MD SALIM

একই মোবাইলের দুটো সিম তৃণমূল আর বিজেপি, বাঁকুড়ার সভা থেকে মহম্মদ সেলিম

রাজ্য

CPIM TMC BJP AIKS WEST BENGAL PANCHAYAT ELECTION WEST BENGAL POLITICS 2023 BENGALI NEWS

তৃণমূল এবং বিজেপি একটাই ডুয়াল সিম মোবাইলের দুটে সিমকার্ড। এই যেমন মুকুল রায়। বিজেপির এক ডজন বিধায়ক বিধানসভার বাইরে তৃণমূল, ভিতরে বিজেপি। শুভেন্দু অধিকারী রোজ তৃণমূলের বাপ বাপান্ত করছে, আর তাঁর নিজের বাবা আর ভাই তৃণমূলের সাংসদ। 

বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার সভা থেকে এই ভাবেই তৃণমূল বিজেপি’র বোঝাপড়াকে আক্রমণ করলেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। সেলিম ছাড়াও এই সভায় বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) বাঁকুড়া জেলা কমিটির সম্পাদক অজিত পতি। উপস্থিত ছিলেন অভয় মুখার্জি সহ জেলা নেতৃবৃন্দ। সভা পরিচালনা করেন সুজয় চৌধুরী। 

বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার বড়জোড়ার উন্নেষ হলে সিপিআই(এম) বড়জোড়া এরিয়া কমিটির উদ্যোগে অশ্বিনী রাজ স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করা হয়। প্রধান বক্তা ছিলেন মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেন, কালো টাকা শেষ করব বলে বিজেপি শুধু টাকার রঙ বদলেছে। আইনসভায় কালো টাকা নিয়ে কোনও কথা হয়না। শুধু রাম মন্দির, হনুমান মন্দির নিয়ে আলোচনা। চারিদিক থেকে দুর্নীতির টাকা উদ্ধার হচ্ছে। সেই টাকার কতটা অংশ কালীঘাটে আছে? এটা নিয়ে কোনও তদন্ত হচ্ছেনা। কিন্তু জ্ঞানবাপী মসজিদের ফোয়ারার নীচে কী আছে, কিংবা কুতুব মিনারের নীচে কী আছে- সেই নিয়ে বিতর্ক চালু করেছে বিজেপি। 

সেলিম এদিন বলেন, বিজ্ঞাপনের আড়ম্বরের মোড়কে বিভ্রান্তিকর প্রচার চালাচ্ছে তৃণমূল এবং বিজেপি। বড় বড় কোম্পানির পণ্য বিক্রি করতে মালিক কী সামনে আসে? নায়ক নায়িকাদের ভাড়া নেয়। ঠিক একই কাজ করেছে তৃণমূল। সমস্ত ক্ষেত্রে চুরি। মানুষ বিরক্ত। তখন বলিউড, টলিউডের শিল্পীদের সামনে এনে বলা হল, আপনি এদের দেখে ভোট দিন। নিজের প্রচার নিজের নামে করার সাহস নেই মমতা ব্যানার্জির। 

ভিড়ে ঠাসা সভায় সেলিম বলেছেন, নায়ক নায়িকা ফর্মুলা ফেল করলে বাবুল সুপ্রিয়, সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীদের সামনে আনে তৃণমূল। মমতা ব্যানার্জি প্রথমে হিজাব,কলমা পরার অভিনয় করলেন। শাহরুখ খান যেমন চরিত্র অনুযায়ী পোষাক পরেন। হিন্দু মহল্লায় যেতে হলে একরকম পোষাক, আর মুসলমান মহল্লার জন্য একরকম পোষাক। বামপন্থীদের প্রয়োজন না হলেও তৃণমূল বিজেপির রাজনীতি করতে গেলেও অনুসঙ্গ লাগে। পিআর এজেন্সি, ক্যামেরাম্যান, মেক আপ আর্টিস্ট, একাংশের কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীকে অনুসঙ্গ হিসেবে ব্যবহার করা হয় আবহাওয়া তৈরি করতে। কেন মমতা মোদীর বক্তব্যের সময় সিদ্দিকুল্লা কিংবা অন্য কোনও সাধু সন্তকে মঞ্চে প্রয়োজন? 

