ধরলা নদীতে তলিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে মৃত্যু হল তিন নাবালকের! এদের মধ্যে দুজন ভাই-বোন এবং অন্যজন মামাতোভাই। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন একজন আরেকজনকে বাঁচাতে গিয়ে তিন জনেই মুহুর্তে তলিয়ে যায়। ওরা কেউই সাঁতার জানতো না। মর্মান্তিক এই ঘটনায় এলাকা জুড়ে এখন শোকের আবহ তৈরি হয়েছে।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মামার বাড়িতে মায়ের সাথে জোরপাটকির নগর গোপালগঞ্জে ঘুরতে এসেছিল বড়কৈমারীর যোগেন্দ্র অধিকারীর দুই সন্তান সুস্মিতা অধিকারী(১৩)এবং আকাশ অধিকারী(১১)। বৃহস্পতিবার দুপুরে দুই জন জানতে পারে মামাতো ভাই অঙ্কুশ বর্মন(১২)কে নিয়ে মামী প্রমিলা বর্মন বাড়ি থেকে সামান্য দূরে ধরলা নদীর হাসানের ঘাটে ঝিনুক তুলতে গিয়েছিল। মামী ভাইকে নিয়ে নদীতে ঝিনুক কুড়োতে গেছে জানতে পেরেই বাড়িতে কাউকে কিছু না জানিয়ে সুস্মিতা ও আকাশ সাইকেল নিয়ে পৌঁছে যায় ধরলা নদীর ধারে। মামী প্রমীলা বর্মন তখন জলে ডুব দিয়ে ঝিনুক কুড়োতে ব্যস্ত। ভাই অংকুশ দূরে নদীর পাড়ে বসে।
সুস্মিতা ও আকাশ মামীকে না বলেই নদীতে নেমে পড়ে। মামাতো ভাই অংকুশ তখন নদীর পাড়ে বসে। নদীতে জল যথেষ্ট গভীর ছিল। মুহুর্তেই সুস্মিতা ও আকাশকে ডুবে যেতে দেখে ১২বছরের অঙ্কুশ নদীতে নেমে পড়ে ভাই-বোনকে বাঁচাতে। কিন্তু কেউ কাউকে বাঁচাতে পারে নি। তিন জলই জলে ডুবে যায় মামী প্রমীলা বর্মন কিছু বুঝে ওঠার আগেই। প্রমীলা বর্মনের চিৎকারে ছুটে আসেন আশেপাশের লোকজনেরা। তারাই নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে তিনজনকে উদ্ধার করে। কিন্তু ততক্ষনে সুস্মিতা ও আকাশ মারা গেছে। তখনও বেঁচে ছিল ১২ বছরের অঙ্কুশ। তাকে দ্রুত মাথাভাঙা মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে এলেও শেষরক্ষা হয় নি। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকেও মৃত বলে ঘোষণা করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, ‘‘একজন আরেকজনকে বাঁচাতে গিয়েই তিনজন একসাথে জলে ডুবে গিয়েছিল। ওরা কেউই সাঁতার জানতো না।’’
অঙ্কুশের মা প্রমীলা বর্মন বলেন, ‘‘আমি বুঝতেই পারি নি ওরা এসে নদীতে নেমে পড়েছে। হঠাৎ দেখতে পাই আমার থেকে কিছুটা দূরে তিনজন ডুবে যাচ্ছে। চিৎকার করে লোকজন ডেকে নিজেও সাঁতরে ওদের কাছে যাই। ততক্ষনে তিনজনেই জলে তলিয়ে গেছে। চোখের সামনে তিনটে প্রাণ শেষ হয়ে গেল। কিছুই করতে পারলাম না।’’
দুই সন্তান ধরলা নদীতে ডুবে গেছে শুনে সুস্মিতা-আকাশের মা প্রমীলা অধিকারী নদীর পাড়ে যখন পৌঁছোন ততক্ষনে দুই সন্তানের দেহ নদী থেকে তুলে এনেছে। দূরে পড়ে আছে সেই সাইকেল, যেটা নিয়ে ভাইবোন নদীতে এসেছিল। কান্নায় ভেঙ্গে পড়া প্রমীলা অধিকারী বলেন, দুজনের পরীক্ষা শেষ। মামা বাড়ি আসার জন্য বায়না ধরেছিল। তাই এসেছিলাম ওদের নিয়ে। এখন বাড়ি ফিরবো দুই সন্তানের দেহ নিয়ে। মুহুর্তে সব ওলোটপালোট হয়ে গেল।
এদিকে ধরলা পাড়ের হাসানের ঘাটে একই পরিবারের তিন নাবালকের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে গোটা এলাকায়। তিন নাবালকের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য মাথাভাঙা মর্গে নিয়ে আসা হয়েছে।
Drowned
ধরলা নদীতে তলিয়ে ৩ নাবালকের মৃত্যু
×
Comments :0