Rahul Gandhi

মাথা নত করতে রাজি নন রাহুল ‘আমি সাভারকর নই’

জাতীয়

 

‘‘আমার নাম সাভারকর নয়। আমি গান্ধী। গান্ধী কোনওদিন কারোর কাছে ক্ষমা চায় না।’’ সাংসদ পদ কেড়ে নেওয়ার পরেরদিন শনিবার সাংবাদিক সম্মেলনে একথা জানিয়ে দিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। নিজের অনড় অবস্থানের কথা জানাতে গিয়ে তিনি সচেতনভাবেই টেনে আনলেন সাভারকরের ব্রিটিশরাজের কাছে মাথা বিকিয়ে দেওয়ার সেই ইতিহাস-প্রসিদ্ধ ঘটনা।
ব্রিটেনে নরেন্দ্র মোদীর আমলে ভারতীয় গণতন্ত্রের বেহাল দশা নিয়ে মন্তব্য করায় রাহুল গান্ধীর ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে সংসদের বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব অচল করে দেন বিজেপি সদস্যরা। এর ভিত্তিতেই সাংবাদিকরা রাহুলকে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি সরাসরি উড়িয়ে দিয়ে সাভারকরের মুচলেকার প্রসঙ্গ টেনে এনে ওই কথা বলেন। বস্তুত, রাহুল গান্ধী প্রায়ই বলে থাকেন যে, সাভারকর ব্রিটিশ শাসকদের সহায়তা করেছিলেন এবং আতঙ্কে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান।
কী করেছিলেন সাভারকর? আন্দামানের সেলুলার জেলে বন্দি থাকাকালীন তিনি মুক্তি পেতে মুচলেকা দেন ব্রিটিশ শাসকদের কাছে। ১৯১৪ সালের ১৪ নভেম্বরে লেখা তাঁর দ্বিতীয় মুচলেকায় তিনি বলেছিলেন, ‘যেভাবে চাইবে আমি আমার ক্ষমতা অনুসারে সেভাবেই সাহায্য করবো সরকারকে...পিতামাতা সরকারের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া অপব্যয়ী পুত্র আর কোথায় ফিরতে পারে?’ তিনি শেষ করেছিলেন এই বলে যে, ‘সরকার যেমন বলবে আমি এবং আমার ভাই একটি নির্দিষ্ট ও যুক্তিসঙ্গত সময়ের জন্য রাজনীতিতে অংশ না নেওয়ার অঙ্গীকারে ইচ্ছুক....রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্পষ্টতই এই ধরনের যুক্তিসঙ্গত শর্ত মেনে নিতে আমি এবং আমার ভাই সানন্দে আগ্রহী।’
ফলে সাভারকার যা করেছিলেন এখন তাঁর অনুগামীরা সেভাবেই বিরোধীদের কন্ঠরোধ করতে ক্ষমা চাওয়া বা মাথা নত করার পথ নিতে চাইছে। রাহুল গান্ধী সেপথে না হাঁটায় সুকৌশলে কেড়ে নেওয়া হলো তাঁর সাংসদ পদ।
রাহুলের সাংসদ পদ কেড়ে নেওয়ার চিত্রনাট্য অনেক আগেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সেজন্যই সংসদে তাঁর ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে বিজেপি সদস্যরা হই চই, হুল্লোড় করে চলেন। তারপর বস্তাপচা একটি মামলায় প্রাণসঞ্চার করে রাহুলের প্রথমে সাজার ব্যবস্থা করা হলো এবং কোনওরকম আবেদনের সুযোগ দেওয়ার আগেই তাঁর সাংসদ পদ কেড়ে নেওয়া হলো। গোটা বিরোধী শিবিরই মনে করছে, রাহুল গান্ধীহীন সংসদই চেয়েছিল বিজেপি এবং তারা তা করেই ছাড়ল।
তিনি যে সংসদে নিজের বক্তব্য বলতে চাওয়ার জন্য সময় চেয়েছিলেন সেকথা সাংবাদিকদের কাছে এদিন ফের উল্লেখ করেন রাহুল গান্ধী। তিনি বলেন, ‘‘আমি লোকসভার অধ্যক্ষকে দু’বার চিঠি দিয়েছিলাম। তারপর ব্যক্তিগতভাবে ওঁর সঙ্গে দেখা করে বলি যে ‘আপনি গণতন্ত্রের রক্ষক, আমাকে বলতে দিন’। তারপর হয়তো মোদীজীর কাছেও যেতাম, কিন্তু উনি আমাকে বলার সুযোগ দিলেন না।’’ এরপরেই তিনি ফের জোর গলায় জানিয়ে দেন, ‘‘আমার কথা স্পষ্ট, এদেশে গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। মানুষ তাঁর মনের কথা বলতে পারেন না। দেশের প্রতিষ্ঠানগুলি আক্রমণের শিকার আর এই হামলার প্রক্রিয়ার ভিত্তি হলো মোদী-আদানির সম্পর্ক।’’ রাহুল ফের স্মরণ করিয়ে দেন যে, তিনি আদানিকে নিয়ে প্রশ্ন করেই যাবেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘মন্ত্রীরা মিথ্যা কথা বলছেন যে আমি নাকি বিদেশি হস্তক্ষেপ চেয়েছি। আমি মোটেই তা বলিনি।’’
