HISTORICAL VICTORY OF MOROCCO

মরক্কোর জয়ে আবেগের বিস্ফোরণে ভাসলেন ফাখরেদ্দিন

খেলা

মরক্কোর জয়ে আবেগের বিস্ফোরণ

২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপ আবেগের বিশ্বকাপ। ‘আন্ডারডগ’দের মহীরুহ হয়ে ওঠার বিশ্বকাপ। সমস্ত ছক ভেঙে নতুনকে স্বাগত জানানোর  বিশ্বকাপ। এতকিছু ঘটবে, আর সেখানে আবেগের স্ফূরণ ঘটবে না, তাও আবার হয় নাকি? তেমনই একটি ঘটনার ভিডিও ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে।  এই কাহিনীর নায়ক ভিড় থেকে উঠে এসে আবার ভিড়েই মিলিয়ে যাওয়া দেরোইচ ফাখরেদ্দিন। 

বিশ্বকাপের শেষ কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালকে হারিয়ে সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছে মরক্কো।প্রি কোয়ার্টার ফাইনালে তাঁরা হারিয়েছে স্পেনকে।  স্টেডিয়ামের গ্যালারি থেকে সেই দুই দৃশ্যের সাক্ষী থেকেছেন কয়েক হাজার মানুষ। কিন্তু স্টেডিয়ামে উপস্থিত থাকলেই কি সবার ম্যাচ দেখার ফুরসৎ মেলে, অনুমতি মেলে? 

এবারের বিশ্বকাপের যেকোনও একটি ম্যাচের দিকে তাকালেই নজরে পড়তে বাধ্য গোটা সাইডলাইন জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা একদল মানুষকে। তাঁরা ভাড়াটে নিরাপত্তারক্ষী। এঁদের অধিকাংশেরই ঠিকানা আফ্রিকা কিংবা এশিয়ার দরিদ্র কোনও দেশ। সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে ম্যাচ চলাকালীন স্টেডিয়ামের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করাই তাঁদের মূল কাজ। ম্যাচ নব্বই মিনিটই চলুক, কিংবা অতিরিক্ত সময় হয়ে পেনাল্টি শুট আউটে গিয়ে হাজির হোক, দর্শকদের দিক থেকে নজর ফেরানোর সুযোগ নেই এই নিরাপত্তাকর্মীদের। 

তেমনই একজন দেরোইচ ফাখরেদ্দিন। মরক্কোর বাসিন্দা। কাতারে অভিবাসী শ্রমিক। বিশ্বকাপ চলাকালীন গায়ে চাপিয়েছেন নিরাপত্তারক্ষীর অ্যাপ্রন। নির্মাণ কাজের তুলনায় এই কাজের পারিশ্রমিক কিঞ্চিত বেশি কিনা। পেশার তাগিদে ঠায় তাকিয়ে থাকতে হয়েছে দর্শক পূর্ণ গ্যালারির দিকে। আর পিঠের ঠিক পিছনে বঞ্চিত, পদদলিত একটা মহাদেশের অস্মিতাকে উর্ধে তুলে ধরার লড়াই চালাচ্ছে তাঁর প্রিয় দল। তাঁর জাতীয় দল মরক্কোর খেলোয়াড়রা। 

ফাখরেদ্দিন জানতেন মরক্কো বনাম স্পেনের ম্যাচ চলছে। এবং ম্যাচ গড়িয়েছে পেনাল্টি শুট আউটে।  কিন্তু পেনাল্টি শুট আউটের সাম্প্রতিকতম গতিপ্রকৃতি বোঝার কোনও সুযোগই তাঁর কাছে ছিল না। কারণ একটিবার মাঠের দিকে নজর ফেরালেই খোয়াতে হত চাকরি। একইসঙ্গে কাঁধে চাপত বিপুল জরিমানার বোঝা। তাই স্টেডিয়ামের দর্শকদের মুখের দিকে তাকিয়েই আঁচ পেতে হচ্ছিল খেলার হাল হকিকৎ। 

কর্তব্যের তাড়নায় মাঠে না তাকালেও, এই রকম পরিস্থিতিতে কি হৃদয়ে লাগাম পরানো সম্ভব? ফাখরেদ্দিন পারেননি। মরক্কোর সমর্থকদের উচ্ছ্বাস এবং স্টেডিয়াম থেকে উড়ে আসা  মাতৃভাষার টুকরো টুকরো শব্দগুচ্ছ জমিয়ে তিনি বুঝতে পারছিলেন স্পেনের বিরুদ্ধে তাঁর দেশ পেনাল্টি শুট আউটে এগিয়ে রয়েছে। শেষ বাঁশি বাজার আগের মুহূর্তে স্প্যানিশ গ্যালারিতে কেমন দমবন্ধ অবস্থা। তাহলে আমরাই এগিয়ে রয়েছি। এবং শেষ বাঁশি বাজার মুহূর্তে আর নিজেকে সামলে রাখতে পারেননি তিনি। দুহাতে মুখ ঢেকে শিশুর মতো ভেঙে পড়েন কান্নায়। এবং সেই দৃশ্য মোবাইল বন্দী করেন মরক্কোর এক সমর্থক, এবং সেই ক্লিপিং ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। প্রিয় দলের জয়ে এমন নিষ্পাপ অনুভূতির প্রকাশ ইতিমধ্যেই মন জিতে নিয়েছে গোটা সোশ্যাল দুনিয়ার। 

এবারের বিশ্বকাপে ইতিমধ্যেই ইতিহাস সৃষ্টি করে ফেলেছে মরক্কো। আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসেবে আদায় করে নিয়েছে ফুটবল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার ছাড়পত্র। মরক্কোর সাম্প্রতিক ফর্মের দিকে তাকালে আরও উত্তরণের আশা করাই যেতে পারে। ছবির মতো সুন্দর ডিফেন্সিভ ফুটবল খেলে পাওলো রোসিদের ইতালির কথা মনে পড়িয়ে দিচ্ছে ‘অ্যাটলাস লায়ন্স’রা। 

Comments :0

Login to leave a comment