Adeno Virus West Bengal

অ্যাডিনো ভাইরাসের শিকার রাজ্যে আরেক শিশু

রাজ্য

ভয়াবহ আকার নিয়েছে অ্যাডিনো ভাইরাসের সংক্রমণ। এই ভাইরাসের হানার শিকার এখন পর্যন্ত শিশুরাই। বুধবার কলকাতায় মৃত্যু হলো আরও এক শিশুর। রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত কিশোরী, খড়গপুরের স্কুল ছাত্রী অ্যাডিনো ভাইরাসের শিকার হয়ে প্রাণ হারালো কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। বিভিন্ন সূত্রে সব মিলিয়ে গত ২ মাসে এপর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যুর খবর মিলল রাজ্যে। এই পরিস্থিতিতে আতঙ্ক ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায়, বিভিন্ন স্কুলে স্কুলে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়গপুর শহরের বাসিন্দা ঊর্জাসাথী রায়চৌধুরি (১৩) এক সপ্তাহ আগে জ্বর সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হয়। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে দ্রুত নিয়ে আসা হয় কলকাতায়। ভর্তি করা হয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে। শরীরে মেলে অ্যাডিনো ভাইরাসের উপস্থিতি। শেষ রক্ষা হয়নি। বুধবার সকালে প্রাণ হারায় অষ্টম শ্রেণির এই ছাত্রী। মৃতার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে অনেক আগে থেকেই ফুসফুস ও হৃদযন্ত্র কিছুটা কমজোরি ছিল ঊর্জাসাথীর। স্পাইনাল মাসক্যুলার অ্যাটরোপি নামে একটি সমস্যা ছিল তার শরীরে। ফলে ভাইরাসের হানার মোকাবিলা করতে পারেনি তার শরীর। হাসপাতালে ভেন্টিলেটরে রাখা হয় তাকে। শেষে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে সে। শেষে মৃত্যু ঘটে।

এই বয়সেই সঙ্গীতে অসাধারণ দক্ষতা ছিল তার। এছাড়াও লেখিকা হিসেবেও খ্যাতি লাভ করে। ‘সেমি ক্ল্যাসিক্যাল’ বিভাগে গানে ভারত সরকারের পুরস্কার অর্জন করে। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল ম্যাথেমেটিকস অলিম্পিয়াডে গোল্ড মেডেল প্রাপক হিসাবেও তার নাম আসে। ‘ক্রিয়েটিভ চাইল্ড উইথ ডিজএবিলিটিজ’ হিসাবে অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য জাতীয় পুরস্কার এবং রাজ্য সরকারের পুরস্কার তার ঝুলিতে জমা হয়। এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে এলাকায় তীব্র শোকের ছায়া নেমে এসেছে। 
স্বাস্থ্য দপ্তরে পাঠানো রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, বর্তমানের সর্দি কাশি জ্বরের উপসর্গ যা চলছে তার প্রায় ৩২ শতাংশই অ্যাডিনো ভাইরাস। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভাইরাসটি বহু পুরানো, নতুন কিছু নয়। কিন্তু মিউটেশনের ফলে তা এরকম আক্রমণাত্মক চেহারা নিয়েছে। কী কারণে হঠাৎ এই আগ্রাসী রূপ ধারণ করেছে ভাইরাসটি তা গবেষণা করে দেখছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের বক্তব্য, করোনাকালের মতোই সতর্ক হয়ে চলতে হবে সবাইকে, মানতে হবে বিধিনিষেধ।


চিকিৎসকরা বলছেন, খতিয়ে দেখলে বোঝা যাচ্ছে এই ভাইরাসে আক্রান্তরা বেশিরভাগই শিশু, কিশোর-কিশোরী। শ্বাসনালী, ফুসফুস সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু ঘটছে। শিশু হাসপাতালগুলির আইসিইউ বেশিরভাগই ইতিমধ্যেই ভর্তি যা উদ্বেগজনক। এখন স্কুলে স্কুলে পরীক্ষা চলছে। আক্রান্ত শিশুরা স্কুলে ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে। বড়রা এই ভাইরাসের আক্রমণে প্রথমে কাহিল হয়ে পড়লেও পরে কিছুটা সামলে উঠছেন। তবে একটা দীর্ঘস্থায়ী কাশি বহু মানুষের ক্ষেত্রে থেকে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রের খবর, শিশু হাসপাতাল সহ বিভিন্ন হাসপাতালে প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে পরিস্থিতির মোকাবিলায়। তবে চিকিৎসক মহলের বক্তব্য, রাজ্যে বিভিন্ন হাসপাতালগুলির পরিকাঠামোই নড়বড়ে হয়ে রয়েছে। এই অবস্থায় শুধু নির্দেশিকা দিয়ে কতটা কাজ হবে।

 

 

 

 

Comments :0

Login to leave a comment