WATER CRISIS IN KOLKATA

কলকাতায় তীব্র হচ্ছে জলসঙ্কট

রাজ্য কলকাতা

water scarcity kmc kolkata bengali news কর্পোরেশনের জলের গাড়ি থেকে জল নেওয়ার ভিড়। ছবিঃ সংগৃহীত

একদিকে বাড়ছে তাপমাত্রা। দীগন্তে বৃষ্টির লেশমাত্র নেই। কলকাতা শহরে তারসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে জলের সঙ্কট।

কলকাতা কর্পোরেশনের আধিকারিক, ইঞ্জিনিয়ার সহ ওয়াকিবহাল মহলের একটা অংশ জল সঙ্কটের জন্য মূলত ২টি কারণকে দায়ী করছেন। প্রথমটা কলকাতা কর্পোরেশনের গাফিলতি হলে দ্বিতীয়টি অবশ্যই বেআইনি নির্মাণ।

আধিকারিক এবং ইঞ্জিনিয়াররা জানাচ্ছেন, টাউন প্ল্যানিংয়ের তোয়াক্কা না করেই গত ১০ বছরে কলকাতায় লাগামছাড়া হারে নগরায়ণ হয়েছে। শহরের সংযুক্ত এলাকাগুলিতে একপ্রকার জন বিস্ফোরণ ঘটেছে। কিন্তু তারসঙ্গে তাল মিলিয়ে জল সংযোগ পৌঁছে দিতে পারেনি কলকাতা কর্পোরেশন। 

যেমন ধরা যাক কলকাতা কর্পোরেশনের ১৪২, ১৪৩ এবং ১৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের কথা। জোকা-১ এবং জোকা-২ পঞ্চায়েতকে ভেঙে তৈরি হয় এই তিন ওয়ার্ড। এবং তাদের সরাসরি কলকাতা শহরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই এলাকাগুলিতে এখনও কর্পোরেশনের তরফে পরিশ্রুত পানীয় জলের সংযোগ পৌঁছে দিতে পারেনি কর্পোরেশন। তারফলে এখনও বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ পাম্প ব্যবহার করে ভূগর্ভস্থ জল তুলে নিজেদের চাহিদা মেটাচ্ছেন। কিন্তু কলকাতা শহরের জলের স্তর তো আগে থেকেই নিম্নগামী। ফলতঃ তৈরি হচ্ছে জলের চাহিদা। 

যদিও কর্পোরেশনের দাবি, জলের গাড়ি পাঠিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় নেহাতই অপ্রতুল।

কেবলমাত্র জোকাই নয়। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বেহালা, যাদবপুর এবং টালিগঞ্জ কলকাতা শহরের অন্তর্ভুক্ত হয় ১৯৮৫ সালে। এখনও এই সংযুক্ত এলাকাগুলিতে পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। এই এলাকাগুলির উন্নয়নে বিশেষ নজর প্রয়োজন। সেই কারণেই বামফ্রন্ট পরিচালিত বোর্ডের সময় সংযুক্ত এলাকার উন্নতির জন্য আলাদা তহবিলের ব্যবস্থা ছিল। গত কয়েক বছর ধরেই ধাপে ধাপে সেই তহবিল তুলে দেওয়ার কথা বলে আসছিল তৃণমূল। চলতি বাজেট অধিবেশনে পাকাপাকি ভাবে সেই তহবিল তুলে দেওয়ার ঘোষণা করেন কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র ফিরহাদ হাকিম।

এবং তারফলে এই এলাকায় চলা জলপ্রকল্প চলছে কার্যত শামুকের গতিতে। ১১৪ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ আনন্দপল্লী অঞ্চলে ২ বছর ধরে স্থগিত রয়েছে জল প্রকল্পের কাজ। তারফলে টালিগঞ্জ বিধানসভার অন্তর্গত আনন্দপল্লী, ঢালিপাড়া, নতুনপল্লী, দীনেশপল্লী প্রভৃতি অঞ্চলের মানুষকে এখনও নির্ভর করে থাকতে হচ্ছে ১৫টি গভীর নলকূপের উপরেই। সেই জলের সংযোগ নিয়ম করে ক্ষীণ হয়। বিশেষ করে গরমকালে। কর্পোরেশন মাঝেসাঝে জলের গাড়ি পাঠিয়েই দায়িত্ব সারে।

১১৪ নম্বর ওয়ার্ডের পাশাপাশি এই সমস্যা ১১১, ১১২, ১১৩, ১৪২ এবং ১৪৩ নম্বর ওয়ার্ডেও প্রকট। বাঁশদ্রোণী, কুঁদঘাট, দক্ষিণ বিবেকানন্দ পল্লী, পূর্ব পুঁটিয়ারি, শিবতলা, জোকা, যাদবপুরের একাংশ, বেহালা পূর্ব, বিবেকানন্দ পার্ক, জয়েস পার্ক, কংগ্রেস নগর প্রভৃতি এলাকায় এই সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করেছে। অধিকাংশ এলাকায়  বুস্টার পাম্পিং স্টেশন সহ অন্যান্য জল প্রকল্পের কাজ অর্ধেক হয়ে রয়েছে। বেশ কিছু জায়গায় অন্য জায়গা থেকে জল এনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে।  যেমন ১১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ১১২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রফুল্ল পার্ক এলাকার পাম্পিং স্টেশনের জল সরবরাহ করছে কর্পোরেশন। 

বেলেঘাটা অঞ্চলে সঙ্কটের কারণ ভিন্ন। ৩৩, ৩৪, ৩৫ সহ বেলেঘাটা বিধানসভা এলাকার অধিকাংশ ওয়ার্ডে তৃণমূলী সিন্ডিকেট বাহিনী দাপিয়ে বেড়ায়। কলিমুদ্দিন লেন, দেশবন্ধু স্কুল, রাসমণি বাজার সংলগ্ন এলাকা সহ একের পর এক বস্তির মধ্যে মাথা তুলেছে বহুতল। সেই বেআইনি বহুতলগুলিতে স্বাভাবিক ভাবেই নেই বৈধ জলের সংযোগ। তারফলে কর্পোরেশনের জলের লাইন থেকেই পাম্প দিয়ে বহুতলগুলিতে জল পাঠানো হচ্ছে। এরফলে জলের লাইনের প্রেশার কমে যাচ্ছে। গরমে সমস্যায় পড়ছেন অন্যান্য বাসিন্দারা।

বেলেঘাটার পাশাপাশি মানিকতলা, বাগমারি, উল্টোডাঙা অঞ্চলেও তৃণমূল পোষিত সিন্ডিকেটের জন্য জল সঙ্কটে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। শাসকদলের নেতাদের বাঁচাতে এখানেও ভরসা জলের গাড়ি। যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় নেহাতই অপ্রতূল।

যদিও কর্পোরেশনের দাবি, প্রতিদিন ৪৫০ মিলিয়ন বা ৪৫ কোটি গ্যালন জল সরবরাহ করা হয় কলকাতা শহরে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটাই বেশি। 

Comments :0

Login to leave a comment