দুর্নীতি মুক্ত নিয়োগ কি হবে? এই প্রশ্ন মাথায় নিয়ে এসএসসি নবম দশমের নিয়োগ পরীক্ষা দিলেন চাকরি প্রার্থীরা। ২০১৬ সালে এসএসসি নিয়োগের দুর্নীতির কারণে সুপ্রিম কোর্টের চাপে পরীক্ষা নিতে বাধ্য হয়েছে এসএসসি। প্রায় ৯ বছর পর রাজ্যে এসএসসি পরীক্ষা হচ্ছে, ২০১১ সালে আগে যা প্রতিবছর হতো এবং সেই সময়ের নিয়োগ নিয়ে কোন দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসেনি।
রবিবার যেই পরীক্ষা হলো তাতে চাকরিহারা যোগ্য পরীক্ষার্থীরা যেমন বসছেন তেমন পরীক্ষায় বসেছেন নতুন চাকরি প্রার্থীরা। দুই দলের কাছেই একটাই প্রশ্ন তা হচ্ছে নিয়োগ কি সঠিক ভাবে হবে। ফের কোন দুর্নীতি সামনে আসবে না তো? বাতিল হবে না তো পরীক্ষা?
উল্লেখ্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এসএসসি ১৮০৬ জন অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করেছে কিন্তু এই তালিকা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।
তালিকায় প্রথমে ছিল ১৮০৪জনের নাম। শুধু রোল নম্বর ও নাম রয়েছে তালিকায়। কোনও জেলা, কোন স্কুলে তাঁরা এতদিন অবৈধভাবে শিক্ষকতা করলেন তার কোনও উল্লেখ নেই। এমনকি রাতে একটার পরে সেই তালিকা আবার বেড়ে যায়। যুক্ত হয় আরও দুটি নাম ও রোল নম্বর। এই তালিকা সামনে আসার পরেই নানান মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, সংখ্যা এত কম কেন? এর আগে হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক শুনানিতে যে সংখ্যার কথা জানা ছিল তার অর্ধেকেরও কম না রয়েছে কমিশনের এই তালিকা। দাগিদের এই তালিকাতেও অস্বচ্ছ্তা রয়েছে, অসম্পূর্ণ তালিকা-অভিযোগ তোলেন আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং সতীশচন্দ্র শর্মার বেঞ্চ কমিশনের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন— ‘সিবিআই’র তালিকায় তো আরও বেশি নাম ছিল। এখানে এত কম কেন? সব দাগিদের নাম কী তালিকায় রয়েছে?’
কমিশনের তরফে আইনজীবী এই প্রশ্নবাণের মুখে এদিন এজলাসে জানান-শীর্ষ আদালত যা নির্দেশ দিয়েছিল, সেটা মেনেই তালিকা প্রকাশ হয়েছে। শীর্ষ আদালত জানতে চায়-সব দাগিদের বাদ দেওয়া হয়েছে তো? জবাবে এসএসসি’র আইনজীবী বলেন, ‘হ্যাঁ, বাদ দেওয়া হয়েছে।’ সিবিআই’র তালিকার নামের সংখ্যা থেকে এসএসসি’র প্রকাশিত তালিকা আরও বেশি নাম ছিল। এখানে কেন এত কম? এক্ষেত্রে কমিশনের বক্তব্য, সেই তালিকার সবাইকে নিয়োগ করা হয়নি। যারা নিযুক্ত হয়েছিল, এই তালিকায় শুধু তাদের নামই আছে, যারা নিযুক্তদের মধ্যে দাগি। যদিও আদালত বলে, অনেক চিহ্নিত দুর্নীতিগ্রস্তদের নাম তালিকায় নেই। বিষয়টি খতিয়েও দেখতে বলা হয় কমিশনকে।
বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং সতীশচন্দ্র শর্মার বেঞ্চ রাজ্য সরকার এবং এসএসসিকে চরম ভর্ৎসনা করে স্পষ্টভাবে বলেছিল, নতুন নিয়োগ পরীক্ষায় কোনও দাগি প্রার্থীকে বসতে দেওয়া যাবে না। এই পরীক্ষার দিকে সুপ্রিম কোর্ট নিজে নজর রাখবে। দাগি প্রার্থীকে পরীক্ষায় বসালে তার ব্যবস্থা সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই গ্রহণ করবে।
তবে এসএসসি’ র প্রকাশিত দাগীদের তালিকায় সংখ্যা কম নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় কমিশনের অস্বস্তি আরো বেড়েছে। ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, সিবিআই এর আগে যে তালিকা দিয়েছিল বিস্তারিতভাবে, নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ ভাগ ভাগ করে সেই তালিকার অযোগ্য, দাগিদের সংখ্যার সঙ্গে কোনও মিল নেই। শুধু তাই নয়, নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশে প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ নিয়োগপ্রার্থীর তালিকা এবং সুপারিশের থেকেই বেশি সংখ্যায় নিয়োগের যে অভিযোগ ছিল সেই সংখ্যার কোনও উল্লেখ নেই। তাহলে তাঁদের নাম কোথায় মিশে আছে। পরিকল্পিতভাবেই কী এই ত্রুটিপূর্ণ তালিকা?
SSC Recruitment Exam
পরীক্ষা হলো, কিন্তু নিয়োগ হবে তো স্বচ্ছতার সাথে প্রশ্ন পরীক্ষার্থীদের মনে

×
মন্তব্যসমূহ :0