রাম মন্দির প্রতিষ্ঠাকে সামনে রেখে দেশজুড়ে অশান্তির পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে বিজেপি। এর মাধ্যমে রুজি রুটির ইস্যু থেকে নজর ঘুড়িয়ে মন্দির ধর্মস্থানের রাজনীতি করছে বিজেপি। আর সেই কাজে প্রত্যক্ষ ভাবে সহযোগিতা করছে তৃণমূলের মত দলগুলির প্রতিযোগিতামূলক সাম্প্রদায়িক রাজনীতি। মঙ্গলবার কলকাতার মুজফ্ফর আহ্মদ ভবনে সাংবাদিক সম্মেলন থেকে এমনটাই জানালেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম।
তিনি এদিন বলেছেন, রাম মন্দিরের উদ্বোধন ঘিরে বিহার, উত্তরপ্রদেশ হয়ে এরাজ্যেও বিষাক্ত সাম্প্রদায়িক বিভাজনের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে কোনও কোনও সংগঠন। রেল সহ বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে উঠে এসেছে, এই সময় ঘিরে সংখ্যালঘু অংশের মানুষ রেলের টিকিট বাতিল করছেন। বিভিন্ন সংগঠনের তরফে সংখ্যালঘুদের নিশানা করে হোয়াটস্যাপে প্রচার করা হচ্ছে, এই এক সপ্তাহ কেউ বাড়ি থেকে বেরোবেন না, ট্রেনে চড়বেন না। এবং করসেবকদের তাণ্ডব, বাবরি মসজিদ ধ্বংস, গুজরাট গণহত্যা সহ পূর্বের অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে তাঁরা যথেষ্ট আতঙ্কিত হচ্ছেন। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে সারা দেশের ৩৬৫টা শহরে কার্ফু জারি হয়েছিল। সব মিলিয়ে একটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে।
রাম মন্দির প্রতিষ্ঠার দিন মন্দিরে পূজো দিয়ে সংহতি মিছিলের ডাক দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি। এই কর্মসূচিকে নিশানা করে সেলিম বলেছেন, প্রতিযোগিতা মূলক সাম্প্রদায়িকতা যাঁরা করেন, তাঁরাও এই সুযোগে সক্রিয় হচ্ছেন। বছরের অন্য দিনের বদলে ওই দিনটিকেই বেছে নেওয়া হয়েছে পালটা উত্তেজনা ছড়ানোর জন্য।
সেলিমের বক্তব্য, আসলে এই সবটাই হচ্ছে ২০২৪’র লোকসভা নির্বাচনে রাম মন্দিরকে মূল নির্বাচনী ইস্যু বানানোর জন্য। এর উল্টোদিকে বামপন্থীরা সক্রিয় হয়েছেন মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, কর্মসংস্থানের মত ইস্যুগুলিকে সামনের সারিতে আনার জন্য। সেই জন্য ব্রিগেডের মাঠে যৌবনের ডাকে ব্রিগেড সমাবেশ হয়েছে। ব্রিগেডের সমাবেশকে সামনে রেখে ১ মাসের বেশি সময় ধরে লাগাতার প্রচার চালানো হয়েছে সাধারণ মানুষের ইস্যু নিয়ে। আগামী দিনেও হবে।
সেলিম জানিয়েছেন, দেশের পরিবেশকে আরও বিষিয়ে তুলছে আরএসএস’র অনুসারি সংগঠনগুলি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাম্প্রদায়িক প্রচার চালানো হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ, বিহারে প্রচারের ধরণ একরকম, পশ্চিমবঙ্গ কিংবা মিজোরামে প্রচারের ধরণ আবার অন্যরকম। নির্দিষ্ট রাজ্যের মাটি সাম্প্রদায়িক প্রচারের জন্য কতটা উপযুক্ত, সেটা বুঝে নিয়ে সেই ধরণের প্রচার চালানো হচ্ছে।
সেলিম এদিন বলেন, স্বাধীন ভারতের সংবিধানে বলা হয়েছিল, নতুন ভারতবর্ষ, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত হবে। সেই পথেই হাঁটছেন বামপন্থীরা। আর বিজেপি-আরএসএস চেষ্টা করছে এই গোটা ধারণাকে গুলিয়ে দিতে। চেষ্টা চলছে বহু সংখ্যকবাদকে প্রতিষ্ঠিত করার। যেখানে কেবলমাত্র সংখ্যাগুরুর শাসন চলবে। মণিপুরের ঘটনা প্রমাণ, এরফলে দেশে গুরুতর বিপদ দেখা দিতে পারে।
সিপিআই(এম) কর্মীদের সতর্ক করে সেলিম বলেছেন, উত্তেজনা রোখার জন্য সাংগঠনিক ভাবে সক্রিয় থাকতে হবে, বিশেষ করে মিশ্র এলাকাগুলিতে। কোনওরকম প্ররোচনায় পা দেওয়া যাবে না।
Comments :0