ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের যেইভাবে ব্যারিকেডের সামনে ২৪-২৫ ঘন্টা বসিয়ে রাখা হয়েছে, সেটা আমাদের কাছে যন্ত্রণাদায়ক। কিন্তু তারপরেও ছাত্রদের নৈতিক জয় হয়েছে, কারণ তারা ব্যারিকেড পেরিয়ে পুলিশ কমিশনারের কাছে পৌঁছতে পেরেছে, এবং নিজেদের দাবি জানাতে পেরেছে।
মঙ্গলবার ডাক্তারি পড়ুয়াদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে এমনটাই জানালেন আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিহত চিকিৎসকের মা-বাবা।
সোমবার রাত থেক্র কলকাতায় অনড় অবস্থানে বসেন ডাক্তারি পড়ুয়ারা। কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের পদত্যাগের দাবিতে সারারাত ধরে অবস্থান চালান তাঁরা।সোমবার বিকেলে পুলিশ বাধ্য হয় ছাত্রদের দাবি মেনে নিতে। রাস্তার মাঝে থাকা ব্যারিকেড সরিয়ে দেয় পুলিশ। লালবাজারে পৌঁছয় ছাত্রদের প্রতিনিধি দল। সেই আন্দোলনকে কুর্নিশ জানিয়ে এদিন সংবাদ মাধ্যমের সামনে বক্তব্য রাখেন আরজি কর কান্ডে নিহতের মা এবং বাবা।
প্রসঙ্গত, ছাত্র প্রতিনিধি দল বিনীত গোয়েলের সঙ্গে দেখা করে তাকে পদত্যাগ করতে বলে। এর উত্তরে কলকাতা পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, তার বাহিনীর করা আরজি কর কান্ডের তদন্তে তিনি সন্তুষ্ট। কেবলমাত্র রাজ্য সরকার নির্দেশ দিলেই তিনি পদত্যাগ করবেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে নিহত চিকিৎসকের বাবা এবং মা উল্লেখ করেছেন, তাদের মেয়ে আরজি কর হাসপাতালের দুর্নীতিচক্রের শিকার। তাদের আশা, আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষকে জেরা করে দুর্নীতির সঙ্গে খুন ও ধর্ষণের বিষয়টির যোগসূত্র খুঁজে পাবে সিবিআই। যদিও তারা উল্লেখ করেছেন, খুনের তদন্ত মামলায় সন্দীপ ঘোষকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। খুন ও ধর্ষণের মামলায় একমাত্র গ্রেপ্তারি হয়েছিল কলকাতা পুলিশের হাতেই। ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার বর্তমানে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে রয়েছে। এই মামলায় সিবিআই সরাসরি এখনও অগ্রসর হতে পারেনি।
যদিও সিবিআই সূত্রে খবর, আরজি কর কান্ডে পেশাদার কায়দায় প্রমাণ লোপাটের জোরালো প্রমাণ রয়েছে। সেক্ষেত্রে আতশ কাঁচের তলায় রয়েছে কলকাতা পুলিশের ভূমিকা। তাই সরাসরি খুনের তদন্ত খুব ধীর গতিতে চলছে। কিন্তু এই খুনের সঙ্গে দুর্নীতির প্রাথমিক যোগসূত্র মিলেছে। সেই বৃহত্তর মামলায় সন্দীপ ঘোষকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ৫ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে ফের এই মামলার শুনানি। সেই শুনানিতে এই বিষয়টি আরও সবিস্তারে তুলে ধরা হতে পারে।
এদিন বিধানসভায় নারী সুরক্ষায় আনা নতুন আইনের ফিরিস্তি দিয়ে মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, তিনি ব্যবস্থা নিয়েছেন যাতে রাতে মহিলাদের নাইট ডিউটি না করতে হয়। মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে নিহত চিকিৎসকের মা বলেছেন, ছেলেদের জন্য ২৪ ঘন্টা ডিউটি, আর মেয়েদের জন্য ১২ ঘন্টা কাজ- এগুলো তো মেয়েদের আরও ছোট করা। বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ। কেন রাতের বেলায় মেয়েরা কাজ করতে পারবে না? সরকার ছেলে এবং মেয়ের মধ্যে বিভেদ না করে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করুক, যাতে রাতের বেলাতেও মহিলারা নিরাপদে কাজ করতে পারেন।
Comments :0