Leap and bounds

লিপ্স এন্ড বাউন্ডসের ডিরেক্টরদের সম্পত্তির বিবরণ চাইলো আদালত

রাজ্য

লিপ্স এন্ড বাউন্ডসের ডিরেক্টরদের সম্পত্তির খতিয়ান চাইলো কলকাতা হাই কোর্ট। বৃহস্পতিবার নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানি চলাকালিন বিচারপতি অমৃতা সিনহা ইডির আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছেন ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অভিষেক ব্যানার্জি সহ ওই সংস্থার সব ডিরেক্টরের সম্পত্তির খতিয়ান জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আদালতের পক্ষ থেকে। এছাড়া নিয়োগ দুর্নীতি কান্ডে যেই সব অভিনেতা অভিনেত্রীদের নাম সামনে এসেছে তাদের সম্পত্তির বিবরণ আদালতের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার অভিষেক সিজিও কমপ্লেক্সের বাইরে দাঁড়িয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন তার সংস্থা নিয়োগ দুর্নীতির দশ পয়সাও নেয়নি।


২০১৩ সালে প্রথম সামনে আসে ‘লিপ্স এন্ড বাউন্ডস’। তখন সিপিআই(এম) এবং বামপন্থী নেতৃত্ব এই কোম্পানির নাম সামনে আনেন। নিজেদের কথার সপক্ষে একাধিক নথিও তারা সামনে আনেন। নিয়োগ দুর্নীতিতে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের গ্রেপ্তারির পর রাজ্য রাজনীতিতে ফের উঠে এসেছে লিপস এন্ড বাউন্ডসের নাম।
সিপিআই(এম) নেতা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেব প্রথম সাংবাদিক সম্মেলন করে এই লিপ্স এন্ড বাউন্ডসের কথা সামনে আনেন। তারপর একটি জনসভা থেকে কোম্পানির বিভিন্ন নথি তুলে ধরে তিনি বলেছিলেন, ‘‘এই যে যার নাম লিপস এন্ড বাউন্ডস এই কোম্পানি কার কোম্পানি? এই কোম্পানির মালিক কে, ম্যানেজিং ডায়রেক্টর কে? তার নাম অভিষেক ব্যানার্জি।’’ গৌতম যখন এই কথা বলছেন তখন অভিষেক যুব তৃণমূলের চেয়ারম্যান। তারপর সাংসদ হয়েছেন। সেই সময় অভিযোগ ছিল চিটফান্ডের কালো টাকা এই সংস্থার মাধ্যমে সাদা করা হয়। 


গৌতম দেব যখন এই কথা বলেন তখন তৃণমূল তাকে আক্রমণ করতে ছাড়েনি। মুখ্যমন্ত্রী এবং পরিবারের দুর্নীতি নিয়ে যখনই সিপিআই(এম) সরব হয়েছে তখনই রেরে করে উঠেছে গোটা তৃণমূল। গণশক্তি এই সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করলে গণশক্তিকেও আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে। 
নিয়োগ দুর্নীতিতে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর নাম যখন প্রথম শোনা যায় তখন তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘আমার মনে হয় আমি লিপস এন্ড বাউন্ডসে চাকরি বলেই আমার নাম সামনে আনা হচ্ছে।’’ তারপরেই ক্যামেড়ার সামনে তৃণমূলের ‘সান্টু দা’ ওরফে কালীঘাটের কাকু ওরফে সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র বলেন, ‘‘আমার সাহেব অভিষেক ব্যানার্জি। আমার সাহেবকে কেউ ধরতে পারবে না। কারণ কেউ তার কাছে যেতে পারবে না।’’
সম্প্রতি সুজয়কৃষ্ণ ইডি’র হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর লিপস এন্ড বাউন্ডসের ডাইরেক্টরদের নামের তালিকা টুইট করেন বিরোধী দলনেতা। কিন্তু এই কোম্পানি যখন তৈরি হয় তখন শুভেন্দু তৃণমূলের।


দশ বছর আগে গৌতম দেব যেই কথা বলেছিলেন, সেই কথা ঘটনাচক্রে প্রমানিত হলো। এবারে খোদ তৃণমূলের সান্টু দা নিজের মুখে বলেন তিনি অভিষেক ব্যানার্জির কোম্পানিতে কাজ করতেন। যার নাম লিপস এন্ড বাউন্ডস। এই সংস্থার কাজ কি? কি কাজ হয় এই কোম্পানিতে? তার কোন উত্তর নেই।
সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘অরুণ জেটলি যখন কেন্দ্রের অর্থমন্ত্রী তখন সংসদে নথি সহ বলেছিলাম যে এই সংস্থার মাধ্যমে নিয়োগ দুর্নীতির কালো টাকা সরাসরি সাদা করা হচ্ছে। জেটলি বলেছিলেন যে তদন্ত হবে। কিন্তু এই বিজেপি কোন তদন্ত করেনি। মোহন ভাগবতের মাধ্যমে বিজেপি এবং তৃণমূলের এমন বোঝাপড়া যে কোনটার তদন্ত হচ্ছে না।’’


অভিষেকের কোম্পানিতে কতজন কর্মী। তাঁদের কাজ কি? তাঁরা কত বেতন পায়? এই সব প্রশ্নের উত্তর পরে হয়তো সামনে আসবে। কিন্তু দশ বছর আগে গৌতম দেব এবং সিপিআই(এম) নেতৃত্ব যেই কথা বলেছিল আজ তা মিলে যাচ্ছে। সেই সময় যেই তৃণমূল নেতা নেত্রীরা গৌতম দেবকে আক্রমণ করেছিলেন তারা আজ দল বদল করে অন্য দলে গিয়ে লিপস এন্ড বাউন্ডসের কথা মেনে নিচ্ছেন এবং বলছেন, ‘‘আমরা জানতাম’’।

Comments :0

Login to leave a comment