এই প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, আগে স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে মার্কশটের ট্রু কপিকে অ্যাটেস্ট করিয়ে জমা দিতে হত। তারফলে নকল মার্কশিট আসল বলে গণ্য হত। একই কায়দায় প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী মিথ্যা কথা বললেও, ধর্মগুরু পাশে বসে সেই মিথ্যাকে এটেস্ট করছেন। এই জায়গায় রাজনীতিকে নামিয়ে এনেছে বিজেপি আর তৃণমূল। ধর্মকে বর্ম করে অপরাধ ঘটানো হচ্ছে। 

সেলিম রাজ্যের পরিস্থিতি তুলে ধরে এদিন বলেছেন, রাজ্যের প্রধান সমস্যা চাকরি নেই। যতটুকু চাকরি হচ্ছে দুর্নীতি করে। তার প্রতিবাদ করে ভাইফোঁটা, ঈদ, মহরম, রাস্তায় কাটছে চাকরিপ্রার্থীদের। সরকার দায়িত্বশীল হলে, সমস্যা সমাধানে ভূমিকা নিত। সরকার দায়িত্ব নিচ্ছেনা বলেই বিচারপতিদের উদ্যোগী হতে হচ্ছে। 

সেলিম বাঁকুড়ার সভা থেকে বলেছেন, সরকারের কাজ অন্যায় আটকানো। বাংলায় প্রশাসনকে ব্যবহার করে রাজ্য সরকার অন্যায় করছে। এবং সেই অন্যায়ের তদন্ত আটকাতে হাইকোর্ট সুপ্রিম কোর্টে দৌঁড়চ্ছে। আনিস খানের খুন থেকে শুরু করে চিটফান্ড কাণ্ড কিংবা একের পর এক দলবদ্ধ ধর্ষণ- সরকার কোর্টে দৌঁড়চ্ছে যাতে তদন্ত না হয়। দুর্নীতিতন্ত্রকে আস্কারা দিচ্ছেন মমতা ব্যানার্জি। 

সেলিম বলেছেন, গুরুজন, সজ্জনদের সরিয়ে তৃণমূলের মঞ্চে মহাজনরা জায়গা করে নিয়েছে। মহাজনরা দুর্নীতি চালিয়ে যেতে তৃণমূলের কর্মসূচিতে টাকা ঢালছে। নবজোয়ার ইত্যাদি কর্মসূচিতে সেই টাকাতেই বিলাসবহুল তাঁবু টাঙানো হচ্ছে। দুর্নীতির সঙ্গে দুষ্কৃতিতন্ত্র যুক্ত। নইলে তৃণমূল জিতবে না। সজ্জন তুমি রাজনীতিতে থাকবে না। থাকবে হয় মহাজন, নয়ত দুর্জন। এই দুয়ের জোরে সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার নামিয়ে আনা হচ্ছে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, নৈতিকতাকে ধ্বংস করা হয়েছে। 

সেলিম বলেছেন, ৩০ বছর ধরে নয়া উদারবাদের নামে এই কাজ গতি পেয়েছে। রাজনীতিকে কলুষিত করা হয়েছে। সাধারণ মানুষকে রাজনীতির আঙিনা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। গরীবের অধিকার, স্বাধীনতাকে ভেঙে ফেলা হল। সেই শূন্যস্থানে আরএসএস-জামাত জড়ো হল। স্লোগান উঠল ‘লাল হটাও-দেশ বাঁচাও’। লাল হটল,কিন্তু দেশ বাঁচল না। লালঝাণ্ডা দুর্বল হলনা, কিন্তু মূল্যবোধকে রক্ষার কথা যাঁরা বলতেন, তাঁদের কন্ঠস্বর দুর্বল হল। 

সেলিম বলেছেন, দুর্নীতিতন্ত্র সমাজকে ভঙ্গুর করছে । নীতিহীন সমাজে দুষ্কৃতিদের  মুক্তাঞ্চল গড়ে উঠছে। দেশকে বাঁচাতে, সংবিধান বাঁচাতে, লালকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। মানুষের ঐক্য গড়তে হবে। মানুষের অধিকার বোধকে জাগাতে হবে। মূল্যবোধ থেকে বোধকে সরিয়ে হাতে শুধু মূল্য গুঁজে দিলে দেশ দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনা। ৩৭০ ধারা বিতর্ক, মণিপুর সংঘাত, অভিন্ন দেওয়ানী বিধি, কুর্মি-মাহাত সংঘাত সেই অধিকার হরণের ব্লু প্রন্ট মেনে হয়েছে। আসল শত্রুকে আড়াল করে প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে প্রতিবেশীকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর বিরুদ্ধে মানুষের ঐক্য মজবুত করতে হবে বামপন্থীদের। 

Comments :0

Login to leave a comment