সাত মাস পেরিয়েছে। গোটা দেশের মানুষ যে নৃশংস ঘটনার পরে রাস্তায় নেমেছিল, যে ঘটনায় দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছিল সেই আর জি করের ঘটনায় নিহত পড়ুয়া চিকিৎসকের বাবা-মা মেয়ের ডেথ সার্টিফিকেট হাতে পেল বুধবার। প্রশাসনের একাধিক দরজায় উদভ্রান্তের মত ঘুরেই একমাত্র মেয়ের ডেথ সার্টিফিকেট যোগাড় করতে পারলেন তাঁরা। এদিন সন্ধ্যায় সেই ডেথ সার্টিফিকেট তাদের হাতে তুলে দেন রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম। স্বাস্থ্য সচিবের সাথে ছিলেন আরজিকর মেডিকেল কলেজের এমএস ভিপি অধ্যাপক সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী। পাশাপাশি ভবিষ্যতে অন্য কোন সার্টিফিকেট দরকার হলেও তাও ওই কলেজের এমএসভিপি'এর থেকে পাওয়া যাবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন নিগম।
নিহত পড়ুয়া চিকিৎসকের বাবা জানান ‘‘আমার মেয়ের আসল ডেথ সার্টিফিকেটের কপিটা আজকে দিয়ে গেল। তিনি এটাও বলে গেলেন পরবর্তী কালে অন্য কপি দরকার হলে আর জি কর মেডিকেল কলেজের এমএসভিপি দিয়ে দেবে। আমাদের কাছে সার্টিফিকেট এর লিংকও এসেছে, সেখান থেকেও আমরা প্রিন্ট আউট বের করে নিতে পারব।’’
যদিও বাবার দাবি ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য কোনরকম নথি তারা জমা দেননি। তার পরেও এদিন বিকেলে হঠাৎ করে অনলাইনে সেই ডেথ সার্টিফিকেট আপলোড করা হয় এবং এমএসভিপি ফোন করে সেটি জানিয়ে দেন বাবা-মাকে। স্বাভাবিকভাবেই তারা কিছুটা বিস্মিত হন। তিনি এই জানান ‘‘গত বছরের সেপটেম্বরে ফোনে চেষ্টা করছিলাম, চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি আমরা লিখিত দিই। এরপর থেকেই গত কয়েক মাস ধরে কখনও আরজিকর, কখনও কলকাতা পৌরসভার বোরো অফিস, কখনও স্বাস্থ্য ভবন দৌড়াদৌড়ি করছিলাম। বাবা হয়ে মেয়ের ডেথ সার্টিফিকেট আমার জন্য ঘোরাটা কতটা কষ্টকর সেটা আমরাই জানি।
গত ১৭ মার্চ বাবা-মায়ের আবেদনের মান্যতা দিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে পরিবারের তরফে আর জি করের ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় যে মামলা দায়ের করা হয়েছিল তার শুনানি এবার কলকাতা হাইকোর্টেই হবে। কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চে সেই শুনানি হবে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেই খানিকটা স্বস্তি মিলেছে বাবা-মায়ের। তবুও ন্যায় বিচারের লড়াই এখনও কঠিন, অনেকটা পথ হাঁটতে হবে বলেই তাঁরা মনে করছেন। সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়ে এর আগে প্রকাশ্যেই প্রশ্ন তুলেছিলেন তাঁরা। সেদিন দেশের শীর্ষ আদালত চত্বরে দাঁড়িয়েই নিহত পড়ুয়া চিকিৎসকের বাবা কান্না ভেজা গলায় বলেন- ‘আমরা কেমন জায়গায় বাস করি! সাত মাস হয়ে গেলো এখনও মেয়ের মৃত্যুর শংসাপত্র পাইনি। এদিন ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়ার পর নিহত পড়ুয়া চিকিৎসকের বাবা বললেন, বাবা হয়ে মেয়ের মৃত্যুর শংসাপত্রের জন্য দরজায় দরজায় ঘুরছি। একবার বরো অফিস, একবার স্বাস্থ্যভবন, একবার আর জি কর হাসপাতাল। ঘুরেই বেড়াচ্ছি। প্রথমে মৌখিক আবেদন করেছিলাম। পরে লিখিতভাবে আবেদন করি। কিন্তু মেয়ের মৃত্যুর শংসাপত্র পাইনি। এদিন মৃত্যুর শংসাপত্র হাতে পাওযায় আমি সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সার্টিফিকেট হাতে পাওয়ার পর সেটা করেছি যা চেয়েছিলাম সেটাই ডেথ সার্টিফিকেটে উল্লেখ আছে। যদিও এত দেরিতে ডেথ সার্টিফিকেট পাওয়ার কারণ জানতে চাইলে স্বাস্থ্য সচিব সে ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে চাননি।’’
RG Kar Case
সাতমাস পর মিলল নিহত পড়ুয়া চিকিৎসকের মৃত্যুর শংসাপত্র

×
Comments :0