DElHI GOVERNMENT VS CENTRAL GOVERNMENT

দিল্লির প্রশাসনিক ক্ষমতা দখলে অর্ডিন্যান্স কেন্দ্রের

জাতীয়

Delhi government central government bjp aap bengali news

দিল্লি সরকারের ক্ষমতা দখলকে নিয়ে এবারে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়ালো মোদী সরকার। ১১ মে সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে দিল্লির প্রশাসনিক ক্ষমতায় দিল্লি রাজ্য সরকারের অধিকারকে চূড়ান্ত বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। সেই রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে দিল্লির সমস্ত ধরনের প্রশাসনিক ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ দিল্লি সরকারের থাকবে। 

সপ্তাহ পার হয়নি, এই রায় মানতে পারেনি মোদী সরকার। সুপ্রিম কোর্টের সেই রায় খণ্ডন করতেই শুক্রবার অধ্যাদেশ জারি করল কেন্দ্র। একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের সেই রায় পর্যালোচনার জন্য এদিন সুপ্রিম কোর্টে পালটা মামলা দায়ের করেছে কেন্দ্র।


এদিন মোদী সরকার দিল্লি সরকার নিয়ে প্রশাসন সংক্রান্ত যে অধ্যাদেশ জারি করেছে তাতে কেন্দ্রের দিল্লি প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ স্পষ্ট। অধ্যাদেশে দিল্লির সরকারের অফিসারদের নিয়ন্ত্রণে ন্যাশনাল ক্যাপিটাল সিভিল সারভিস অথরিটি গঠন করা হয়েছে। দিল্লি সরকারে যুক্ত অফিসারদের নিয়ন্ত্রণ, বদলি, নিয়োগ ও শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকবে কেন্দ্রীয় অথরিটির। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে দিল্লি সরকার তার প্রশাসনের অফিসারদের নিয়ন্ত্রণের যে অধিকার পেয়েছিল তা এক লহমায় অধ্যাদেশ জারি করেই কেড়ে নিল মোদী সরকার। 

প্রসঙ্গত এদিন আদালত গ্রীষ্মকালীন অবকাশে চলে যাওয়ার ঘণ্টাখানেক পর জারি হয় অধ্যাদেশ। তার আগেই এদিনই সুপ্রিম কোর্টে সেই দিল্লি সরকারের প্রশাসন সংক্রান্ত রায় পর্যালোচনার আবেদন জানিয়ে মামলা দায়ের করেছে কেন্দ্র। কেন্দ্র এদিন অধ্যাদেশ জারি এবং রায় পর্যালোচনার মামলা দায়ের করার পর আদালত গ্রীষ্মকালীন অবকাশে চলে যাওয়ার এতে দ্রুত স্থগিতাদেশের আবেদন জানানোর সুযোগ থাকছে না আপ সরকারের। তবে  মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছেন অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করবে দিল্লি সরকার। কেন্দ্রের এই অধ্যাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের লড়াই বলে তিনি জানান। 


প্রসঙ্গত রাজধানী দিল্লির প্রশাসনিক ক্ষমতার দখল নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে লড়াইয়ে বড় জয় পেয়েছিল দিল্লির কেজরিওয়াল সরকার। সুপ্রিম কোর্ট গত ১১ মে তার রায়ে জানিয়ে দিয়েছে, সমস্ত ধরনের প্রশাসনিক ক্ষমতার ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে দিল্লি সরকারেরই। জমি, পুলিশ এবং জন নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া বাকি সমস্ত প্রশাসনিক কাজে শেষ কথা বলবে দিল্লি সরকার। 

একই সঙ্গে লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে দিল্লি সরকারের সমস্ত সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে এই রায় দিয়েছে। বস্তুত, বেশ কয়েকটি গুরুতর বিষয় নিয়ে কেন্দ্র-দিল্লি সরকারের ৮ বছরের দ্বৈরথের নিষ্পত্তিও ঘটে সেই রায়ে। 


কিন্তু শীর্ষ আদালতের রায়কে অস্বীকার করতে আইনই পালটে দিয়েছে মোদী সরকার। সুপ্রিম কোর্টের রায়কে অকেজো করে দিতে দ্রুত অধ্যাদেশ জারি হয়ে যাবে। এই অধ্যাদেশে যে ন্যাশনাল ক্যাপিটাল অব সিভিল সারভিস অথরিটি গড়ে তোলা হচ্ছে তারা দিল্লি সরকারের অফিসারদের বদলি ও নিয়োগের দায়িত্বে থাকবে। এই দায়িত্ব রাজ্য সরকারের থাকবে না।

অফিসারদের শৃঙ্খলা রক্ষার চূড়ান্ত দায়িত্বে থাকবে অথরিটি। এই অথরিটির সিদ্ধান্ত দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নরের অনুমোদন সাপেক্ষে কার্যকর হবে। যে গভর্নরকে নিয়োগ করে কেন্দ্রীয় সরকার। এই অথরিটি কমিটিতে চেয়ারম্যান হিসাবে থাকবেন দিল্লি মুখ্যমন্ত্রী। অন্য সদস্যদের মধ্যে থাকবেন মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব।

এদিকে অথরিটিতে কোনও মতভেদ হলে তাতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন লেফটেন্যান্ট গভর্নর। নতুন অথরিটির মাধ্যমে দিল্লি প্রশাসনের অফিসারদের নিয়োগ, বদলি, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা সব কিছুর ক্ষমতা থাকবে পরোক্ষভাবে কেন্দ্রের অধীনে। এদিকে দিল্লি সরকারের কোনও বোর্ড, কমিশন, সাংবিধানিক সংস্থা গঠনের অধিকার থাকবে রাষ্ট্রপতির। এদিনের অধ্যাদেশে কার্যত প্রশাসনিক ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক ক্ষমতা পুরোপুরি অকেজো করে দেওয়া হলো।


এদিকে দিল্লি সরকারের প্রশাসনিক দায়িত্বের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে পর্যালোচনা করার জন্য ‌কেন্দ্রের পক্ষে ফের যে আবেদন জানানো হয়েছে তাতে মূলত অধ্যাদেশ জারির পক্ষে যুক্তি রাখা হয়েছে। যে যুক্তি অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের গত রায়ে খারিজ হয়ে গেছে।

  তবু একই যুক্তি ফের উঠে এসেছে পর্যালোচনার আবেদনে। তাতে বলা হয়েছে, দিল্লি  দেশের রাজধানী, তাই সেই  রাজধানীর প্রশাসনিক সমস্যা দেশের সমস্যা হতে পারে। সুপ্রিম কোর্ট তার রায়ে এই সমস্যা বিবেচনা করেনি। রায় পর্যালোচনায় তা বিবেচনার  আবেদন জানানো হয়েছে। 


এদিকে মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল এদিন অধ্যাদেশের  বিরোধিতা করে বলেন, মোদী সরকার এই অধ্যাদেশ জারি করে আসলে সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষণা করেছে। এটা একটা বিপজ্জনক প্রবণতা। আমরা এনিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করব। 

তিনি বলেন, মোদী সরকার এদিন সুপ্রিম কোর্ট গ্রীষ্মকালীন অবকাশে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই এই অধ্যাদেশ ঘোষণা করে দেওয়া হলো। কেড়ে নেওয়া হলো রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক ক্ষমতা। তিনি বলেন, এই অধ্যাদেশ হলো দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর আক্রমণ।  

Comments :0

Login to leave a comment