EDITORIAL

আলোচনায় বড্ড ভয়

জাতীয় সম্পাদকীয় বিভাগ

Editorial bjp rss congress opposition less india bengali news parliament special session

১৮ থে‍কে ২১ সেপ্টেম্বর সংসদের বি‍‌শেষ অধিবেশন ডাকার কথা জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও বি‍‌শেষ পরিস্থিতির কারণে আচমকা এই অধিবেশন ডাকতে সরকার বাধ্য হচ্ছে তা জানানো হয়নি, ব্যাখ্যা করাও হয়নি। বিশেষ অধিবেশনে কোন কোন বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে জানানো হয়নি সেটাও। বিরোধী দল, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, এমনকি দেশের জনগণকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নিয়ে ষড়যন্ত্রের জাল বোনা হচ্ছে না তো? অতীতে বার কয়েক এমন বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছিল বিশেষ প্রয়োজনে জরুরি ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য। কিন্তু কখনোই এমন গোপনীয়তা এমন ঢাক ঢাক গুড় গুড় ছিল না। মানুষকে অন্ধকারে রেখে এমন অস্বচ্ছতার আশ্রয় নেওয়া হয়নি। এবার কি এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে যে সরকারকে এমন লুকোচুরি খেলতে হচ্ছে। অধিবেশন ডাকার কারণ জনগণকে জানানোর সাহস নেই কেন? কিসের এত ভয়? আগাম জানাজানি হলে শাসক দলের গোপন ষড়যন্ত্র বানচাল হবার আশঙ্কা আছে কি? তবে কি ধরে নিতে হবে ভয়ঙ্কর কোনও জনবিরোধী পদক্ষেপ নিতেই এমন গোপনীয়তা ও নীরবতার আশ্রয়?
মনে রাখতে হবে দেশটা ১৪০ কোটি ভারতবাসীর। সরকারটাও তৈরি তাদের মতামতের ভিত্তিতে। আরএসএস-বিজেপি বা মোদী-শাহরা উত্তরাধিকার সূত্রে দেশটা বা সরকারটা পাননি যে নিজেদের খেয়াল খুশি মতো যা ইচ্ছে তাই করবেন! সরকারের প্রতিটি ভাবনা, পরিকল্পনা, পদক্ষেপ, সিদ্ধান্ত নিয়ে জনগণের সঙ্গে আগাম খোলামেলা আলোচনা করা উচিত। সবটাই জানার ও মতামত দেবার অধিকার জনগণের আছে। গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের সংবিধান মানুষকে সেই অধিকার দিয়েছে। সেই অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারও নেই। মোদী-শাহরা যা করছেন বা করতে চাইছেন এবং যেভাবে করতে চাইছেন তা অনধিকার চর্চা। স্বৈরাচারী ও আধিপত্যবাদী দাম্ভিক মানসিকতা থেকেই এধরনের আচরণ জন্ম নেই।
প্রথা অনুযায়ী বরাবর সংসদের তিনটি অধিবেশন হয় বছরে। বাজেট অধিবেশন, বর্ষাকালীন অধিবেশন এবং শীতকালীন অধিবেশন। সদ্য শেষ হয়েছে বর্ষাকালীন অধিবেশন। কিছুদিন পর শুরু হবে শীতকালীন অধিবেশন। তার মাঝখানে আচমকা ডাকা হয়েছে বিশেষ অধিবেশন। কী এমন জরুরি পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে যে জরুরি ভিত্তিতে অধিবেশন ডাকতে হলো সরকারের মাথারা ছাড়া কেউ জানে না। কয়েক বছর আগে জিএসটি চালুর সময় মধ্যরাতে সংসদের বিশেষ অধিবেশন বসেছিল। সেখা অবশ্য আগে থেকে সকলের জানা ছিল। কোনও গোপনীয়তা ছিল না। অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যেসব বিষয়ে বিতর্কের বা বিরিাধিতার সম্ভাবনা কম সে সব নিয়ে সংসদে আলোচনায় সরকারের উদ্বেগ কম থাকে। তাই আলোচনার আগে লুকোচুরি বা গোপনীয় থাকে না। কিন্তু যে বিষয়গুলিতে বিরোধী তরফে প্রবল সমালোচনা ও বিরোধিতার আশঙ্কা থাকে সে বিষয়ে আচমকা বিল পেশ করে কার্যত কোনোরকম আলোচনার সুযোগ না দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে পাশ করিয়ে নেওয়া হয়। কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নেবার বা নাগরিকত্ব আইন সংশোধন বিল এইভাবে স্বৈরাচারী কায়দায় পাশ করানো হয়েছিল। করোনাকালে তিনটি কৃষি আইনও পাশ করানো হয়েছিল একই কায়দায়।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিয়মই হলো কোনও বিল পেশ করার আনেক আগে বিলের কপি সদস্যদের দেওয়া হয় যাতে তারা যথেষ্ট পড়াশুনা করে যুক্তি-তর্ক সাজিয়ে আলোচনায় অংশ নিতে পারেন। আরএসএস-বিজেপি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পর্যাপ্ত আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিশ্বাস করে না। তারা তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত জোর করে লাগু করতে চায়। তাই আলোচনা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। আলোচনা হলে বিরোধীদের শাণিত যুক্তির কাছে পাছে হেরে যায় সেই আশঙ্কা থেকেই গোপনীয়তার আশ্রয় নেই। আগে থেকে না জানালে বিরোধীরা প্রস্তুতির সময় পাবে না এবং আলোচনারও সময় দেওয়া হবে না। জোর করে পাশ করে নেওয়া হবে। এবারের বিশেষ অধিবেশনে তেমন কিছুই হতে চলেছে।


 

Comments :0

Login to leave a comment