দীপশুভ্র সান্যাল, জলপাইগুড়ি
সামনেই বড়দিন। আর বড়দিন মানেই জলপাইগুড়িবাসীর কাছে সেন্ট মাইকেল অ্যান্ড অল এঞ্জেলস চার্চ। প্রত্যেক বছর বড়দিনের আগে সেজে ওঠে এই গির্জা। আজও তার জানালায় রোদের তাপ পড়লেই ইংরেজ আমলের স্মৃতিগুলো ভেসে উঠে, মনে হয় যেন অতীতের চিহ্নেরা নিজেদের গল্প বলছে।
ব্রিটিশ স্থাপত্যের স্মৃতি রয়েছে এই গির্জায়। রয়েছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনে পরাধীন ভারতের স্মৃতিও। মুনাফার জন্যই জলপাইগুড়ি এবং সংলগ্ন অঞ্চলে চা বাগানের পত্তন করেছিল ব্রিটিশ বণিকরা। আবার জলপাইগুড়িতে চা শিল্প এবং বাণিজ্যের চিত্র বদলে যাওয়ার ইতিহাসও রয়েছে।
১৮৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই গির্জাটি ইংরেজদের হাতে তৈরি। এর মধ্যে রয়েছে দেড়শো বছরের পুরনো এক ঘন্টা, যা এখনও নিয়মিত বেজে চলে। চার্চের কাঁচের মধ্যে সাজানো নকশাগুলিও এক ধরনের ইতিহাসের সাক্ষী। সূর্যের আলো পড়লেই কাচের মধ্যে ফুটে ওঠে যিশু খ্রীষ্টের ছবি এবং ইংরেজদের বিভিন্ন রানির ছবি, যা আগের দিনের শিল্পকলা এবং সংস্কৃতির এক অনবদ্য নিদর্শন। তবে, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এই স্মৃতিসৌধগুলো কিছুটা অবহেলিত।
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনে ব্রিটিশ চা বণিকদের উদ্যোগে দার্জিলিং ও ডুয়ার্সের চা বাগান গড়ে ওঠে। সেসময় উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ চা বাগানের হেড অফিস গড়ে উঠেছিল ডিভিশনাল শহর জলপাইগুড়িতে। স্বাধীনতার পরে বাগান গুলি কিনে নেন ভারতীয় চা ব্যবসায়ীরা। জলপাইগুড়ি অর্থনীতি সেসময় প্রভাবিত হতো চা বাগানের দ্বারা। স্বাধীনতার পরেও নয়ের দশক পর্যন্ত এই পরিস্থিতি ছিল জলপাইগুড়ি জেলায়। ধীরে ধীরে বাগানগুলি স্থানীয় যা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করে দেয় অন্য মালিকদের হাতে। চা বাগানের অফিসগুলো ধীরে ধীরে চলে যায় কলকাতায়। ভেঙে পড়ে জলপাইগুড়ির অর্থনীতি।
এই চার্চ ব্রিটিশ শাসনেরও স্মৃতি বইছে।
চার্চের আশেপাশে রয়েছে বহু ইংরেজ চা বণিকের সমাধি।
Comments :0