Neha Singh Rathor

গানে ভয়, ইউপি মে পুলিশ বা

জাতীয়

জনপ্রিয় ভোজপুরী শিল্পী নেহা সিং রাঠোরের বাড়িতে পুলিশ পাঠালো উত্তর প্রদেশের যোগী সরকার। কানপুর দেহাতে সম্প্রতি উচ্ছেদের সময়ে আগুনে পুড়ে মা-মেয়ের মৃত্যু হয়। তা নিয়ে গান বেঁধে ভিডিওতে সম্প্রচার করেছিলেন নেহা। ’ইউপি মে কা বা’ শিরোনামে সেই গানের কারণেই মঙ্গলবার রাতে তাঁর লক্ষ্ণৌয়ের বাড়িতে পুলিশ আসে। পুলিশ তাঁকে নেটিস ধরায়। সেই নোটিসে বলা হয়েছে, ‘এই গানে সমাজে শত্রুতা ও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে।’ তাছাড়াও জানতে চাওয়া হয়েছে কে এই গান লিখেছেন, যদি নেহা নিজে লিখে না থাকেন তাহলে লেখক কি অনুমতি দিয়েছেন, এই গানের যে প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া পড়বে তা কি তাঁর জানা আছে। তিনদিনের মধ্যে উত্তর দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছে। নেহা সিং রাঠোর জানিয়েছেন, তিনি মোটেই সন্ত্রস্ত নন, তিনি এইরকম গান গাইবেন, এবং আইনজীবীদের সাহায্য নিয়ে যা উত্তর দেবার দেবেন। 
সামাজিক মাধ্যমেই নেহার গান জনপ্রিয়। বিহারে জন্ম নেহার, বয়স ২৬। কানপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক নেহা নিজেকে ‘জন কবি’ বলে পরিচয় দেন। ভোজপুরী কবি মহেন্দ্র মিশিরের মতো কবিদের কাছ থেকেই তিনি প্রেরণা নেন বলেও জানিয়ে থাকেন। ২০২০-তে বিহার নির্বাচনের সময়ে ‘বিহার মে কা বা’ শিরোনামে ভোজপুরী ভাষায় ও ভোজপুরী লোকগানের ধরনে তিনি একটি গান তৈরি করেন। কোভিড নিয়ে সচেতনতা, অন্যান্য সামাজিক সমস্যা নিয়েও তিনি গান বাঁধেন। কিন্তু ২০২২-এ উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘ইউপি মে কা বা’ গান দ্রুত তাঁকে জনপ্রিয় করে দেন। এই গানের ঠিক আগে রবি কিষান ‘ইউপি মে সব বা’ নামের একটি গানে যোগী সরকারের ঢালাও প্রশংসা করেন। বিজেপি’র নির্বাচনী প্রচারে সেই গান ব্যবহৃত হয়। নেহার গানে লোককথার ঢঙে উঠে আসে উত্তর প্রদেশে কোভিড মোকাবিলার চরম ব্যর্থতা, লখিমপুর খেরিতে মন্ত্রীর পুত্রের গাড়িতে চাপা পড়ে কৃষকের মৃত্যু, হাথরাসের ধর্ষণের মতো বিষয়। একটি ঢোল ছাড়া কোনও বাজনাও নেই সেই গানে। শাড়ি পরিহিতা সাধারণ বিহারী বা উত্তর প্রদেশের মহিলার মতোই সেই গান ভিডিও করেন নেহা। যোগী সরকারের রাগ তখন থেকেই। 
কানপুরের ঘটনায় উচ্ছেদের সময়ে প্রমীলা দীক্ষিত ও তাঁর কন্যা নেহা দীক্ষিত আগুনে পুড়ে মারা যান। পুলিশই আগুন ধরিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই মর্মান্তিক উচ্ছেদের ঘটনায় রাজ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে তীব্র ধিক্কার ওঠায় তদন্তের আদেশও দেওয়া হয়েছে। ’ইউপি মে কা বা’-রই আরেকটি সংস্করণ হিসাবে নেহা সিং রাঠোর এবার কানপুরের এই ঘটনাকে গানে তুলে আনেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি গানটি সোশাল মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। 
নেহা বিয়ে করেছেন কানপুরেরই হিমাংশু সিংকে। তাঁরা এখন লক্ষ্ণৌয়ে থাকেন। কানপুর পুলিশ দলবদ্ধ ভাবে মঙ্গলবার রাতে তাঁর বাড়িতে যায়। ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়ে যাওয়া ভিডিও-তে দেখা যাচ্ছে নেহা পুলিশকর্মীদের জিজ্ঞাসা করছেন, ‘আপনাদের এইসব করতে কে বলেছে?’ নেহা নোটিসটি গ্রহণ করে স্বাক্ষরও করে দিয়েছেন। নেহা বলেছেন, নোটিস এমনভাবে লেখা হয়েছে যে যেভাবেই উত্তর দিন অপরাধী সাব্যস্ত করা হবে। 
সংবাদমাধ্যমকে নেহা এদিন বলেছেন, যারা সরকারকে পছন্দ করে তাদেরই পুলিশ পছন্দ করে। যারা সরকারের সমালোচনা করে, তাদের পুলিশ পছন্দ করে না। কানপুর দেহাতে কী হয়েছে, তা সকলেই জানেন। দু’জন মহিলা উচ্ছেদ অভিযানে মারা গেছেন। আমি তা নিয়ে গান লিখেছি বলে বাড়িতে পুলিশ হানা দিয়েছে। আমি একজন লোকগায়িকা মাত্র। আমি ‘কা বা’ শৈলীতে এর আগেও গান গেয়েছি। সরকারের উদ্দেশে প্রশ্ন তুলেছি। সরকার উত্তর দেয় না, পুলিশ পাঠায়। যা হচ্ছে তা স্রেফ অসহিষ্ণুতা। উদ্দেশ্য হচ্ছে বিরুদ্ধতার কণ্ঠস্বর বা সমালোচনাকে ভয় দেখানো। আমাকে ওরা ট্রোল করেছে অনেকদিন। এখন আমি থামব কেন? আমি ভীত নই, সন্ত্রস্ত নই। আমি গাইতেই থাকব। 
নেহার বাড়িতে পুলিশ পাঠানোর সমালোচনা করেছেন বিরোধীরা। অখিলেশ যাদব তাঁর টুইটারে ‘ইউপি মে কা বা’ বলে এখন উত্তর প্রদেশে যা যা ঘটনা ঘটছে তার উল্লেখ করেছেন। অখিলেশ লিখেছেন, ইউপি-তে মিথ্যা মামলার বন্যা চলছে, রবি কিষান মারা যাচ্ছে, দলিত-পিছিয়ে পড়াদের ওপরে আক্রমণ চলছে, দুর্নীতির রমরমা চলছে।  
 

Comments :0

Login to leave a comment