবাই বুঝে গেছে বিজেপি’র যেখানে বিপদ হয় সেখানেই ঝাঁপি থেকে তৃণমূল বের হয়। ‘ইন্ডিয়া’তেও প্রয়োজন হলে তাই করবে। এই তো দেখা যাচ্ছে যে কংগ্রেস এবং বামপন্থীরা সহ সব দল কাস্ট সেন্সাস নিয়ে একমত, চাইছে না কে? বিজেপি আর তৃণমূল। কারণ ওবিসি নিয়ে এখানে যে সংরক্ষণ ছিল তা ওরা তছনছ করেছে। 
লুট দুর্নীতির প্রশ্নে তৃণমূলের বিরোধিতা করলেও সিপিআই(এম) লালুপ্রসাদ যাদবের সঙ্গে কেন? এই প্রশ্ন শুনে সেলিম বলেছেন, লালুপ্রসাদ যাদবের ক্ষেত্রে তদন্ত হয়েছে, কেস হয়েছে, গ্রেপ্তার হয়েছে, লালুপ্রসাদ জেলে গেছে, তারপরে জামিনে আছে। সব হয়েছে। এবং এটা করার জন্য প্রয়োজনে সেনা নামাতে বলেছিল পাটনা হাইকোর্ট। আর অভিষেক ব্যানার্জির বেলা ইডি সিবিআই বাড়ি খুঁজে পাচ্ছে না? বাংলার মানুষ খালি চোখে যা দেখতে পাচ্ছে, মিডিয়া দেখতে পাচ্ছে না? খবরের জন্য খালি রাজভবন দেখাতে হচ্ছে? লালুপ্রসাদের ক্ষেত্রে আইনের যে যে ধারা লেগেছে, মমতা ব্যানার্জির ক্ষেত্রেও সেই সব ধারা লাগানো উচিত। কারণ মুখ্যমন্ত্রীর পদে থেকেও তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। 
বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী ইন্ডিয়া’র বৈঠকের মঞ্চে সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে মমতা ব্যানার্জির এক ফ্রেমে ছবি দেখিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে বামপন্থীদের সমঝোতা হয়েছে বলে প্রচার করছেন। এতে বাংলায় সিপিআই(এম)’র রাজনৈতিক আন্দোলনে কি সমস্যা হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, একসময়ে জ্যোতি বসু এবং বাজপেয়ীর ছবি দেখিয়ে মমতা ব্যানার্জি রাজনীতি করার চেষ্টা করেছিলেন, পারেননি। এখন শুভেন্দু ছবির ফ্রেম দেখিয়ে রাজনীতি ঠিক করে দেবে? রাজনীতি কি আর ঐ ছবির ফ্রেমে আটকে থাকে? শুভেন্দুর সঙ্গে অভিষেকের ছবি, মমতার পায়ে হাত দেওয়া শুভেন্দুর ছবি এগুলোর তাহলে কী হবে? কেরালায় মিডিয়া প্রশ্ন তুলছে সীতারামের সঙ্গে রাহুল গান্ধীর ছবি নিয়ে? রাহুল গান্ধী এবং কেজরিওয়ালের ছবি নিয়ে পাঞ্জাবে কেউ প্রশ্ন করছে? 
সেলিম বলেন, আসলে এরাজ্যে বিজেপি’তে শুভেন্দু অধিকারী পিগমি, তাকে বিজেপি’তে কেউ পাত্তা দেয় না। শুভেন্দুর রাজনৈতিক জন্ম এবং বৃদ্ধি তৃণমূলে, যে কোনো দিনে আবার তৃণমূলে চলে যেতে পারেন। সারদার পয়সায় সততার প্রতীকের প্রথম বড় কাটআউট কাঁথিতে লাগিয়েছিল শুভেন্দুই। শুভেন্দু এখন বলছেন যে কামদুনি কেন বিচার পেলো না, অথচ যে দশবছর কামদুনিতে তৃণমূল সন্ত্রাস চালিয়ে প্রতিবাদী কন্ঠ দমন করেছে, তার মধ্যে ৬ বছর শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলেরই নেতা ছিলেন। ছবির ফ্রেম দেখিয়ে উনি সত্যিকারের রাজনীতিকে আড়াল করতে পারবেন? যা যা অভিযোগ অভিষেকের বিরুদ্ধে আছে তার সবগুলোই শুভেন্দুর বিরুদ্ধেও খাটে। তৃণমূল বলতে পারছে না, আমরা বলতে পারছি।
 

Comments :0

Login to leave a comment