ভোটে জিততে না পেরে অন্য কয়েকটি দলের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেছিলেন ইজরায়েলের সবচেয়ে দক্ষিণপন্থী দলের সবচেয়ে আগ্রাসী নেতা নেতানিয়াহু। বিবি নামে পরিচিত এই নেতাই এখন প্রধানমন্ত্রী। জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে কিছুকাল আগেও তিনি ছিলেন তলানিতে। এখন প্যালেস্তাইনের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে তিনি জাতীয় হিরো। সদম্ভে ঘোষণা করে দিয়েছেন গাজা বলে কোনও ভূখণ্ডের অস্তিত্ব থাকবে না। গোটা জনপদকে বোমা, ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হবে। নিরীহ-নিরপরাধ মানুষকে পাইকারি হারে মেরে যুদ্ধ জয়ের উৎসব হবে।
অতঃপর গোটা গাজা ভূখণ্ড দখল করে ইজরায়েলের নতুন জনবসতি গড়ে উঠবে। মানচিত্র থেকে চিরতরে মুছে দেওয়া হবে গাজার অস্তিত্ব, প্যালেস্তাইনের নাম। ইজরায়েলের এহেন ঘোষণাকে দু’হাত তুলে সমর্থন করেছে আর এক আগ্রাসী সাম্রাজ্যবাদী দেশ আমেরিকা। তার লেজুড়রূপে পাশে দাঁড়িয়েছে আমেরিকার পশ্চিমী মিত্ররাও। শুধু সমর্থন-সহায়তার কথা বলেই ক্ষান্ত হয়নি আমেরিকা। ইজরায়েল যাতে তাদের ঘোষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে তার জন্য এই যুদ্ধে ইজরায়েলকে সব ধরনের সমরাস্ত্র দেবার কথাও ঘোষণা করেছে আমেরিকা।
ঘোষণা মতো মার্কিন রণতরী পাঠানো হয়েছে ইজরায়েলকে শক্তি ও সামর্থ্য জোগানোর জন্য। ইতিমধ্যে অস্ত্র বোঝাই করে মার্কিন অতিকায় সামরিক পরিবহণ ইজরায়েল পৌঁছে গেছে। ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানে আমেরিকা ‘আক্রান্ত’ ইউক্রেনের পক্ষে দাঁড়িয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক অবরোধ এবং নিষেধাজ্ঞা জারি করে। আর ইউক্রেন অর্থ দিয়ে, অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে, সামরিক প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে সর্বতোভাবে সাহায্য করে যায় যাতে রাশিয়াকে পর্যুদস্ত করা যায়। বাস্তবে ইউক্রেনকে সামনে রেখে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালায় আমেরিকা ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা।
অথচ ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধে আমেরিকা আক্রমণকারীর পক্ষে। আপাত দৃষ্টিতে এবার আগে হামাস আক্রমণ করলেও ৭৫ বছর ধরে শত সহস্রবার আক্রমণ করে গেছে ইজরায়েল। ৭৫ বছর আগে ইজরায়েল নামে কোনও দেশেরই অস্তিত্ব ছিল না। ইউরোপে মার খেয়ে যে ইহুদিরা আশ্রয় নিয়েছিল যে আরব ভূখণ্ডে সেই আশ্রয়দাতাদের উৎখাত করে তাদের জমি দখল ধাপে গোটা প্যালেস্তাইনটাই তারা দখল করে নিয়েছে। প্যালেস্তাইনের মানুষ নিজভূমে পরবাসী। গাজা ও ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের কিছু পকেটে এখন তাদের বাস। সেটাও প্রতিদিন একটু একটু করে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। পশ্চিম এশিয়ায় আমেরিকার এজেন্ট হিসেবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ পূরণ করে ইজরায়েল।
বিনিময়ে ইজরায়েলকে সব দিক থেকে সুরক্ষিত রাখা এবং প্যালেস্তাইনকে নিশ্চিহ্ন করে সবটাই ইজরায়েল রাষ্ট্রের অধীনে আনার দায় আমেরিকার। সেই দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য এবার পূরণ করতে মার্কিন সহায়তায় ইজরায়েল দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। প্যালেস্তাইনের মানুষের সামনে তিনটি রাস্তার একটি বেছে নিতে হবে। হয় পিতৃভূমি ত্যাগ করে অন্য দেশের শরণার্থী শিবিরে ঠাঁই নিতে হবে নতুবা ইজরায়েলের বশ্যতা মেনে থাকতে হবে। তা না হলে মৃত্যুকে বেছে নিতে হবে।
৭৫ বছর ধরে প্যালেস্তাইনের ন্যায়সঙ্গত দাবি মেনে দুই দেশের স্বীকৃতির পক্ষে ছিল ভারত। মোদী জমানায় আদি জনগোষ্ঠী আরবদের উৎখাত করে বহিরাগত ইহুদিদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে ভারত। চিরকাল শান্তির পক্ষে, আলোচনায় সমস্যার সমাধানের কথা বলে আসা ভারত সরাসরি যুদ্ধের পক্ষে গণহত্যার পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। ভারতের প্রতিষ্ঠিত বিদেশ নীতি অনুযায়ী সরকারের উচিত ছিল দু’পক্ষকেই সংযত নিরস্ত্র করে শান্তিপূর্ণ উপায় যুক্তিপূর্ণ সমাধানের রাস্তা বের করার প্রয়াস চালানো। ৫৬ ইঞ্চির যুদ্ধ, ঘৃণা, হিংসা, মৃত্যু অতিপ্রিয়।
Comments :0