NEP

মোদীর শিক্ষানীতি মানতে কমিটি-কৌশল রাজ্যের

রাজ্য

মোদী সরকারের শিক্ষানীতি পশ্চিমবঙ্গেও প্রয়োগ হবে। শনিবার তা আরও একবার স্পষ্ট করলেন রাজ্যে তৃণমূল সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তবে এই পদক্ষেপের প্রতিবাদে শিক্ষামহল সোচ্চার হওয়ায় আপাতত কমিটি গঠনের কৌশল নিচ্ছে রাজ্য। তৃণমূল সরকার যে এই পথেই কেন্দ্রীয় শিক্ষানীতির হুকুম তামিল করতে চলেছে, তাও এদিন বোঝা গিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রীর কথায়।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ মার্চ রাজ্য সরকার জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসারী স্নাতক স্তরের ‘কারিকুলাম অ্যান্ড ক্রেডিট ফ্রেমওয়ার্ক’ আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে কার্যকর করতে রাজ্যের সাহায্যপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নির্দেশ দেয়। সেই খবর প্রকাশ্যে আসায় বিতর্ক দেখা দেয়। চাপে পড়ে স্নাতক স্তরে চার বছরের কোর্স করার নির্দেশ আপাতত স্থগিত করলো সরকার। 
শনিবার এক অনুষ্ঠানের শেষে এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু মন্তব্য করেন, ‘‘এই নিয়ে কোনও কথা বলব না। চার বছরের স্নাতক কোর্স নিয়ে কমিটি গঠন করব। উপাচার্যদের নিয়ে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই নিয়ম কীভাবে কার্যকর করা যেতে পারে, তা নিয়ে সেই কমিটি মত দেবে। তারপর এই বিষয় নিয়ে বলতে পারি।’’


লক্ষণীয়ভাবে শিক্ষা মন্ত্রী এদিন এই একথা বলেননি যে, এবছর চার বছরের স্নাতক কোর্স চালু হবে না রাজ্যে। বরং জানিয়েছেন, এই নীতি প্রয়োগের উপায় বাতলাতে উপাচার্যদের নিয়ে কমিটি হবে। শিক্ষা মন্ত্রী এও বলেননি যে, গত ১৭ মার্চ বিশ্বিদ্যালয়গুলিতে তাঁরই দপ্তর থেকে পাঠানো ৩৪ পাতার নোট অনুসারে এখন কোনও কাজ হবে না। অর্থাৎ সবই হবে মোদী সরকারের নীতি মেনে। কমিটি গড়ে তা কার্যকর করবে তৃণমূল সরকার।
অথচ গোড়ায় মোদী সরকারের ঘোষিত জাতীয় শিক্ষানীতির বিরোধিতা করেছিল রাজ্য। কেন্দ্রের শিক্ষানীতি প্রসঙ্গে সে সময় শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছিলেন, ‘‘এই শিক্ষানীতি আমরা মানবো না।’’ পরে রাজ্যের শিক্ষানীতির জন্য ১০ জনের একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির রিপোর্ট জমাও পড়েছে শিক্ষা দপ্তরে। কিন্তু রাজ্যের প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি সম্পর্কে সরকারিভাবে কিছুই জানানো হয়নি এখন পর্যন্ত। তার মধ্যেই কিভাবে মোদী সরকারের শিক্ষানীতি কৌশলে কার্যকর করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।


এর আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করে অধ্যাপকরা জানিয়েছিলেন, চার বছরের স্নাতক পাঠক্রম করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সমস্যার মধ্যে পড়বে। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমে যাওয়ার পরিস্থিতিও তৈরি হতে পারে। এদিন শিক্ষামন্ত্রীও এসব সমস্যা অস্বীকার করতে পারেননি। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, গত জানুয়ারি মাসে ইউজিসি’র পক্ষ থেকে শিক্ষা দপ্তরের নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছিল। এই নির্দেশিকা নিয়ে আমরা বলতে পারি, পরিকাঠামো তৈরির জন্য যে প্রচুর টাকা দরকার, সেই বিষয়ে ইউজিসি নীরব রয়েছে। টাকাপয়সার ক্ষেত্রে পরিষ্কার নির্দেশিকা চাই।
কেন্দ্রের শিক্ষানীতিতে বলা হয়েছে, ‘কারিকুলাম অ্যান্ড ক্রেডিট ফ্রেমওয়ার্ক’ অনুযায়ী স্নাতকে চার বছরের পাঠক্রম হলে স্নাতক স্তরেই পড়ুয়ারা গবেষণা করতে পারবেন। ৭৫শতাংশ নম্বর থাকলে সরাসরি গবেষণা করার সুযোগ পাবেন পড়ুয়ারা। এই চার বছর কোর্সের মাঝপথে ছেড়ে দিলেও আবার তা শুরু করার সুযোগ থাকবে। এছাড়াও বলা হয়েছে, মাত্র এক বছরেই স্নাতকোত্তর শেষ করা যাবে। কিন্তু স্নাতক, স্নাতকোত্তর স্তরে নতুন এই পাঠক্রমের উপযোগী পরিকাঠামো যে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আদৌ নেই, তা মানছেন সকলে। অথচ মোদী সরকারের সেই নীতিই কৌশলে প্রয়োগের ফিকির খুঁজছে রাজ্যের তৃণমূল সরকার। এতেই অসন্তোষ বাড়ছে শিক্ষামহলে। 
 

Comments :0

Login to leave a comment