Md Salim

সামনে পঞ্চায়েত ভোট, গ্রামীণ সড়ক যোজনায় অর্থবরাদ্দ কেন্দ্রের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা? সেলিম

রাজ্য

দুর্নীতির অভিযোগে বন্ধ থাকা প্রকল্পের দরজা খুলে দিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের মুখে পশ্চিমবঙ্গে গ্রামীণ সড়ক যোজনার টাকা বরাদ্দ করল কেন্দ্রীয় সরকার। 
চলতি আর্থিক বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনা (পিএমজিএসওয়াই) প্রকল্পে ৫৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দের অনুমোদন এসে পৌঁছেছে রাজ্যে। ১৪৪টি রাস্তার কাজের জন্য চলতি আর্থিক বছরে এই প্রথম কেন্দ্রীয় সরকার অর্থ বরাদ্দ অনুমোদন করেছে। ৮৫৭ কিমি রাস্তা নির্মাণে এই টাকা খরচ হবে। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় ৬০ শতাংশ টাকা কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক বরাদ্দ করেছে। বাকি ৪০ শতাংশ টাকা রাজ্য সরকারকে বহন করতে হবে। 


রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা ৩ প্রকল্পের অধীনে ৬০০০ কিমি রাস্তা নির্মাণ করতে পারবে। গোটা প্রকল্পে খরচ হবে ৫ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার প্রকল্পে প্রথম কিস্তির টাকা রাজ্যের হাতে এল। পঞ্চায়েত ভোটের আগে কেন্দ্রের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের তরফ থেকে এই প্রথম গ্রামীণ সড়ক যোজনা প্রকল্পের অনুমোদন সহ অর্থ বরাদ্দকে রাজ্য সরকার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতেই দেখছে। রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তরের এক শীর্ষকর্তার কথায়,‘গত এপ্রিল থেকে রাজ্যে গ্রামোন্নয়নে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ বন্ধ হয়ে আছে। গ্রামীণ সড়ক যোজনার অনুমোদন আসার অর্থ বাকি দুই প্রকল্পেও জট খুলতে চলছে।’ ফলে ১০০দিনের কাজের টাকা নিয়েও আশাবাদী রাজ্য সরকার। 
গ্রামীণ রাস্তায় অর্থ বরাদ্দ প্রসঙ্গে রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার জানান,‘সত্যের জয় হচ্ছে। সব কিছু বন্ধ করে রাখা ছিল। প্রথম কিস্তির রাস্তার অনুমোদন এল। দেওয়া তো অন্তত শুরু হলো। বাকি প্রকল্পের টাকা আসবে এটা আশা করি।’ ভোটের মুখে রাস্তায় বরাদ্দ প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির সম্পাদক মহম্মদ সেলিমকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,‘আসলে কেন্দ্র ও রাজ্য মেকি যুদ্ধ করছে। আমরা জানতাম ভোট এগিয়ে আসলেই টাকা পাঠিয়ে দেবে। কিন্তু দুর্নীতি যেটা হয়েছে, সেটা বন্ধের জন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া হলো? আসলে কেন্দ্রীয় সরকার দুর্নীতিকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে কোথায়?’ 


বৃহস্পতিবারই কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের তরফ থেকে রাজ্যের পঞ্চায়েত সচিবের কাছে রাস্তায় বরাদ্দের অনুমোদনের চিঠি এসে পৌঁছেছে। চিঠিতেই উল্লেখ করা হয়েছে, রাজ্যের তরফে চলতি আর্থিক বছরের(২০২২-২৩) প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা(৩) প্রকল্পে রাস্তার প্রস্তাব গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকে এসেছে। গত ২৮ মে রাজ্যের পাঠানো প্রস্তাব নিয়ে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের অধীন এমপাওয়ার্ড কমিটি বিচার বিবেচনা করে। রাজ্য সরকারও কেন্দ্রের শর্ত পালন করা নিয়ে রিপোর্ট দিয়েছে। সব দিক বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা(৩) প্রকল্পে প্রথম পর্যায়ের জন্য অনুমোদন দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে চিঠিতে।
ঘটনা হলো, চলতি আর্থিক বছরে ১০০দিনের কাজ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা ও প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা প্রকল্পের কোনও টাকা কেন্দ্রীয় সরকার এরাজ্যে বরাদ্দ করেনি। অথচ এই তিন প্রকল্পই গ্রামের মানুষের স্বার্থে অত্যন্ত জরুরি। প্রকল্প বন্ধ হওয়ার অভিঘাত কতটা তা গত মঙ্গলবার ঝাড়গ্রামে সরকারি কর্মসূচিতে গিয়ে টের পেয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। আদিবাসী পাড়াতে মানুষের সঙ্গে কথা বলার সময়ই গ্রামের মহিলারা জানিয়ে দেন, গ্রামে কাজ নেই, বাড়িঘর নেই।

 
আগামী দু’থেকে আড়াই মাসের মধ্যেই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি নিতে ইতিমধ্যে শুরু করেছে শাসক দল। জেলা সফরে সরকারি সভা থেকে দলীয় কর্মসূচিতে মমতা ব্যানার্জি পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতির কথা বলছেন। দু’দিন আগেই জঙ্গলমহলে গিয়ে ১০০ দিনের টাকা বন্ধ নিয়ে সরব হয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জি। তারমধ্যেই গ্রামীণ রাস্তার প্রকল্পের প্রথম কিস্তির টাকা চলে এল। ১০০দিনের কাজের মতোই গ্রামীণ সড়ক যোজনা প্রকল্পেও দুর্নীতির তদন্তে রাজ্যে এসেছিল কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের টিম। রাস্তার কাজে দুর্নীতির সঙ্গে প্রকল্পের নাম বদল নিয়ে রাজ্য সরকারকে নিশানা করেছিল কেন্দ্রীয় পরিদর্শক দল। কেন্দ্রের শর্ত মেনে ফের রাজ্যে বাংলা সড়ক যোজনা নাম পরিবর্তন করে রাজ্য সরকার প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়। শেষবার কেন্দ্রীয় পরিদর্শক দলের রাজ্য সফরের আগে বাংলা সড়ক যোজনার সব সাইনবোর্ড পালটে দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের শর্ত মেনে মুছে দেয় বাংলা সড়ক যোজনার সাইনবোর্ড। তারপরই প্রথম কিস্তির টাকা রাজ্য পাঠালো কেন্দ্র।

 

Comments :0

Login to leave a comment