Editorial Madhyamik

মাধ্যমিক পরীক্ষা

সম্পাদকীয় বিভাগ

৬লক্ষ ৯৮হাজার পরীক্ষার্থী নিয়ে শুরু হয়েছে এরাজ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষা। গত বছর যেখানে ১০লক্ষ ৯৮হাজার পরীক্ষার্থী মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিল এবার সেখানে উদ্বেগজনকভাবে কমে গেছে ৪লক্ষ। রাজ্যে জনসংখ্যা কমছে না। প্রতি বছরই কিছুটা বাড়ে। অর্থাৎ প্রতি বছর নবাগত শিশুর সংখ্যা আগের বছরের থেকে বেশি হয়। স্বাভাবিকভাবেই প্রতিবছর প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির সংখ্যা বাড়া উচিত। তাছাড়া সকল শিশুকে বিদ্যালয়ে আঙিনায় আনার সরকারি উদ্যোগ যদি সাফল্যের পথে এগোয় তাহলে বিদ্যালয়ের বাইরে থাকা শিশুর সংখ্যা প্রতিবছরই কমে যাবার কথা। অর্থাৎ প্রথম শ্রেণিতে প্রতি বছরই আগের বছরের তুলনায় বেশি ছাত্র ভর্তি হবে।
প্রথম শ্রেণিতে যারা ভর্তি হয় তারা সকলে প্রাথমিক মাধ্যমিক পেরিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসে না। মাঝখানে দশ বছরে ধাপে ধাপে একটা বড় অংশ লেখাপড়া ছেড়ে দেয় অর্থাৎ ড্রপ আউট হয়। সরকার যদি আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ভালো কাজ করে তাহলে ড্রপ আউট কমে যায়। আর ড্রপ আউট যদি না কমে তাহলে বুঝতে হবে সরকার ব্যর্থ। সব শিশুকে বিদ্যালয়ে আনা এবং শেষ পর্যন্ত রেখে দেওয়া সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে. যদি তা না হয় তবে বুঝতে হবে সরকার দায়িত্বপালন করছে না। পরিসংখ্যান ঘাটলে দেখা যাবে গত তিন চার দশক ধরে এরাজ্যে ধারাবাহিকভাবে প্রাথমিকে ছাত্র ভর্তি বেড়েছে এবং মাঝপথে ড্রপ আউট কমেছে। ফলত প্রতি বছরই মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থী বেড়েছে। সত্তরের দশকের শেষে বা আশির দশকের গোড়ায় প্রতি বছর চার পাঁচ লক্ষ ছেলে মেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসত। তিন দশক পেরিয়ে সেটা বাড়তে বাড়তে দশ বারো লক্ষ হয়। পরবর্তীকালে বাড়ার গতি কমেছে বা থমকে গেছে। এখন দেখা যাচ্ছে কমে যাচ্ছে। এবছর সেটা কমেছে উদ্বেগজনকভাবে।
সরকারের হয়ে সাফাই গাইতে কেউ কেউ কোভিড মহামারীকেই দায়ী করে যুক্তি সাজিয়েছেন। মহামারীর দু’বছরে যারা নবম ও দশম শ্রেণিতে পড়ত তারাই এবার মাধ্যমিক দিচ্ছে। মহামারীর জেরে পড়াশুনা করতে পারেনি বলেই নাকি প্রায় অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দিচ্ছে না। এই যুক্তি যদি মেনে নিতে হয় তাহ‍‌লে তো এই সিদ্ধান্তে আসতে হবে কোভিড কা‍‌লে তৃণমূল সরকার চরম অপদার্থতার পরিচয় দিয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের মোবাইল ফোন, ট্যাব বিলি করে অনলাইনের পড়াশোনার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করেছে বলে এতদিন সরকার যা দাবি করে আসছিল তার সবটাই ভাঁওতা। ‍‌ফোন-ট্যাবের নামে টাকা লুট হয়েছে। আর অনলাইনে কার্যত কোন পড়াশোনাই হয়নি। প্রথমত রাজ্যে বেশির ভাগ জায়গায় অনলাইন পড়াশোনার উপযোগী টেলিকম নেট ওয়ার্ক নেই। তেমনি বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীর সেই নেটওয়ার্ক ব্যবহারের আর্থিক সামর্থ নেই। সরকার শুধু ধাপ্পাই দিয়ে গেছে।
যদি কোভিড মহামারীই কারণ হতো তাহলে সারা দেশে তার কম বেশি একই রকম প্রভাব পড়ত। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে দেশের বেশিরভাগ রাজ্যের এবার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে অথবা অপরিবর্তিত আছে। যেখানে কমেছে সেটা সামান্য। ঝাড়খণ্ড, বিহার, কেরালার মত রাজ্যে বিরাট সংখ্যায় পরীক্ষার্থী বেড়েছে। তাহলে পশ্চিমবঙ্গে ৪০শতাংশ কমে গেল কেন? সরকারের কাছে পিঠ বাঁচাবার কোনো যুক্তি নেই।
বাস্তবে এরাজ্যে শিক্ষা ছাগলের তিন নম্বর ছানার মত অনাদরে থাকে। সবচেয়ে অগ্রাধিকারে থাকে শিক্ষায় দুর্নীতি, ব্যবসা, বেপরোয় টাকা তোলা। তৃণমূল জমানায় শিক্ষার সর্বত্র ধ্বংসের অভিযান চলছে। শিক্ষার নামে চুরি, দুর্নীতি, ব্যবসা, লুটই প্রধান লক্ষ্য। তাই কোভিডকালে পঠন পাঠনের ধারাবাহিকতা রাখতে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। যা হয়েছে তা মানুষের চোখে ধুলো দিয়ে প্রচার। তারই পরিণতি চার লক্ষ পরীক্ষার্থী কমে যায়।

Comments :0

Login to leave a comment