অনির্বাণ দে: হরিহরপাড়া
বাড়ি ফেরার তাড়া। তাই কথা বলার সময় নেই আমির শেখের।
‘তাড়া কেন?’
উত্তর এল, ‘ভোট’।
‘গ্রামে ভোট মানে তো গণতন্ত্রের উৎসব।’
‘তাই বুঝি?’ এবার উত্তর আরও থমথমে।
‘ভোট উৎসব ছিল। আমরাও সবাই মিলে ভোট দিতে গিয়েছি। সব দল একসাথে। সবাই নিজেদেরই লোক। এসব তো পুরানো কথা। এখন রাস্তাঘাটে ঝামেলা। তাই, বাড়ি ফিরতে হবে জলদি’, পাশ থেকে বলছেন সাথে থাকা সেলিনা খাতুন। ঘটনাস্থল হরিহরপাড়ার স্বরূপপুর বাসস্টপ। দু’জনেই গিয়েছিলেন বহরমপুর। জমির সমস্যায় জেরবার তাঁরাও।
জমির অধিকার অর্জনে সাহসী লড়াই লড়েছিলেন হরিহরপাড়ার মানুষ। সেই জমিই মাথাব্যথা।
কেন? উত্তর দিচ্ছেন বছর বাষট্টির প্রবীর মণ্ডল। যেমন তাঁর নিজের চাষের জমি। তিরিশ বছর ধরে চাষ করছেন। সেই জমির মালিক নাকি বহরমপুরের এক বাসিন্দা। এমনটাই বলছে, রাজ্য সরকারের ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের রেকর্ডও। রাতের অন্ধরের বদলে যাচ্ছে জমির অধিকার। আর সবটাই হচ্ছে বিডিও অফিস থেকে, গ্রাম পঞ্চায়েতের অফিস থেকে। বাস্তব অভিজ্ঞতা গ্রামের মানুষের।
২০১৮ সালে লুট হয়েছে পঞ্চায়েত। সেই পঞ্চায়েত থেকেই এবার লুটের মুখে জমিও।
পঞ্চায়েত ফেরত এনে জমির অধিকার পুনরুদ্ধার করতে চাইছে গ্রাম। লুটের শাসন কায়েম রাখতে মরিয়া তৃণমূল। চলছে সন্ত্রাসও। লুট হওয়া পঞ্চায়েত ফেরত চাইছে গ্রাম। সন্ত্রাস সামলেই চলছে সাহসী প্রচার।
সাহসী প্রচারের সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন বামফ্রন্ট মনোনীত সিপিআই(এম) প্রার্থীরা।
তৃণমূল মানেই লুট, এটা মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। তাই এবার গ্রামের মানুষ ঠিক করেছিল মনোনয়ন দেবেই। পঞ্চায়েতে লড়তেই হবে।
প্রাথমিকভাবে সেই কাজ হওয়ার পর, চাপ বেড়েছে তৃণমূলের।
মরিয়া তৃণমূল। হরিহরপাড়া ব্লকের গ্রামে তাই ঘুরছে তৃণমূল ব্লক সভাপতি, বিধায়কের কনভয়।
পাঁচ বছরে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির কাজ নিয়ে চুপ তৃণমূল। কী করেছে জেলা পরিষদ, কোথাও নেই তৃণমূলের প্রচারে।
কী আছে প্রচারে? সবাই তৃণমূল। শুধু এই আস্ফালন।
সবাই তৃণমূল, এটা কেমন কথা? প্রশ্ন হরিহরপাড়ার মানুষের। জানাচ্ছেন, জোর করে কাউকে তৃণমূল বানিয়ে দেওয়া যাবে না।
এদিন হরিহরপাড়ায় ৭২নম্বর মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ আসনে সফিকুল ইসলাম,
৫নম্বর হরিহরপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির আসনে আব্দুল মালেক, ৬নম্বর হরিহরপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির আসনে সেলিনা খাতুনের সমর্থনে স্বরূপপুর অঞ্চলের স্বরুপপুরেই প্রচার চলে। আগেও প্রচারে বাধা দিয়েছে তৃণমূল। কিন্তু আর নয়, জানাচ্ছেন গ্রামের মানুষ। ফেরত চাই পঞ্চায়েত।
জেলা পরিষদ আসনে প্রার্থী সফিকুল ইসলামের কথায়, ‘মানুষই বলছেন, দাঁড়িয়েছি যখন তৃণমূলকে হারাতেই হবে।’
প্রতিদিনের প্রচারে শক্তিশালী হচ্ছে মানুষের অঙ্গীকার। মানুষের অধিকারের লড়াইয়ে শক্তিশালী করতে বাড়ি, বাড়ি প্রচারের সাথেই মুর্শিদাবাদজুড়ে চলছে মিছিল, পথসভা।
Comments :0