Rahul Gandhi sentenced jail

মোদীকে কটাক্ষ করায় দু’বছর জেল রাহুলের

জাতীয়

‘সব চোরের পদবি কেন মোদীই হয়’- এমন মন্তব্যের দায়ে বৃহস্পতিবার গুজরাটের সুরাটের এক আদালত দু’বছর কারাবাসের সাজা দিয়েছে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীকে। ২০১৯ সালের এই ফৌজদারি মানহানির মামলার রায়দানের সময় রাহুল নিজেও এদিন হাজির ছিলেন সুরাটের ওই চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে। পরে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় রাহুল জানিয়ে দেন, সত্যের পথ থেকে সরে আসবেন না তিনি। টুইটারে মহাত্মা গান্ধীর উদ্ধৃতি পোস্ট করে লেখেন, ‘আমার ধর্ম সত্য এবং অহিংসার উপর প্রতিষ্ঠিত। সত্য আমার ঈশ্বর, অহিংসা তা পাওয়ার মাধ্যম— মহাত্মা গান্ধী।’ ইতিমধ্যে কংগ্রেস নেতৃত্ব রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক পথে এর মোকাবিলায় যেতে শুক্রবারই বিরোধী দলগুলির সঙ্গে বৈঠকে বসছে কংগ্রেস। ইতিমধ্যেই এই বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে সময় চাওয়াও হয়েছে।
রাহুলের এই সাজা ঘোষণার সাথে সাথেই রাজনৈতিক মহলে এনিয়ে জোর শোরগোল শুরু হয়ে গিয়েছে। রাহুল সাংসদ পদ থাকবে কি থাকবে তা নিয়ে যেমন বিতর্ক শুরু হয়েছে, তেমনই মোদী আমলে যেভাবে বিরোধী স্বর দমিয়ে রাখার অভিযান শুরু হয়েছে, তার বিরুদ্ধেও মুখ খুলেছেন অনেকেই। গতকালই ‘মোদী হঠাও, দেশ বাঁচাও’ পোস্টার সরানো আর আজই মোদী পদবি-মন্তব্যের জন্য রাহুল গান্ধীর জেল— সব মিলিয়ে দেশে এক কর্তৃত্ববাদ রাজ করছে বলে জোরালো অভিযোগ উঠেছে।


২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে কর্নাটকে প্রচারে গিয়ে রাহুল প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘‘সব চোরেদের পদবি ‘মোদী’ হয় কেন?’’ আইপিএল কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ললিত মোদী, ব্যাঙ্ক-ঋণ মামলায় ‘পলাতক’ নীরব মোদীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তুলনা টেনেছিলেন তিনি। ওই ঘটনায় রাহুলের বিরুদ্ধে ‘পদবি অবমাননার’ অভিযোগে অপরাধমূলক মানহানির মামলা করেছিলেন গুজরাটের বিজেপি নেতা পূর্ণেশ মোদী। এদিন সুরাটের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এইচ এইচ বার্মা রাহুলকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৯ ও ৫০০ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেছেন। তাঁকে দু’বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে পাশাপাশিই রাহুলের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে ৩০ দিনের জন্য সাজা কার্যকর করা স্থগিত রাখার কথা ঘোষণা করেছে আদালত। কংগ্রেস নেতার আইনজীবী বাবু মাঙ্গুকিয়া জানিয়েছেন, ওই সময়সীমার মধ্যে সাজার রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উচ্চতর আদালতে আবেদন করতে পারবেন ওয়েনাড়ের কংগ্রেস সাংসদ রাহুল।
সাংসদ পদ নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যেই রাহুল গান্ধীর শাস্তি ঘোষণা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে কড়া সমালোচনা শুরু হয়েছে মোদী সরকারের ভূমিকা নিয়ে। রাহুল নিয়ে সত্যের পথে থাকার বলে টুইট করার পর ফের আরেকটি টুইটে ভগৎ সিং, সুখদেব ও রাজগুরুর শহিদি বরণ দিবসে শ্রদ্ধা জানিয়ে রাহুল মনে করিয়ে দিয়েছেন ভারত মাতার এই সাহসী ছেলেদের কাছ থেকে সত্য ও সাহস ধরে রেখে দেশের জন্য নির্ভীকভাবে লড়াই করা শিখেছেন তাঁরা।
কংগ্রেস সভাপতি খাড়গে একটা টুইটে বলেছেন, ‘কাপুরুষ, স্বৈরাচারী বিজেপি সরকার রাহুল গান্ধী এবং বিরোধীদের উপর ক্ষুব্ধ কারণ আমরা তাদের অপকর্ম প্রকাশ করছি এবং জেপিসি দাবি করছি’। সঙ্গে আরো বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার কারণে মোদী সরকার পুলিশ পাঠায়, ইডি পাঠায় আর রাজনৈতিক বক্তৃতার উপর মামলা চাপিয়ে দেয়। কিন্তু আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব’। একইসঙ্গে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ওরা যদি অন্যদের দিকে একটা আঙুল তোলে, তাহলে ওদের দিকেও চারটে আঙুল উঠছে। ‘আমরা জানতাম এমন একটা ঘটনা ঘটতে পারে... ওরা বিচারপতি পরিবর্তন করে চলবে। কিন্তু আমাদের বিচার বিভাগের প্রতি আস্থা আছে এবং আইন অনুযায়ী আমরা লড়াই চালিয়ে যাব,’ ঘোষণা খাড়গের।


