চা বাগানের শ্রমিকদের মজুরি বকেয়া রয়েছে। মেলেনি পূজার বোনাসও। বকেয়া মজুরির দাবিতে আন্দোলনরত চা বাগানের শ্রমিকরা। শুরু হয়েছে রিলে অনশন। সোমবার রিলে অনশনরত চা বাগানের শ্রমিক ও তাদের পরিবার একত্রিত হয়ে আন্দোলনরত হলেন মালবাজার শহরে। বেতন না পাওয়া, কাজ শেষে না খেতে পাওয়া মানুষগুলোর লড়াই নিত্য জীবন সংগ্রামের লড়াই যেন আছড়ে পড়ল শহরের রাজপথে। পাঁচটি পাক্ষিক মজুরি বকেয়া। পাশাপাশি পিএফের টাকা জমা না পরা, ১০ শতাংশ বোনাস বকেয়া, বাগানের স্টাফদের দুই মাসের বেতনও বকেয়া। ইতিমধ্যেই বিষয়গুলিকে কেন্দ্র করে ব্লক মহকুমা সহ প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে জানানো সত্ত্বেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দাবি আদায়ে ২৪ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে বাগানে রিলে অনশন। একদিকে অনশনরত আন্দোলন, অপরদিকে চা বাগানে আন্দোলন, দাগাপুরের নিস্ফলা বৈঠকের পরও মেলেনি কোন সমাধান সূত্র। কার্যত অর্ধাহার, অনাহারেই দিন কাটছে মালবাজার ব্লকের বাগড়াকোট চা বাগানের শ্রমিকদের। বকেয়া মজুরির একটি পাক্ষিক মজুরি দিতে চায় বাগান কর্তৃপক্ষ। আটটা প্রত্যাখ্যান করে শ্রমিকরা আন্দোলনের রাস্তায় নেমেছেন।
সোমবার চা শ্রমিকদের আন্দোলনের ঝড় নামলো মালবাজার মহকুমা শাসকের কার্যালয় চত্বরে। বাগান মালিক এবং লেবার কমিশনারের মৃত কুশপুতুল নিয়ে মিছিল করেন শ্রমিকেরা। বকেয়া মজুরীর দাবিতে চা বাগানের শ্রমিকরা চান মহকুমা শাসক হস্তক্ষেপ করুক। মালবাজার শহর লাগোয়া রাজা চা বাগানের ধোবি মাঠে বাগড়াকোট চা বাগানের শ্রমিকরা এসে জড়ো হন। সেখান থেকে মিছিল শুরু করে মহকুমা শাসকের কার্যালয় পর্যন্ত আসেন। মিছিলে নেতৃত্ব দেন চা বাগান মজদুর ইউনিয়নের নেতা রামলাল মুর্মু, পবন প্রধান, সিকান্দার মাঝি, বিজেপি শ্রমিক সংগঠনের নেতা লড়েন্তুস লাকড়া, আইএনটিটিইউসি নেতা রাজেশ ছেত্রী সহ অন্যান্যরা। মহকুমা শাসকের কার্যালয়ের গেটে মিছিল করে শ্রমিকরা উপস্থিত হলে মালবাজার থানার বিরাট পুলিশ বাহিনী তাদের আটকে দেয়। সেখানেই চলে স্লোগান ও বকেয়া মেটানোর দাবিতে আন্দোলন।
এরপর ১৫ জনের প্রতিনিধি দল মহকুমা শাসকের কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে। মহকুমা শাসকের সাথে প্রায় দুই ঘন্টা ধরে বাগানের বর্তমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে আলোচনা হয় প্রতিনিধি দলের। আলোচনা শেষে বাইরে বেরিয়ে শ্রমিক নেতা পবন প্রধান জানিয়েছেন, ‘‘মহকুমা শাসকের সাথে বাগানের পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। প্রশাসনের উদ্যোগে দ্রুত মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তবে বাগানের শ্রমিকদের রিলে অনশন জারি থাকবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য বাগড়া কোট চা বাগানে ১ হাজার ২৭৫ জন শ্রমিক কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। চা বাগানের মহিলা শ্রমিক প্রতিমা তামাং,শিলা কুজুর, অমৃতা প্রধান, মারশীলা গোয়ালা, মঞ্জুস টিগ্গা প্রমূখ এদিন মিছিলে অংশগ্রহণ করে জানিয়েছেন, বাগানের শ্রমিকরা যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের বকেয়া মজুরি পাচ্ছেন ততক্ষণ আন্দোলন জারি থাকবে। চা বাগানের শ্রমিকদের বকেয়ার দাবিতে এদিনের লড়াই আন্দোলন, মিছিল ও মহাকুমা শাসকের কার্যালয়ে ডেপুটেশন প্রদানকে কেন্দ্র করে মালবাজার শহর শহর ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ অংশের রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের। এদিনের এই আন্দোলনকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমর্থন জানিয়েছে সিপিআই(এম) নেতৃত্ব। এদিনের এই মিছিলে অংশগ্রহণকারী চা বাগানের শ্রমিকদের সঙ্গে ছিলেন সিপিআই(এম) জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক পীযুষ মিশ্র, রাজা দত্ত, মনু ওরাও, গোলেযান সরকার সহ অন্যান্য নেতৃত্ব।
Comments :0