বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বাজেট ঘিরে এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো।
পলিট ব্যুরো বলেছে, ভারতীয় অর্থনীতির স্বাস্থ্য নিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বড়াই করলেও দেশের অর্থনীতির কঠিন সঙ্কট ফুটে উঠেছে অন্তর্বর্তী বাজেটে। দেশের শ্রমজীবী জনতার অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং মোদীর ’উন্নয়নের’ ধারণা যে ধনীকে আরও ধনী, গরিবকে আরও গরিব করা, তা স্পষ্ট হয়েছে।
পলিট ব্যুরো বলেছে, সংশোধিত বাজেট, অর্থাৎ গতবার বাজেট পেশের পর চলতি অর্থবর্ষে আসলে কতটা খরচ হয়েছে, সেই হিসেবেই আসল ছবি দেখাচ্ছে।এই বাজেটে ফুটে উঠেছে, ২০২৩-২৪ বাজেটে বরাদ্দ হলেও জনকল্যাণমূলক খাতে খরচের প্রকৃত ছবি।
২০২৪-২৫’র পূর্ণাঙ্গ বাজেট লোকসভা নির্বাচনের পরে নতুন সরকার পেশ করবে। পলিট ব্যুরো দেখিয়েছে, ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে চলতি খাতে আয় গতবার বাজেট অনুমানের তুলনায় বেড়েছে ১৩.৩ শতাংশ। কিন্তু কোষাগারীয় ঘাটতি কমানোর নামে কেন্দ্রীয় সরকার জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলিতে খরচ কমিয়েছে ব্যাপক হারে। এই খাতে খরচ বেড়েছে মাত্র ৭ শতাংশ, যা টাকার চলতি মূল্যে জিডিপি’র অঙ্ক বৃদ্ধির হার, ৮.৯ শতাংশের চেয়েও কম।
পলিট ব্যুরো বলেছে, খরচে এই কাটছাঁটের জেরে কমেছে জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন খাতে ব্যয়। কমেছে মূলধনী ব্যয়ও। অর্থনীতির ভিতকে আঘাত করছে ব্যায়ের এই সঙ্কোচন।
পলিটব্যুরো উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছে, কৃষি ও কৃষি সম্পর্কিত ক্ষেত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সমাজকল্যাণ, সেচ ব্যবস্থা, তপসিলি জাতি এবং আদিবাসী উন্নয়নের জন্য নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্পে গতবারের বাজেট প্রস্তাবের থেকে কম টাকা খরচ করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা এবং প্রধানমন্ত্রী পুষ্টি প্রকল্পের মতো প্রকল্প। চলতি অর্থবর্ষে খরচ কেবল গতবারের বরাদ্দের চেয়ে কম তা নয়, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের প্রকৃত খরচের থেকেও কম।
পলিট ব্যুরো মনে করিয়েছে, মহিলা এবং শিশুদের কল্যাণমূলক প্রকল্পের বরাদ্দও ব্যাপক ভাবে কাটছাঁট করা হয়েছে। শস্য এবং সারের ভর্তুকি, একশো দিনের কাজ এবং শহুরে উন্নয়নের বরাদ্দ ২০২২-২৩ আর্থিক বছরের খরচের তুলনায় কমানো হয়েছে।
পলিটব্যুরো তথ্য দিয়ে দেখিয়েছে, ২০২২-২৩ আর্থিক বছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে খাদ্যে ভর্তুকি কমানো হয়েছে ৬০,৪৭০ কোটি টাকা। একই সময়কালে সারে ভর্তুকি কমানো হয়েছে ৬২,৪৪৫ কোটি টাকা। একশো দিনের কাজের প্রকৃত বরাদ্দ কমেছে ৪৮০৬ কোটি টাকা। গ্রামোন্নয়নে এবং রাজ্যগুলিকে পাঠানো তহবিলে কার্যত সামান্য বৃদ্ধিও ঘটেনি। এর অর্থ, বাস্তবিক ক্ষেত্রে বরাদ্দ কমেছে।
পলিটব্যুরো বলছে, কেন্দ্রীয় খরচ কমা এবং রাজস্ব বৃদ্ধির কাহিনীর দিয়ে অত্যন্ত দুর্বল আর্থিক বৃদ্ধির ছবিকে আড়াল করার চেষ্টা করেছে কেন্দ্র। কেন্দ্র দাবি করছে ২০২৩-২৪ সালে প্রকৃত বৃদ্ধির হার ছিল ৭.৩ শতাংশ। এই দাবি অবাস্তব। একইরকম অবাস্তব দাবি করা হচ্ছে মূল্যবৃদ্ধির হার ১.৬ শতাংশ ধরে। এই দাবি খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির সূচক বা ক্রেতা মূল্য সূচকের সঙ্গে খাপ খায় না। গত আর্থিক বছরে এই সূচক অনুযায়ী মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৬ শতাংশ, আর খাদ্যে মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ১০ শতাংশের আশেপাশে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রেপো রেট ৬.৫ শতাংশে বেধে রেখেছিল মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে।
পলিট ব্যুরো বলেছে, দেশের আর্থিক বিকাশের গতি শ্লথ হলেও সরকার বৃহৎ পুঁজিপতি এবং বড়লোকদের সুবিধা করে দিতে কেন্দ্র কোনও কার্পণ্য করেনি। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয় আয়ের বড় অংশ এই ভান্ডারে ঢুকেছে। কর্পোরেট কর এবং আয়কর থেকে রাজস্ব বৃদ্ধি হয়েছে। এর কারণ কিন্তু করের হার বৃদ্ধি নয়। বরং বিত্তবান অংশের আয় আরও বাড়ার ফলে তা ঘটেছে। এটিকে অর্থনীতির ভাষায় ইংরেজি ‘কে’ অক্ষরের সঙ্গে তুলনা করা হয়। আর্থিক স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের এই প্রক্রিয়ায় একাংশের আয় লাফিয়ে বাড়তে থাকে, আরেক অংশের আয় কমে যায়।
এই উন্নয়নের মডেলে শ্রমজীবী জনতাকে সঙ্কটের মুখে ফেলে বাধ্য করা হয় কম বেতনে বেশি কাজ করতে।
বিবৃতির পরিশেষে পলিটব্যুরো বলেছে, এই বাজেট থেকে মোদী সরকারের প্রচারের অন্তঃসারশূন্যতা স্পষ্ট হয়েছে। ‘আসল সামাজিক ন্যায়’ কিংবা সাধারণ মানুষকে উন্নয়নে সামিল করার যে দাবিগুলি কেন্দ্রের তরফে করা হয়, সেগুলি যে কতটা ভ্রান্ত তার প্রমাণ ওই বাজেট। এই বাজেটে দেখানো উন্নয়নের মডেলের ফলে দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ জীবিকা হারাবেন, এবং মুনাফার পাহাড়ে চড়বে মুষ্টিমেয় অংশ।
Comments :0