NABANNA

আন্দোলন নয় টিফিন বিরতিতেও , নয়া ফতোয়া নবান্নের

রাজ্য কলকাতা

NABANNA MAMATA BANERJEE GOVERNMENT EMPLOYEES MOVEMENT BENGALI NEWS

টিফিনের বিরতিতে সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলনের অধিকার কাড়তে সার্কুলার জারি করলো নবান্ন। দাবি আদায়ে আধ ঘণ্টার আন্দোলনও দিতে নারাজ মমতা ব্যানার্জির প্রশাসন!

শনিবার সরকারি ছুটির দিনে অর্থ দপ্তরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিবের সার্কুলার প্রকাশ্যে আসার পর চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে কর্মচারী মহলে। এদিন অর্থ দপ্তরের জারি করা নির্দেশিকাতে উল্লেখ করা হয়েছে, দুপুর দেড়টা থেকে ২টা পর্যন্ত সরকারি দপ্তরে টিফিনের বিরতি। ওই বিরতি এবার থেকে শুধু টিফিন খাওয়ার কাজেও কর্মচারীদের যুক্ত থাকতে হবে। আধ ঘণ্টার ওই সময় অন্য কোনও কাজে কর্মচারীরা ব্যবহার করতে পারবেন না। 


যদি টিফিন খাওয়ার বাইরে অন্য কোনও কাজে কর্মচারীরা আধ ঘণ্টা সময়কে ব্যবহার করেন তাহলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে কর্মচারীদের। অর্থ দপ্তরের সার্কুলারে জানানো হয়েছে, টিফিনের বিরতিতে কোনোরকম বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে কর্মচারীদের চিহ্নিত করে ওই দিন দপ্তরে গরহাজির করে দেওয়া হবে। 

এই নির্দেশিকা প্রসঙ্গে বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘টিফিনের সময় সরকারি কর্মচারী টিফিন খাবে না গল্প করবে না টয়লেটে যাবে সেটা সরকার কী করে ঠিক করবে! সম্পূর্ণ স্বৈরাচারী পদক্ষেপ। কেউ এই নির্দেশিকা চ্যালেঞ্জ করলে আদালত হস্তক্ষেপ করবে।’’ 

ভয়ানক এই নির্দেশিকাতে কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, সরকারি দপ্তরে নিয়মানুবর্তিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিশৃঙ্খলা রুখতে এবার থেকে আধিকারিক ও কর্মচারীরা কোনোভাবেই অফিস ছেড়ে বের হতে পারবেন না। টিফিনের বিরতিতেও কর্মচারীদের বাধ্য করা হয়েছে নিজের চেয়ারে বসে থাকতে।

রাজ্য প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, যেভাবে গত ক’মাসে সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক ও অন্যান্য সরকারি ক্ষেত্রের কর্মীদের আন্দোলন বাড়ছে তাতে রাশ আলগা হচ্ছে প্রশাসনের। আদালতে কাছ থেকে নির্দেশ বের করে মুখ্যমন্ত্রীর পাড়ায় চোর, চোর স্লোগান দিয়ে হাজার, হাজার কর্মচারী মিছিল পর্যন্ত করেছেন। তাই শক্ত হাতে প্রশাসনকে পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্যই নির্দেশিকা। 

গত মার্চে মোদী সরকারই একই কায়দায় কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী আন্দোলনকে দমাতে কালা সার্কুলার জারি করেছিল। গত ২০ মার্চ কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক ও কর্মীবর্গ মন্ত্রকের তরফ থেকে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের ধর্মঘট, অবস্থান, ধরনা নিষিদ্ধ করার নির্দেশিকা জারি করেছিল। সেই একই পথ ধরে এগচ্ছে এরাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার। 


সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আসার পর তীব্র ক্ষোভ জানাতে শুরু করে কর্মচারী সংগঠনগুলি। সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সোমবারই রাজ্যের সমস্ত সরকারি দপ্তরে টিফিনের বিরতিতেই বিক্ষোভ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটি ও সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। 

রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরি জানান,‘‘ দেড়টা থেকে ২টো টিফিন টাইম কর্মচারীর ব্যাক্তিগত সময়। ওই সময় আমি চেয়ারে বসে থাকবো, টিফিন করবো, না, ন্যায্য দাবি উত্থাপন করবো এটা কর্মচারী ঠিক করবেন। স্বাধীন ভারতের নাগরিক হিসাব ট্রেড ইউনিয়ন করার যে অধিকার তার ওপর তো বটেই সংবিধানের ওপর আক্রমণ। আমরা এই কালা সার্কুলারের তীব্র বিরোধিতা করছি।’’ 

নবান্নের এই নয়া নির্দেশিকা সামনে আসার পর  ব্যক্তিগত সময়কে কর্মচারীরা কীভাবে ব্যবহার করবেন তার ওপর সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ বলছেন কর্মচারী সংগঠন। শহীদ মিনার মঞ্চে অবস্থানরত সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ সরকারের এই নির্দেশিকা প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘‘সরকারের এই সার্কুলার মৌলিক অধিকারের বিরোধী। বিরতি কাজেরই অঙ্গ। আমরা এই নির্দেশিকার বিরুদ্ধে আদালতে যাবো। আসলে আন্দোলনের চাপে পড়ে সরকার এখন দিশাহারা।’’ 


গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্য বাজেটের দিন চিরকুটে ৩ শতাংশ ডিএ ঘোষণার পর থেকেই মধ্যবিত্ত কর্মচারীদের ক্ষোভ আছড়ে পড়েছে রাজপথে। কর্মবিরতির আন্দোলনে অচল হয়ে পড়ে রাজ্য প্রশাসন। বকেয়া ডিএ’র সঙ্গে শূন্যপদে নিয়োগের দাবিতে ১০ মার্চ সরকারি কোষাগার থেকে বেতন প্রাপ্ত কর্মচারীরা ধর্মঘট পালন করেন। ৫২ বছর পর এরাজ্যে সরকারি কর্মচারী ধর্মঘটে বিপুল সাড়া দেখে টনক নড়ে রাজ্য প্রশাসনের। এতদিন ভয়ভীতি আশঙ্কা পরোয়া না করে কর্মচারীরা যেভাবে আন্দোলনে সাড়া দিচ্ছেন তাতে মুখ্যমন্ত্রী বুঝতে পারেন, সরকারি প্রশাসনে আলগা হচ্ছে রাশ। 

সরকারি সভা থেকে দলের মঞ্চে গত এক মাসে কর্মচারীদের লাগাতার আক্রমণ করে গেছেন মমতা ব্যানার্জি। এমনকি আদালতে রায়ে ৩৬ হাজার চাকরি বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে মমতা ব্যানার্জি ডিএ আন্দোলনকারীদের ওপর চাপিয়ে দেন। এই সময়ের মধ্যে বেশ কয়েক দফায় নবান্নে ঢোকার সময় ঘুরতে শুরু করেন বিভিন্ন দপ্তরে। গত দু’দিন আগে মমতা ব্যানার্জি নবান্নে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর। প্রতি ক্ষেত্রেই মুখ্যমন্ত্রী কর্মচারীদের দপ্তরে উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। 


প্রশাসনিক সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছাতেই রাজ্যের অর্থ দপ্তর এই নির্দেশিকা জারি করেছেন। সরকারি এই নির্দেশিকা প্রসঙ্গে পঞ্চায়েত কর্মচারী সমিতি সমূহের যৌথ কমিটির সাধারণ সম্পাদক সন্দীপ রায় জানিয়েছেন, ‘‘কর্মচারী আন্দোলনকে ভয় পেয়ে সরকার মুখ বন্ধ করার নির্দেশিকা জারি করেছে। একমাত্র ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন পারে সরকারকে পিছু হটাতে।’’
 

Comments :0

Login to leave a comment