TET PAPER LEAK

শুরুর এক ঘন্টাতেই টেটের প্রশ্নপত্র হোয়াটসঅ্যাপে

রাজ্য

ফাঁস হয়ে গেল টেটের প্রশ্নপত্র। রবিবার টেটের পরীক্ষা শুরু হয় বেলা ১২টা থেকে। এর এক ঘন্টার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় চলে আসে টেটের প্রশ্নপত্র। উত্তর সহ টেটের প্রশ্নপত্র এদিন স্যোসাল মিডিয়ায় দেখা গেছে। পরীক্ষা বেলা আড়াইটের পর দেখা যায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরতে থাকা প্রশ্নপত্রের সঙ্গে হুবহু মিলে গেছে। যদিও প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে মানতে চাননি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ।
তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে যেকোন বড় পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, ডিএলএইড পরীক্ষা, বৃত্তিমূলকের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকে একাধিকবার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। সবেতেই রাজ্য সরকার ‘‘বদনাম’’র অভিযোগ করেছে। রীতি মেনে এদিনের প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে একই মন্তব্য শোনা গেল টেট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পালকে। সভাপতি বলেছেন, একে ‘ফাঁস’ বলা যাবে না। বেলা ১২টায় পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ১টা নাগাদ উত্তরপত্রের ওই অংশ দেখা গিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপে। ৮০০’র কাছাকাছি কেন্দ্র। সেখানে মোবাইল চেক করে তারপর পরীক্ষার্থীদের ঢোকানো হয়েছে। যাঁদের সঙ্গে মোবাইল ছিল, আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। সমাজমাধ্যমের ওই পোস্ট থেকে কোনও পড়ুয়া উপকৃত হননি। কারণ তাঁরা ১১টায় পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকেছেন।’’ গৌতম পালের অভিযোগ, ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ কেউ নাম খারাপ করার চেষ্টা করছেন।
এদিন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ বছর ৩ লক্ষ ৯ হাজার ৫৪ জন টেট দিয়েছেন। রাজ্যের মোটি ৭৭৩টি কেন্দ্রে হয়েছে টেট। যার মধ্যে পাঁচটি কলকাতায়। প্রশ্ন ফাঁস ছাড়াও এদিন টেট পরীক্ষাকে ঘিরে বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। ৫৮বছরের এক ভদ্রলোক ও ৪৫বছরের এক মহিলাকে দেখা গেছে টেট দিতে। তাঁরা টেট পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ডও দেখিয়েছেন। যদিও তাঁরা স্কুলের পার্শ্ব শিক্ষক। কোর্টের নির্দেশের পার্শ্ব শিক্ষকদের টেটে বসার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল স্কুলের পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে পরীক্ষার পর এক দল পরীক্ষার্থী পোস্টার দিয়ে প্রতিবাদে সরব হন। তাঁদের অভিযোগ, নিয়োগ হচ্ছে না, ইন্টারভিউ হচ্ছে না, শুধুই পরীক্ষা হচ্ছে। তাই এই প্রতিবাদ। দক্ষিণ কলকাতায় যাদবপুর বিদ্যাপীঠে নির্দিষ্ট সময়ে অর্থাৎ ১১টার মধ্যে পৌঁছতে না পারায় বহু পরীক্ষার্থী ঢুকতে পারেননি বলে অভিযোগ।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরে এবারে আটটি কেন্দ্রে পরীক্ষা হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর আগে বারুইপুর মাদারহাট পপুলার একাডেমি স্কুলে হয় ঝামেলা। ১১টা বাজতেই মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ, কোনও পরীক্ষার্থীকেই ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন পরীক্ষার্থী বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। প্রশাসনের তরফে স্কুল কর্তৃপক্ষকে বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তাঁরা কান দেননি। স্কুলের সামনে রাস্তা অবরোধ করেন পরীক্ষার্থীরা। সাড়ে ১১টার পর তাঁদের ভেতরে ঢুকতে দেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।
হাওড়া জেলা স্কুলে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন প্রিয়াঙ্কা সান্যাল। পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে এসে তিনি জানতে পারেন, যে সেটের প্রশ্নপত্রে তিনি টেট দিয়ে এলেন, তা পরীক্ষা শেষের আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। প্রিয়াঙ্কা বলেন, “আগেরবারও টেট দিয়ে পাশ করে বসে আছি। কোনও গতি নেই। কোনও আশা নেই এই পরীক্ষা নিয়ে। এটাই শেষবার দিলাম। আর বসব না। টাকা খরচ করে টেটে বসা ফালতু।” তিনি আরো বলেন, “আমাদের কোনও আশা নেই চাকরি পাওয়ার। আমরা ডিএলএড’র যে পরীক্ষা দিই, সেই প্রশ্নপত্রও প্রতিবার বেরিয়ে যায়। আমি এ বছর সেকেন্ড ইয়ার দিই। প্রশ্ন বেরিয়ে গিয়েছিল। পরীক্ষার প্রশ্ন বেরিয়ে যাচ্ছে, জেনে উত্তর দিচ্ছে। আর যারা না জেনে পরীক্ষা দিচ্ছে, তাদের আর ওদের তো ফল এক হবে না। মনে তো হয় না চাকরি পাব বলে। এরপর আর টেট দেবও না।’’ পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া ব্লকের শিলুড়ি গ্রাম থেকে এবার টেট পরীক্ষা দিয়েছেন দুই ভাই দীপ নওয়াজ ও দীপু নওয়াজ। তাঁদের পরীক্ষার কেন্দ্র পড়েছিল বর্ধমান শহরের টাউন স্কুলে। তাঁরা বলেন, “২০২২ সালে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছি। ইন্টারভিউ হয়নি। আবার ২০২৩ সালে পরীক্ষা দিচ্ছি। অথচ নিয়োগ হচ্ছে না। আমরা আশা দেখছি না।”

Comments :0

Login to leave a comment