Ram Mandir

অপবিজ্ঞানের বিজয় রথ থামাতেই হবে

জাতীয় রাজ্য

অর্ধেন্দু সেন

অযোধ্যায় রাম মন্দিরে বিগ্রহের প্রাণপ্রতিষ্ঠা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু অসমাপ্ত মন্দিরে প্রাণ প্রতিষ্ঠা কি শাস্ত্রসম্মত? দেখা যাচ্ছে, এই প্রশ্নে জগৎগুরুদের সঙ্গে ‘বিশ্বগুরু’র মতের অমিল আছে। চারজন শঙ্করাচার্য বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন তাঁরা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন না। তাহলে কি অনুষ্ঠান পিছিয়ে যাবে? শাস্ত্রে যাই থাকুক, পুলিশ আছে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। তাই ধরে নেওয়া যায় অনুষ্ঠান হবে। কেউ যদি থানায় গিয়ে বলে, জগৎগুরুদের অপমানে তার রিলিজিয়াস সেন্টিমেন্ট আহত হয়েছে? দারোগাবাবু বলবেন, প্রমাণ দেখান। বুঝব কী করে সত্যিই আহত হয়েছে কিনা?
নতুন সংসদ ভবনের মতো মন্দির নির্মাণও কেন দ্রুত শেষ করা গেল না? জানাই ছিল যে নির্বাচনের আগে করা দরকার এই অনুষ্ঠান। মডেল কোড চালু হবার আগেই। তাহলে মহামহিম শঙ্করচার্যদের আপত্তি হতো না। আগে থেকেই কি জানা ছিল যে ভগবান পিএম মোদীকেই বেছে নেবেন ১৪০ কোটি ভারতীয়ের হয়ে মন্দিরে প্রাণপ্রতিষ্ঠার জন্য? নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনে দেখেছিলাম, ভগবান ঠিক করলেন রাষ্ট্রপতি সেখানে থাকবেন না। নির্বাচনেও কি তিনি মোদীকেই বেছে নেবেন ১৪০ কোটি ভারতীয়ের নেতা হিসাবে? সবই তাঁর ইচ্ছা। 
বিজেপি’র তরফে কোনও নতুন কথা বলা হচ্ছে না। তাঁরা বলছে, এই মন্দির হলো হিন্দুদের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। ৭০০বছর মুসলমান শাসকের গোলামি। তারপর দু’শো বছর ইংরেজ শাসন। তারপর নেহরু। এতদিনে হিন্দুরা এই অপশাসনের প্রভাব কাটিয়ে উঠে নিজেদের ভাগ্য নিজের হাতে নিল। অতি পুরাতন ভাব, নব আবিষ্কার। মনে হয় যেন কঙ্গনা রানাউতের মুখেও শুনেছি এ ধরনের কথা। ভুল বললাম। কিছু নতুন কথাও শুনছি বৈকি। করসেবকরাও তো এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিল। কিন্তু সে ছিল শক্তির এক অসভ্য প্রদর্শন। এই মন্দির হবে এক সভ্য-ভব্য হাইটেক ব্যাপার। টেকনোলজি হলো হিন্দুদের সঙ্গে ভবিষ্যতের যোগসূত্র। কিন্তু মন্দির হাইটেক হবে কীভাবে? নিশ্চয়ই সুইচ টিপলে আলো জ্বলবে। জল পড়বে ঝরনা থেকে। 
বিরোধী দলগুলি কী বলছে? কমিউনিস্ট পার্টি অনেক আগেই বলেছে, তাঁরা অনুষ্ঠানে যোগ দেবে না। কংগ্রেস সহ অনেক বিরোধী দলও এখন অনুষ্ঠান বয়কট করেছে। শঙ্করাচার্যদের বিবৃতির পরে একথা পরিষ্কার যে এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে হিন্দুধর্মের যোগ নেই। এটা নিছক একটা পলিটিক্যাল প্রোগ্রাম। উদ্দেশ্য - মোদীকে প্রোমোট করা। 
বিজেপি নিশ্চয়ই আঁচ করেছিল যে সমালোচকরা বলবে দারিদ্র দূরীকরণ হচ্ছে না। ছেলেমেয়েরা চাকরি পাচ্ছে না। শুধুই মন্দির নির্মাণ হচ্ছে। তাই নীতি আয়োগ এক বিবৃতিতে দাবি করেছে যে গত দশ বছরে ১৪ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার উপরে উঠে এসেছেন। এই দাবির ভিত্তি মজবুত নয়। বিশেষজ্ঞদের মন্তব্যে তা পরিষ্কার। 
দেশের অর্থনীতির উপর মোদী আঘাত হানলেন নোটবন্দির মতো কিছু খামখেয়ালি নীতি গ্রহণ করে। এই আঘাতের পরে এল অতিমারী। দুটো এত বড় আঘাত সহ্য করার শক্তি দেশের ছিল। তাই এতদিন পরে অর্থনীতি তার দুর্দশা কাটিয়ে উঠছে। নেহরুর প্রিয় সায়েন্টিফিক টেম্পার অর্থাৎ বিজ্ঞানমনস্কতার উপর এখন যে আঘাত নামছে সে কি তার মোকাবিলা করতে পারবে? চন্দ্রযানের সাফল্যের পর আমরা ইসরোর চেয়ারম্যানকে দেখলাম মন্দিরে মন্দিরে পুজো দিতে। বুঝলাম, এই সাফল্যের কৃতিত্ব আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় বা রিসার্চ ল্যাবরেটরির নয়। তা হলো হিন্দুধর্মের। খড়গপুর আইআইটি’র নাম ব্যবহার করে প্রাচীন হিন্দু বিজ্ঞানের যে সমস্ত সাফল্যের কথা বলা হচ্ছে তা হাস্যকর বললে কম বলা হয়। এই অপবিজ্ঞানের বিজয় রথ আটক করতে হলে আমাদের কী করণীয়?
 

Comments :0

Login to leave a comment