ELDERLY THRASHED BEEF SUSPICION

সেই ঘৃণা, গোমাংস রয়েছে সন্দেহে মার বৃদ্ধ সহযাত্রীকে

জাতীয়

গোমাংস সঙ্গে রয়েছে। এই সন্দেহে এক যাত্রীকে চলন্ত ট্রেনের মধ্যে মারধর ও অপদস্থ করার অভিযোগে উঠল তাঁরই কয়েকজন সহযাত্রীর বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে মহারাষ্ট্রের ধুলে এক্সপ্রেসে। চলন্ত ট্রেনে ওই যাত্রীকে প্রায় ১২-১৫ জন মিলে অপদস্থ করে। ওই কামরায় উপস্থিত বাকি যাত্রীরাও তার প্রতিবাদ করেনি বলে জানা গিয়েছে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে আশরাফ মুনিয়ার নামক ওই ব্যক্তির হাতে দুটি প্লাস্টিকের বাক্স রয়েছে। তিনি জলগাওঁয়ের বাসিন্দা। যাচ্ছিলেন মালেগাঁওয়ে মেয়ের বাড়ি। বেশ কয়েকজন সহযাত্রী তাঁকে ঘিরে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করছে যে বাক্সের ভিতরে কিসের মাংস রয়েছে? তা নিয়ে তিনি কোথায় যাবেন? তিনি কোথা থেকে আসছেন? এই মাংস কতজন খাবে? বয়স্ক ব্যক্তি খুবই ভীত হয়ে গিয়ে উত্তর দিচ্ছেন যে তিনি তাঁর মেয়ের পরিবারের জন্য এই মাংস নিয়ে যাচ্ছেন। ভিডিও-তে তাঁকে বলতে শোনা যাচ্ছে যে বাক্সের ভিতরে মহিষের মাংস আছে। 
গোটা ঘটনায় তীব্র ধিক্কারে সোচ্চার হয়েছে বিভিন্ন অংশ। বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবারের বিভাজনের রাজনীতি কিভাবে সমাজে বিভাজন ছড়াচ্ছে তা নিয়ে সরব হয়েছেন তাঁরা। সমাজে ঘৃণা ছড়ানোর এই রাজনীতির প্রতিবাদও শোনা গিয়েছে। 
মুনিয়ার জলগাঁও জেলার বাসিন্দা। তিনি ধুলে এক্সপ্রেসে করে মালেগাঁওতে তাঁর মেয়ের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। ভিডিওটিতে আরও দেখা যাচ্ছে ওই জটলা থেকেই একজন হুমকি দিচ্ছে যে নিজের চোখে না দেখে ছাড়ব না। আরেকজনকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘এটা আমাদের শ্রাবণ মাস।’ 
ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রেল পুলিশের তরফে একটি এফআইআর করা হয়। কমিশনার জানান, রেলওয়ে পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করছে। যারা মেরেছে তাদের খোঁজ চলছে। ইতিমধ্যেই দু’জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা ধুলের বাসিন্দা। ভিডিওটি ছড়ানোর পর রেল পুলিশ ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিযোগ দায়ের করে। আহত ব্যক্তি অভিযোগ করার জন্য প্রাথমিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন না বলে জানাচ্ছে পুলিশ।  
শারদ পাওয়ার নেতৃত্বাধীন এনসিপি’র নেতা জিতেন্দ্র আওহাদ এই ঘটনা তীব্র সমালোচনা করেন এবং বলেন, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিপর্যস্ত। কোনো বয়স্ক ব্যক্তি গোমাংস বহন করছেন, কেবল সেই সন্দেহের বশে একদল যুবক মারধর করবে, এটা চলতে পারে না। এটা মহারাষ্ট্রের সংস্কৃতি নয়। তিনি আরো বলেন, মহারাষ্ট্রের ৮০ শতাংশ মানুষ আমিষভোজী, এটাই আমাদের মহারাষ্ট্র। উপকূলীয় এলাকার ৯৫ শতাংশ মানুষ আমিষভোজী। আমরা সব ধর্মকে সম্মান করি। আমরা জৈনদেরও সম্মান করি, কিন্তু সন্দেহের বশে মানুষকে মারধর করা হলো। এই ঘৃণা কিসের?
কিছুদিন আগেই উত্তর প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডে কাঁওয়ার যাত্রার পথে সব দোকানের মালিক এবং কর্মচারীদের পরিচয় টাঙিয়ে রাখার নির্দেশ কার্যত জারি করে দু’রাজ্যের বিজেপি সরকার। উদ্দেশ্য, যাত্রীরা মুসলিম ফল ব্যবসায়ী বা দোকান ব্যবসায়ীদের থেকে যাতে কেনাকাটা না করেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সেই বিজ্ঞপ্তি স্থগিত হয়েছে। কিন্তু বারবারই সরকারি স্তর থেকে বিভাজনের নানা প্ররোচনায় ঘৃণা ছড়াচ্ছে সমাজে। এর আগেও ট্রেনে এমন হেনস্তার শিকার হয়েছে সংখ্যালঘু অংশের মানুষ। একটি ঘটনায় গুলি চালিয়ে আততায়ীকে সরাসরি মুসলিম বিদ্বেষ উগরে দিতে শোনা গিয়েছিল।

Comments :0

Login to leave a comment