কোনওরকম আপসের রাস্তায় যেতে যে তিনি রাজি নন তা আবারও জানিয়ে দিলেন রাহুল গান্ধী। বললেন, তাঁর আজীবন সাংসদ পদ চলে গেলে কিংবা জেল হলেও তিনি দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রক্ষার পক্ষে সওয়াল চালিয়ে যাবেন। তিনি মোটেই ভয় পাননি। এসব হুমকি, সাংসদ পদ কেড়ে নেওয়া, জেলে যাওয়ার ব্যাপারে তাঁর কিছু যায় আসে না। উলটে তিনি মনে করেন, ভীত-সন্ত্রস্ত মোদী সরকারই। তাই বিরোধী সাংসদদের পদ কেড়ে নেওয়াকেই হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে। তাঁর সাংসদ পদ কেড়ে নেওয়ার কারণ হিসাবে তিনি বলেন, ‘‘আদানি নিয়ে আমার পরের প্রশ্ন কী হবে এতেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন মোদীজী।’’ রাহুল মনে করেন, আসলে গোটা বিষয়টাই হলো আদানিকাণ্ড থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়ার ছক। আদানির শিখণ্ডী সংস্থায় কে বা কারা ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করলো, এই প্রশ্ন তো তিনি করেই যাবেন, তাও পরিষ্কার জানিয়ে দেন রাহুল গান্ধী। আদানি নিয়ে প্রশ্ন তোলার মূল্য চোকাতে হলো বলে এদিন রাহুল ফের অভিযোগ করেন।
মোদী পদবি তুলে মন্তব্য করে রাহুল গান্ধী ওবিসি সম্প্রদায়কেই অবমাননা করেছেন বলে জোর প্রচার চালাচ্ছে বিজেপি। এই মন্তব্যের জেরেই তাঁর সাংসদ পদ কেড়ে নেওয়া হলো। এদিন রাহুল গান্ধী তারও জবাব দিয়েছেন। রাহুল বলেছেন, সবসময় তিনি ভ্রাতৃত্ববোধের কথাই বলেন। আসলে বিজেপি মূল বিষয় থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিতেই ওইসব প্রচার চালাচ্ছে। এপ্রসঙ্গে তিনি ভারত জোড়ো যাত্রার সময়কালে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন। বলেন, তখন বলে গিয়েছি যে সব সম্প্রদায় সমান। তাদের একসঙ্গেই এগিয়ে চলা দরকার। তাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ থাকা উচিত।
এরই সঙ্গে বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বানও জানিয়েছেন এদিন রাহুল গান্ধী। এই সময় তাঁর পাশে থাকার জন্য বিরোধী দলগুলিকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। এভাবেই এগিয়ে যেতে হবে।’’ শুক্রবারই অবশ্য কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিরোধীদের সমস্বর প্রতিবাদকে অভিনন্দন জানিয়ে বলা হয়েছিল, ‘আরও সুনির্দিষ্টভাবে বিরোধী ঐক্য গড়ে তুলে অগ্রসর হতে হবে। এবিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে কংগ্রেস।’
এদিকে, রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ কেড়ে নেওয়ার প্রতিবাদে দেশের সমস্ত রাজ্য এবং জেলা সদরে গান্ধী মূর্তির সামনে রবিবার ‘সত্যাগ্রহ’ কর্মসূচি পালন করবে কংগ্রেস। সকাল ১০টায় শুরু হয়ে ওই কর্মসূচি শেষ হবে বিকাল ৫টায়। রাজধানী দিল্লির রাজঘাটে গান্ধীজীর সমাধিক্ষেত্রে সত্যাগ্রহে অংশ নেবেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জ্জুন খাড়গে, প্রিয়াঙ্কা গান্ধী সহ নেতৃবৃন্দ।

 

Comments :0

Login to leave a comment