MD SALIM

বামফ্রন্ট এলে কল্যাণ প্রকল্প আরও বাড়বে

রাজ্য

CPIM west bengal panchayat election TMC BJP

জনকল্যাণের কোনও প্রকল্প বামপন্থীরা বন্ধ করবে না, বরং আরও নতুন প্রকল্প আনবে এবং দুর্নীতিমুক্ত ব্যবস্থায় মানুষকে সুবিধা দিতে সক্রিয় হবে। সোমবার রানিনগরের শেখপাড়ায় সিপিআই(এম)’র জনসভায় একথা ঘোষণা করেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। 

তিনি বলেছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমরা জয়ী হলে কোনও জনকল্যাণ প্রকল্প বন্ধ হবে না। সরকারি প্রকল্পের টাকা জনগণের টাকা, তৃণমূল দুর্নীতি করে জনকল্যাণের টাকা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করছে, কাটমানি খাচ্ছে। বামপন্থীরা জিতলে গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে নবান্ন পর্যন্ত দুর্নীতি বন্ধ হবে, মানুষের প্রাপ্য আরও বাড়বে। বামপন্থীরা ক্ষমতায় এলে আরও অনেক নতুন প্রকল্প আনা হবে জনকল্যাণে।


সেলিম বলেছেন, রাজ্যে কাজ না পেয়ে অন্যত্র যাচ্ছে গ্রামের ছেলেরা। হেনস্তার শিকার হয়েছেন লকডাউনের সময়। কেন্দ্রের সরকার, রাজ্যের সরকার কেউ পাশে ছিল না, পাশে দাঁড়িয়েছে বামপন্থীরা। গ্রাম বাংলার মানুষ লড়াই করে জমির অধিকার পেয়েছিলেন, তৃণমূল, বিজেপি সেই জমি দখলের চেষ্টা করছে। আমরা বামপন্থীরা কৃষকদের জমি থেকে ফসল কেনার ব্যবস্থা করবো, ফসলের ন্যায্য দামের জন্য লড়াই করবো। বামপন্থীরা রাজ্যের মানুষের মেধা, শ্রম দিয়ে রাজ্যকে গড়ে তুলতে চায়। এরাজ্যের ছেলেমেয়েদের কাজের জন্য অন্য রাজ্যে গিয়ে হেনস্তার শিকার হতে হবে কেন? 


তৃণমূলের সন্ত্রাসের মোকাবিলা করে গণতন্ত্রের জয় চাইছেন মুর্শিদাবাদের রানিনগর ২ ব্লকের মানুষ। সন্ত্রাস চালাতে মরিয়া তৃণমূল, তারা বোমাবাজি করেছে শুক্রবার রাতেও। গোধনপাড়া স্কুলপাড়া এলাকায় সন্ধ্যা থেকেই বোমাবাজি চালায় তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। 

সন্ত্রাস চলেছে নজরানা, ঝাউবারিয়া, বৃন্দাবনপুরে। তবে এবার আর তাতে কাজ হচ্ছে না। একতরফা চোখ রাঙানি পরোয়া না করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে রাস্তায় দাঁড়াচ্ছেন গ্রামের মানুষ। হচ্ছে প্রতিরোধ। নির্বাচনের মুখে তৃণমূল লাগাতার হামলা চালাচ্ছে সিপিআই(এম) এবং কংগ্রেস কর্মীদের ওপর। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে হামলা চলছে, তৃণমূলের মিথ্যা মামলায় জেলবন্দি হয়ে রয়েছেন সিপিআই(এম) কর্মী তারিক আজিজ, আকবর আলি, নুরুল ইসলাম, স্বপন মণ্ডল। 

হামলায় এখনও জখম প্রবীণ সিপিআই(এম) কর্মী নবকুমার মণ্ডল। আঘাত নিয়েই বহু মানুষকে সঙ্গে নিয়ে শনিবার শেখপাড়ায় সমাবেশে এলেন নুরুল হোদা, আব্দুল বাড়ি, সমর মণ্ডল, নেকসার আলিরা। 
 

