আরএসএস সম্পর্কে নীরব। প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে সুবিধা পাইয়ে দিচ্ছেন বিজেপিকে। কিন্তু সিপিআই(এম)’কে আক্রমণের কোনও সুযোগ নষ্ট করতে নারাজ মমতা ব্যানার্জি। সোমবার, রাম মন্দিরের উদ্বোধনের দিনেও কলকাতা সাক্ষী থাকল সেই ঘটনার।
সোমবার অযোধ্যায় রাম মন্দির উদ্বোধনের দিন পথে নেমেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জিও ছিলেন কর্মসূচিতে। মিছিলের শুরুতে এবং মাঝে মন্দির, মসজিদ এবং চার্চে ঢুকতে দেখা যায় মমতা ব্যানার্জিকে।
হাজরা থেকে শুরু হয়ে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে মিছিল যায় পার্ক সার্কাসে। সেখানে বিজেপির বদলে সিপিআই(এম)’কে আক্রমণ করে তিনি বলেন, ‘‘মাদ্রাসা করেনি, কবরস্থান করেনি। শ্মশান করেনি। দুর্গাপুজোয় যেত না। তারা নাকি ধর্ম মানে না। কিন্তু আমি ধর্ম মানি। কিন্তু ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।’’
বিভিন্ন অংশই মনে করিয়েছে যে পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের মেয়াদে রাজ্যের মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিকীরণ করা হয়। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং পুরস্কারও পায় তৎকালীন রাজ্য সরকার। আবার কাঠের চুল্লি থেকে বৈদ্যুতিক চুল্লি বা কবরস্থানের সংস্কারের বহু উদাহরণ। রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহার করার মনোভাবের কারণে মমতার আক্রমণ ছিল বামপন্থীদের বিরুদ্ধে। তাঁর মেয়াদেই রাজ্যে রামনবমীর মতো অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। অথচ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার জন্য কারও শাস্তি হয়নি।
এই মহল মনে করাচ্ছে, অতীতেও বহু মানুষের অংশগ্রহণে দুর্গাপুজো হয়েছে। সেই সর্বজনীন উৎসবের মূল সুর ছিল সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ। তৃণমূল আমলে দুর্গোৎসব কমিটিগুলির রাজনীতিকরণ এবং দুর্নীতিকরণ হয়েছে। পাড়ার সাধারণ মানুষ ক্রমেই সেখান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন। বর্তমানে পুজো কমিটিগুলিকে কর্পোরেট স্পনসরশিপের দিকে ঠেলে দিচ্ছে তৃণমূলের নীতি।
একইসঙ্গে এদিন বামপন্থীদের দেওয়া ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ স্লোগানটিকে নিজের দখলে নিতে কুন্ঠা বোধ করেননি মমতা ব্যানার্জি।
এদিন সিপিআই(এম)’কে, এবং ক্ষেত্র বিশেষে অল্পস্বল্প বিজেপিকে আক্রমণ করলেও আরএসএস নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই মৌন ছিলেন আরএসএস’র দুর্গা। প্রসঙ্গত, সিপিআই(এম)’কে হারাতে মমতা ব্যানার্জিকে ঢালাও সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছিল আরএসএস। সেই সূত্রে মমতা ব্যানার্জিকে দুর্গা উপাধিও দিয়েছিল আরএসএস।
মমতা ব্যানার্জির আরও অভিযোগ করেছেন, ‘‘বিরোধী জোট ইন্ডিয়ার বৈঠকের এজেন্ডা নিয়ন্ত্রণ করে সিপিআই(এম)। এটা মেনে নেওয়া যায়না। আমি যাঁদের বিরুদ্ধে ৩৪ বছর ধরে লড়াই করলাম, তাঁদের এই ভূমিকা আমি মেনে নিতে পারিনা। কিন্তু এই অপমানের পরেও আমি ইন্ডিয়া ছেড়ে চলে আসিনি।’’
কংগ্রেসকেও এদিন আক্রমণ করেছেন মমতা। তাঁর অভিযোগ, ‘‘ইচ্ছাকৃত ভাবে আসন সমঝোতার ক্ষেত্রে কংগ্রেস দেরি করছে। ইন্ডিয়া জোটে একমাত্র আমার ক্ষমতা রয়েছে মুখোমুখি সংঘাতে বিজেপিকে পরাস্ত করার। কিন্তু কিছু মানুষ ইচ্ছে করে আমাদের কথা শুনতে চায়না, আমাদের গুরুত্ব দিতে চায়না।’’
প্রসঙ্গত, রাজ্যে কংগ্রেসকে মাত্র ২টি আসন ছাড়ার কথা হাওয়ায় ভাসিয়ে দিয়েছে তৃণমূল। প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে সেই প্রস্তাব খারিজ করার পরেই নিয়মিত কংগ্রেসকে আক্রমণ করে চলেছেন মমতা। এমনকি রাম মন্দির উদ্বোধনের দিনেও বিজেপি-আরএসএস’র তুলনায় সিপিআই(এম) এবং কংগ্রেসের সমালোচনা করাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন তিনি। বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’-কেও আক্রমণে লক্ষ্য করে মমতা বলেছেন যে তার দখল নাকি বামপন্থীরা নিয়ে রেখেছে!
Comments :0