শঙ্কর ঘোষাল
ইনসাফ যাত্রা জনজোয়ারে পরিণত হলো কেতুগ্রামে। তারপর সেই মিছিল ভাসিয়ে দিল কাটোয়ার শ্রীখন্ডগ্রামও।
এখানেই প্রস্তাবিত কাটোয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জমিদাতাদের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা বলেছেন, আমাদের ঘরের ছেলে-মেয়েদের স্বপ্ন ভেঙে গেছে, শিল্পের জমিতে এখন গোরু চড়ছে। তৃণমূল সরকারে থাকলে একটিও শিল্পও হবে না। শুধু শিল্পের নামে ধাপ্পা চলবে।
জমিদাতা প্রসাদ মাজি বলেছেন, ‘‘এই জমিতে সরকার যদি শিল্প না করে তাহলে বড় প্রতিরোধের জন্য যেন তৈরি থাকে’’।
সিঙ্গুর থেকে শিল্প বিদায় করে কাটোয়াতে রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থা এনটিপিসি-কেও তাড়াতে চায় রাজ্য। তাতেই আশঙ্কায় এখানকার জমিদাতারা। শিল্পের জন্য তাঁরা স্বেচ্ছায় ৫৫৬ একর জমি দিয়েছিলেন সরকারকে। তারপর এনটিপিসি সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে আরো ১৯৮একর জমি কিনেছিল।
সেই জমিতে শিল্প না করে প্রোমোটারদের দিয়ে আবাসন করানো হলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জমিদাতারা। তাঁরা বলেছেন, এনটিপিসি’র ঐকান্তিক প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও ১২ বছরে প্রকল্প হয়নি কেন। ইনসাফ যাত্রায় সভায় এসে শ্রীখন্ডতে একথাই বললেন জমিদাতা নবকুমার ঘোষ, বিদ্যুৎ ঘোষ, প্রসাদ মাজি, নারায়ন চন্দ্র দত্তরা।
তাঁরা বলেছেন, রাজ্যে কোন নতুন শিল্প নেই, তাই কর্মসংস্থানও নেই। এখানকার ছেলেরা দলে দলে চলে যাচ্ছেন অন্য রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে কাজের সন্ধানে।
কাটোয়াতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য ৫৫৬ একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল বামফ্রন্ট সরকার। প্রায় হাজারের বেশি কৃষক এই জমি দিয়েছিলেন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ে তুলতে। মূলত কোশিগ্রাম, শ্রীখন্ড, গোয়াই পঞ্চায়েত এলাকার এই জমি অধিগ্রহণ করে বামফ্রন্ট সরকার। এই জমি কৃষকদের সাথে আলোচনা করেই দাম দেওয়া হয়েছিল। তাঁরাও স্বেচ্ছায় শিল্পের জন্য জমি দিয়েছিলেন। ক্ষতিপূরণ কত দেওয়া হবে তা নিয়ে কমিটি তৈরি হয় বিরোধীদের নিয়ে। জমি অধিগ্রহণের সময় তৃণমূল, বিজেপি সহ যত বিরোধী দল ছিল জোট বেঁধে বাধা দিয়েছিল।
শুধু কৃষক নন, খেতমজুররাও যাতে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পান তার জন্য ২০টি বুথে সার্ভে করে ১৫০০ খেতমজুরের নাম চিহ্নিতও করা হয়। তার মধ্যেই ২০১১’র নির্বাচনে তৃণমূলের সরকারে আসীন হয়।
এদিন ইনসাফ যাত্রায় মীনাক্ষী মুখার্জি বলেছেন, ‘‘এখানে শুধু তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রই হতো না, তার অনুসারি হিসাবে সিমেন্ট শিল্প ও চিনিকলও গড়ে উঠত। শিল্পতালুকও গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এএনটিপিসি জমিদাতাদের পরিবারের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে প্রশিক্ষণও শুরু করেছিল। তাঁদের স্বপ্ন চুরমার করেছে তৃণমূল।’’
কোশিগ্রামের কৃষক দেব কুন্ডু ইনসাফ যাত্রায় বলেছেন, ‘‘এখানে শিল্প হলে ব্যবসা, বাণিজ্য, অর্থনীতি বদলে যেত’’। শ্রীখন্ডের নবকুমার ঘোষ বলেছেন, ‘‘আমরা জেনেছি এনটিপিসি’র দেশে ২৭টি প্রকল্প আছে। শুধুমাত্র তৃণমূল সরকার ক্ষমতাই থাকার জন্যই এই শিল্পটা হতে পারলো না’’।
Comments :0