ভরা মাঠেই সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, যাদের আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে তাদের সব হিসাব হবে। দুর্নীতিগ্রস্তদের জব্দ করতে এককাট্টা হয়েছেন মানুষ। তাঁরাই রাজনীতির চাকা ঘোরাবেন, লড়াই হবে পঞ্চায়েতে। আঁধার কাটিয়ে আলো ফুটছে। গ্রাম জাগছে, তাই ভয় পাচ্ছে চোরেরা।
সেলিম বলেছেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশনার ভেবেছিলেন কেউ প্রস্তুত হওয়ার আগেই হঠাৎ ভোট ঘোষণা করে তৃণমূলকে বিজয়ীর সার্টিফিকেট দিয়ে দেবেন। কিন্তু মানুষ প্রস্তুত ছিল, মস্তানি উপেক্ষা করে তাঁরা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। মানুষের এই স্পর্ধাকে অভিনন্দন। মানুষ চোর জোচ্চোরদের সরিয়ে পঞ্চায়েত ফেরত চাইছে। মানুষের মনোভাবকে মর্যাদা দিয়ে আমরা বামফ্রন্টকে ঐক্যবদ্ধ করে, কংগ্রেস ও অন্য কয়েকটি সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে সমঝোতা করেছি। সর্বত্র না হলেও বড় সংখ্যক আসনে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস সমঝোতায় এসেছে। এখনও কথাবার্তা চলছে যাতে তৃণমূল বিজেপি’কে পরাস্ত করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করা যায়। 

তিনি বলেন, এর আগে ফরাক্কায় বোমা ফেটে শিশুরা আহত হয়েছে, আজও বেলডাঙায় বোমা বাঁধতে গিয়ে প্রাণহানি হয়েছে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু অবাধ করতে হলে কমিশন, পুলিশ প্রশাসনকে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। রাজ্য পুলিশের কাছে আমাদের দাবি বিশেষ অভিযান চালিয়ে সব মজুত বোমা, বোমার মশলা, বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। বোমা কারখানা বন্ধ করতে হবে। তার বদলে এখনও কিছু থানায় মিথ্যা মামলায় জড়ানো হচ্ছে বাম কংগ্রেস কর্মীদের। মানুষের মেজাজ দেখে এখনই পুলিশ শিক্ষা না নিলে বিপদে পড়বে। গুন্ডা মস্তান বাহিনীকে ভোটের আগে উজ্জীবিত করতে তৃণমূল চেষ্টা করেছিল ভেঁপো যাত্রার। তাতে লাভ হয়নি, লোকে চোর চোর বলে চিৎকার করছে। অপরাধীদের না ধরে, পুলিশ যতো মিথ্যা মামলা করেছে, সব পুলিশ অফিসারকে আমরা হাইকোর্টে টেনে নিয়ে যাব। কেউ পার পাবে না। তৃণমূল, দুষ্কৃতী এবং পুলিশের একাংশের আঁতাত, এটা ভাঙতে হবে। মস্তানি, গুন্ডামি শেষ কথা বলবে না। চোপড়ায় মনসুর আলমকে ওরা খুন করেছে। এর জবাব দেওয়ার শপথ নিচ্ছে মানুষ।


বীরভূমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূলের জয় সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, একটা কেষ্ট জেলে গেলেও বীরভূমে যে সিস্টেম চলছে সেটাই চলবে বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মস্তানি করে অনেক গ্রামে ওরা মনোনয়ন জমা দিতে দেয়নি। কেন? ভয়ে, ভোট হলে হারবে বলে। ঐ পঞ্চায়েতের কোনও বৈধতাই থাকবে না। বীরভূমের অনেক জায়গায় তৃণমূল এবং বিজেপি যৌথভাবে মনোনয়ন দিয়েছে। এক জায়গায় বামপন্থী প্রার্থীকে একসঙ্গে প্রত্যাহার করিয়ে বিজেপি প্রার্থীকে জয়ী করিয়েছে এবং তারপরে তৃণমূলে যোগদান করিয়েছে। 

এদিনের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম)’র জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা, পার্টি নেতা  জুলফিকার আলি ভুট্টো, বিশাখা মণ্ডল, সভাপতিত্ব করেন ইনসাফ আলি। উপস্থিত ছিলেন নৃপেন চৌধুরি, বদরুদ্দোজা খান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। মিথ্যা মামলার কারণে এলাকার বাইরে রয়েছেন পার্টি নেতা জামাল হোসেন, তিনি ফোনের মাধ্যমে সমাবেশে নিজের কথা বলেছেন। জামির মোল্লা বলেন, প্রতিরোধের মেজাজেই হবে ভোট। ঐক্যবদ্ধভাবেই তৃণমূল, বিজেপি-কে হারাবেন গ্রামের মানুষ। 

এদিন বিকেলে রানিনগরে কংগ্রেস প্রার্থীর বাড়ি ভাঙচুর করে তৃণমূল নেতারা। রানিনগর ২ নম্বর ব্লক তৃণমূল সভাপতি শাহ আলম সরকারের নেতৃত্বে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা এই ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ। প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ করেন কংগ্রেস ও সিপিআই(এম) কর্মীরা।

Comments :0

Login to leave a comment