ILLEGAL CRACKER FACTORY

দাপটের মনোভাব কেড়ে নিচ্ছে জীবনের নিরাপত্তা,
পরপর বিস্ফোরণে চক্রবর্তী

রাজ্য জেলা

bomb blast west bengal egra illegal cracker factory bengali news

বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে শিবকাশী থেকে বিশেষজ্ঞ এনে রাজ্যের বাজি শিল্পের অধুনিকীকরণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই মত কাজও শুরু হয়। কিন্তু ২০১১ সালের পর থেমে যায় সবটাই। শাসকের দাপট চলছে। তৃণমূল সরকার গ্রীণ বাজির তুলনায় বোমা শিল্পকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। তারফলে প্রতিদিন রাজ্যের কোথাও না কোথাও ঘটছে বিস্ফোরণ। সোমবার এমনটাই জানালেন সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী।

সোমবার মালদার জেলা শাসক অফিস অভিযানের ডাক দেয় মালদা জেলা বামফ্রন্ট। কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। অভিযান শেষে তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এগরার খাদিকুল দিয়ে শুরু। ফের এগরা। তারপর মুর্শিদাবাদ। রবিবার বজবজ, এবং সোমবার দুবরাজপুর। রাজ্যে বিস্ফোরণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রাণহানীও। অভিযোগ, অধিকাংশ জায়গায় বেআইনি বাজি কারখানার আড়ালে চলত বোমা কারখানা। সেখান থেকেই বিস্ফোরণ এবং মৃত্যু মিছিল। 

সুজন চক্রবর্তী বলেন, দাপটের শাসন চালানোর মনোভাব নিয়ে চলছে তৃণমূল। তাতে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলেও সরকারের কিছু যায় আসে না। বজবজের বিস্ফোরণ স্থল সংলগ্ন এলাকাতেও একচেটিয়া দাপট দেখিয়ে আসছে তৃণমূল। 

তিনি বামফ্রন্ট সরকারের বাজি শিল্প সংক্রান্ত উদ্যোগের পরিকল্পনা সবিস্তারে তুলে ধরে বলেন, তৎকালীন রাজ্য সরকার বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধ করে গ্রীন বাজি তৈরির পরিকাঠামোয় জোর দেওয়ার কাজ শুরু করেছিল। সেই মতো তামিল নাডুর শিবকাশি থেকে বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আসা হয় এরাজ্যের বাজি শিল্পের সঙ্গে যুক্তদের ট্রেনিং দেওয়ার জন্য। এরাজ্যের যুবদেরও ভিন রাজ্যে পাঠানো হয় কাজ শিখে আসার জন্য। একইসঙ্গে বাজি হাব কিংবা বাজি ক্লাস্টার তৈরির বিষয়েও চিন্তা ভাবনা শুরু হয়।  কিন্তু ২০১১ সালের পরে সমস্তটাই বন্ধ হয়ে যায়। 

সুজন চক্রবর্তী প্রশ্ন তুলেছেন, কেন এই প্রক্রিয়াটা বন্ধ করা হল? 

বাজি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মহলের বক্তব্য, রাজ্যে চলা ১০ হাজার বাজি কারখানার মধ্যে লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ৬৩টির। এর থেকেই স্পষ্ট, রাজ্যে রমরমা চলছে বেআইনি বাজি কারখানার। ২০০৭ সালে কেন্দ্রীয় বিস্ফোরক আইনে বদল আসে। ২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্টও বাজির পুরনো ফর্মুলা বাতিল করে নতুন ফর্মুলায় গ্রীণ বাজি তৈরির নির্দেশ দেয়। কিন্তু এর কোনোটাই মানা হচ্ছে না রাজ্যে। এ রাজ্যে অধিকাংশ বাজি প্রস্তুতকারক অত্যন্ত গরীব। তাঁদের পক্ষে ব্যক্তিগত উদ্যোগে নতুন ফর্মুলা কেনা, কিংবা জমি কিনে পৃথক বাজি কারখানা তৈরি সম্ভব নয়।  সেক্ষেত্রে বাজি শিল্পের আধুনিকীকরণের জন্য প্রয়োজন সরকারী উদ্যোগ। 

রাজ্যের বাজি প্রস্তুতকারকদের সংগঠন উৎসব সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক গোবিন্দ চক্রবর্তীর দাবি, মুখ্যমন্ত্রীকে একাধিকবার চিঠি দিয়ে বাজি হাব তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার আবেদন জানানো হয়। একমাত্র বাজি হাব তৈরির মাধ্যমেই এই সঙ্কট মোকাবিলা সম্ভব। কিন্তু এখনও অবধি সরকারের তরফে চিঠির প্রাপ্তিটুকু স্বীকার করা হয়নি। 

বাজি প্রস্তুতকারকদের দাবি, হাব তৈরি হলে যেমন একদিকে সেখানে নিয়ম মেনে বাজি তৈরি সম্ভব, তেমনই বেআইনি বাজি কারখানার আড়ালে বোমা তৈরিও বন্ধ করা সম্ভব। একইসঙ্গে বাজি হাব হলে কর্মসংস্থানের বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে।

যদিও একের পর এক বিস্ফোরণের ঘটনায় নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছে রাজ্য। সূত্রের খবর, সোমবার মন্ত্রীসভার বৈঠকে সাম্প্রতিক বিস্ফোরণের ঘটনাগুলি নিয়ে আলোচনা হয়। প্রশাসনের একাংশ ফের একবার বাজি ক্লাস্টার তৈরির বিষয়টি সামনে এনেছে বলে খবর। 

যদিও ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, রাজনৈতিক কারণেই এই সিদ্ধান্তে আসতে বড্ড দেরি করে ফেলেছে তৃণমূল সরকার । এই ১২ বছর দেরির মাশুল গুনেছে অন্ততপক্ষে কয়েকশো প্রাণ। 

Comments :0

Login to leave a comment