STORY — DEBASHIS BHATTACHARJEE / SHARAD NATUNPATA

গল্প — টুনির পুজো / শারদ নতুনপাতা

ছোটদের বিভাগ

STORY   DEBASHIS BHATTACHARJEE  SHARAD NATUNPATA

শারদ নতুনপাতা

গল্প

টুনির পুজো

দেবাশিস ভট্টাচার্য  

      খালপাড়ের পাশে সারি সারি দোকান।দখল করা জমিতে গড়ে ওঠা দোকানগুলো বেশির ভাগই সব প্লাস্টিকের দেওয়াল,প্লাস্টিকের ছাদ।একটা দুটো অবশ্য ইঁট দিয়ে গেঁথে মাথায় টিন চাপানো।বলাই সাহার মুরগির  দোকানটা লাইনের সব শেষে। সামনে একটা তারের খাঁচা। এই দোকানের পর হাত চারেক জমি ছেড়ে উঁচু দেওয়াল।ভিতরে ইলেকট্রিক টান্সফর্মা।দেওয়ালে বৈদ্যনাথ দাঁতের মাজনের বিঞ্জাপণ।ওই হাত চারেক জমিটা ঢালু হয়ে নেমে গেছে নদীর দিকে।লোকে সেখানে পেচ্ছাপ করে।

    বনমালী মারা গেছে কোভিডে।বাজারে আনাজ বেচতো।বনমালীর জীবিকা শরীর ছাই হয়ে গেল ওর বৌ পারুলের চোখের সামনে। পারুল এখন বাড়ি বাড়ি  কাজ করে। কোভিডের সময় যে ছেলেগুলো রাস্তায় ছিল তারা বনমালীর মেয়ে টুনির বই-খাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। ক্লাস এইটে পড়ে টুনি। পারুলের বুড়ো  শ্বশুর তক্তপোশে শুয়ে গোঁ গোঁ করে।মৃত্যুর খুব কাছে পৌঁছলে এরকম শব্দ করে মানুষ।

   সেদিন কাজ করে খালপাড় দিয়ে  ফিরছিলো পারুল। ওই পেচ্ছাপ করা জায়গাটা দেখে একটা বুদ্ধি  এলো  মাথায়। এখনো সপ্তা দুয়েক  বাকি  পুজোর। ওই নোংরা জায়গাটা ঠিক ঠাক করে একটা দোকান দেবে  সে।চাউমিন,এগরোল এইসবের দোকান। পুজোর সময় বেশ জমজমাট থাকে রাস্তাটা।

   বলাই সাহাকে সে কথা বলতে বলাই আপত্তি করলো না।সবসময় পেচ্ছাপের গন্ধ। পারুল  দোকান দিলে খারাপ কি!

    সামনের তে-মাথার মোড়ে নতুন যে ফ্ল্যাট হয়েছে, তার তিন তলায় পর্ণা বৌদিদের বাসন মাজে পারুল। দাদা বৌদি দুজনেই চাকরি করে। পারুলের কথা শুনে হাজার খানেক টাকা দিয়েছে বৌদি। নিজের হাতে খালের মাটি তুলে পেচ্ছাপের ওপর ফেলেছে পারুল। তারপর পঞ্চা ঘরামিকে দিয়ে বাঁশ পুঁতে মাচাকরে, তার ওপর কালো প্লাস্টিকের চাল চাপিয়ে দিয়েছে।

     সেদিন  তিনবাড়ি কাজ সেরে পারুল সবে ফিরেছে ঘরে। টুনি এসে বললো, "শিগগির চলো মা,আমাদের দোকান ভেঙে দিচ্ছে।"
    --মানে "
     হ্যাঁগো,বলাইকাকা খবর দিলো।

    পারুল ছুটতে ছুটতে এসে  দেখলো,তার বাঁশগুলো উপড়ে ফেলে গাঁথুনি হচ্ছে সেখানে। নিচ থেকে পিলার তুলে ঢালাই দিচ্ছে মিস্তিরি। সেই কাজের তদারকি করছে লাট্টু। হাত কাটা লাট্টু।

     পারুল বললো, "আমার দোকান ভাঙলে কেনো?"
      --- তোর বাপের দোকান রে শালী।  চল!'
       চল মানে! আমি আগে এর দখল দিয়েছি!
     ---শালী সারা বাংলা আমাদের  দখলে রে!ফট্ এখান থেকে!

     বলাই সাহা বলার চেষ্টা করলো, "ওরা গরীব। পুজোর সনয়--------"

    লাট্টু একটা পুরুষাঙ্গকে নোংরা ভাষায় উচ্চারণ করে বললো,"শালা  মেয়েদের এখন কত রকম ভাতা দিচ্ছে জানো?শালা বেইমান।"জায়গাটা অনেক আগেই টার্গেট করেছিলাম  আমি।  জেলে ছিলাম বলে করতে পারিনি।"
      -- কিন্তু পারুল নিজের হাতে নোংরা ঘেঁটে - - - - 
      --তুমি শালা মুরগী  কেটে ছাল চামড়া গঙ্গায় ফেলছো।বেশি  কথা বললে----"

                     (২)

     আজ নবমী।বন্ধুদের সাথে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছে টুনি। ঠাকুর দেখে ফেরার সময় খাল পাড়ের রাস্তাটা দিয়ে আসছিল ওরা। টুনির বন্ধু বললো, "চল টুনি। ওই নতুন দোকানটা৷ থেকে  আইসক্রিম খাই।"
     টুনি দেখলো দোকানটার দিকে। তাদের বাঁশ বাঁখারির ছোট্ট দোকানটা এখন ঝলমল করছে আলোয়।ঠাণ্ডা বাক্সের ভেতর থেকে দেখা যাচ্ছে নানা ধরনের আইসক্রিম। ক্ষণে ক্ষণে আলোর রঙ পাল্টে পাল্টে যাচ্ছে দোকানের ভেতরে। 
     টুনি বললো , "না তোরা খা।"
     আজ আমি খাওয়াবোরে।
     -- বললাম তো,তোরা খা।
    দল থেকে ছিটকে পালিয়ে গেলো টুনি।

      ঘরে আসতেই পারুল জিঞ্জাসা করলো, "কি হয়েছেরে টুনি! কাঁদছিস কেনো!"
     -- এক টুকরো পেচ্ছাপের মাটিও আমাদের দিলো না মা!
      -- মাটি, মানুষ দুজয়গা থেকেই এখন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছেরে টুনি।

Comments :0

Login to leave a comment