প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বলেছেন, ‘‘ক্ষমতার এক সন্ত্রস্ত প্রশাসন যন্ত্র ‘সাম, দম, দণ্ড, ভেদ’ (বইয়ের প্রতিটি কৌশল) ব্যবহার করে রাহুল গান্ধীর কণ্ঠকে দমন করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমার দাদা কখনোই ভয় পায়নি, কখনও পাবেও না। সত্য কথা বলেই তিনি জীবন চালান, সত্য কথাই বলে যাবেন আর দেশের মানুষের আওয়াজ হয়ে ওঠা চালিয়ে যাবেন।’’
এরই মধ্যে রাহুল গান্ধীর সাজার প্রতিবাদে মুম্বাই, চেন্নাই সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় কংগ্রেস কর্মীরা ধরনা, বিক্ষোভে নেমে পড়েছেন। তামিলনাডুর কুম্ভকোনাম ও বিরুধাচলমে রেল রোখোও করেছে কংগ্রেস। 
পাশাপাশি কংগ্রেসের তরফে শুরু হয়েছে রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উচ্চতর আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতিও। কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক সিংভি জানিয়েছেন, গুজরাট আদালতের ১৭০ পাতার রায় এখন অনুবাদ চলছে। তবে দল একটি দুর্বল, ভ্রান্ত এবং টিকতেই পারবে না এমন এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে অবিলম্বে আদালতে যাবেই।
এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ার টুইট করে বলেছেন, ‘রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে আজকের রায় গুরুত্বপূর্ণ। এনসিপি সাংসদ পি পি মহম্মদ ফয়জলের ক্ষেত্রেও একই রকম ঘটনা ঘটেছিল। আমি আমাদের রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপে এই নতুন প্রবণতার নিন্দা জানাই। যা আজকের পরিস্থিতি সকলকে উদ্বিগ্ন করা উচিত।’
ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, রাহুল গান্ধীকে দু’বছরের জেল ‘গণতন্ত্রের পক্ষে উদ্বেগের বিষয়’। তাঁর অভিযোগ, অ-বিজেপি সরকার ও নেতারা ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছেন। তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন নিজেই ‘ভাই’ রাহুলের সঙ্গে কথা বলেছেন। সঙ্গে বিজেপি’র বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক অধিকার পদদলিত করার অভিযোগ তুলেছেন।
যে আপ এতদিন কংগ্রেসের সঙ্গে কোনো এক অবস্থানে দাঁড়ায়নি, তারাও এবার রাহুলের এই সাজা ঘোষণা নিয়ে মুখ খুলেছে। কেজরিওয়ালের কথায়, ‘কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের মতপার্থক্য আছে। কিন্তু তা হলেও রাহুল গান্ধীকে এভাবে মানহানির মামলায় জড়ানো ঠিক নয়।
 

Comments :0

Login to leave a comment