বুধবার রাতের ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার মিছিল হলো মাথাভাঙ্গায়। শহরে নাগরিকদের পক্ষ থেকে এদিন বিকেলে মিছিল হয় নাট্যকর্মীর ওপর হামলার নিন্দা করে। আক্রান্ত নাট্যকর্মীকে দেখতে এদিন গণ আন্দোলনের নেতা জীবেশ সরকার, অনন্ত রায়, মহানন্দ সাহা সহ একটি প্রতিনিধি দল। মাথাভাঙ্গায় এসে আক্রান্ত নাট্যকর্মীর সঙ্গে কথা বলেন। নাগরিক মিছিলে পা-ও মেলান তাঁরা। পরে তিলোত্তমা চৌপথীতে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন মকসেদুল ইসলাম ও প্রসেনজিত সরকার।
বুধবার রাত দখলের ডাক দিয়েছিল ভারতীয় গণনাট্য সংঘ ও পশ্চিমবঙ্গ লেখক শিল্পী সংঘ। এই অনুষ্ঠানকে সফল করতে এক হাজারের বেশি মানুষ সমবেত হন তিলোত্তমা চৌপথীতে। প্রতিবাদের গান, কবিতা, নৃত্য আর রাজপথে ছবি আঁকেন শহরের শিল্পীরা। মানব বন্ধন ও মোমবাতি জ্বালিয়ে তিলোত্তমাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়। অধিকাংশ শিল্পী ও সাধারণ মানুষ বাড়ি ফিরে যেতেই তৃণমূলের শহর সভাপতি বিশ্বজিৎ রায়ের নেতৃত্বে একদল তৃণমূল কর্মী তিলোত্তমা চৌপথীতে প্রদ্যুৎ সাহাকে আক্রমণ করে। রাস্তায় আঁকা ছবি মুছে দেবার হুমকি দেয় তাঁকে। প্রদ্যুৎ সাহা ছবি মুছতে রাজি না হলে তাঁর ওপর আক্রমণের তীব্রতা বাড়তে থাকে। আক্রান্ত নাট্যকর্মীকে উদ্ধার করেন এক অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক, তাঁর মেয়ে ও সমবেত অন্যরা। এরপর তৃণমূলের উন্মত্ত কর্মীরা প্রথমে জল ঢেলে পরে রঙ ঢেলে রাস্তায় আঁকা ছবি মুছে দেয়। এমনকি তিলোত্তমার স্মৃতিতে জ্বালানো মোমবাতিও নিভিয়ে দেয়। হুমকি দেয় উদ্যোক্তাদের দেখে নেওয়া হবে।
রাতেই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবাদের অনুষ্ঠানে তৃণমূলী হামলার খবর সমাজ মাধ্যম ও বৈদ্যুতিন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামেন তৃণমূলের মুখপাত্ররা। তৃণমূলের কুনাল ঘোষ বৈদ্যুতিন মাধ্যমে বলেন, সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ আন্দোলনে সংযত থাকতে হবে। আরেক মুখপাত্র পার্থ প্রতিম রায় বলেন, মাথাভাঙ্গার ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এই আন্দোলনকে কেউ যদি প্রতিহত করে থাকে সেটা নিন্দনীয়।
মাথাভাঙ্গা থানার পুলিশ আসিব আকতার, শুভজিৎ ভৌমিক ও বিবেক সাহা নামে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছিল। ধৃত তিনজনই তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত। পুলিশ জামিন যোগ্য ধারা দেওয়ায় এদিনই তিনজন মহকুমা আদালত থেকে জামিন পেয়ে যায়। আক্রান্ত নাট্যকর্মী প্রদ্যুৎ সাহা এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এসব সাজানো ঘটনা। শুধু আমাকে মারধরের ঘটনাই নয়, শিল্পীদের আঁকা ছবি মুছে দেওয়া এবং তিলোত্তমার সম্মানে জ্বালানো মোমবাতি যারা নিভিয়ে দিল তাদের জামিন যোগ্য ধারায় আদালতে পাঠানোয় স্পষ্ট যে শাসক দলের সাথে পুলিশের যোগ আছে।’’
এই হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে কলকাতা থেকে ভারতীয় গণনাট্য সংঘের রাজ্য সম্পাদক দিব্যেন্দু চ্যাটার্জি বলেন, ‘‘নাট্যকর্মীর ওপর হামলা, রাস্তায় আঁকা ছবি মুছে দেওয়া এবং তিলোত্তমার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জ্বালানো মোমবাতি নিভিয়ে দেওয়া দুষ্কৃতীদের হুঁশিয়ারি দিচ্ছি, আপনারা সংযত হোন। পশ্চিমবঙ্গে আর হিংসা নামিয়ে আনবেন না। প্রশাসনের কাছে দাবি, দোষীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা হোক।’’
এদিকে দুই সংগঠনের জেলা সম্পাদক নিরুপম দত্ত এবং সভাপতি খগেন্দ্র নাথ সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘একজন শিল্পীকে রাত দখলের আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করার অপরাধে আক্রমণ করা, তিলোত্তমার জন্য জ্বালানো মোমবাতি নিভিয়ে ফেলার মত ঘটনা ফ্যাসীবাদের পদধ্বনি ছাড়া আর কিছু নয়। নাট্যকর্মীর ওপর হামলার ঘটনার মূল অপরাধীদের গ্রেপ্তারের দাবি নিয়ে সংগঠন জেলা পুলিশ সুপারের সাথে দেখা করে স্মারকলিপি দেওয়া হবে।’’
Rally Against TMC Attack
রাত দখলে হামলার প্রতিবাদে মিছিল মাথাভাঙ্গায়
×
Comments :0