নীলকণ্ঠ
কমল গোস্বামী
সেদিন সন্ধ্যাবেলায় ঝির ঝির করে বৃষ্টি পড়ছিল। সাথে সামান্য বাতাস। সেদিন ধরনা মঞ্চে কেউ ছাতা মাথায়, প্ল্যাস্টিক মাথায় দিয়ে, কেউবা কাপড়ের আঁচল মাথায় দিয়ে নিজেদের রক্ষা করছিল। সুবীর হঠাৎ চঞ্চল হয়ে উঠল, পারিমতা না? পারমিতা একসময় ধরনা মঞ্চে ওদের সাথী ছিল। দিন দশেক হল সে বাবা – মা’র পীড়াপিড়িতে সে মঞ্চ ছেড়ে চলে গেছিল। সুবীর উঠে দাঁড়াল, এগিয়ে গেল— একি মিতা তুমি? হ্যাঁ সুবীর আমি তোমার অতীতের মিতা। সুবীর অবাক হয়ে প্রশ্ন করল, কি বলতে চাইছ তুমি? বাবা ঠিক করে ফেলেছেন, আমার বিয়ে দেবেন তিনি। তুমি আমাকে ভুলে যাও। চিরদিন আমি তোমাকে মনে রাখব। সুবীর কিছু সময় চুপ করে থেকে বলল, সেদিন পুলিশ আমাদের উপর লাঠিচার্জ করে, আমাদের অনেককে ধরে নিয়ে গেল, সে রাতেই মোবাইলে খবর দেখে বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লেন, তিনি আজও শয্যাশায়ী।
থাক সে কথা। এই সংগ্রামের মঞ্চে তোমাকে সংগ্রামের সাথী হিসাবে পেয়ে ভালোবেসেছিলাম। আজ তুমি আমার প্রেম, ভালোবাসা, গান সব নিয়ে চলে যাবে? তখন বৃষ্টির জল আর চোখের জল মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। সুবীর আপন মনে বলে আজ আমাদের সবাইকে নীলকণ্ঠ হতে হবে। পারমিতা ধীর গলায় বলে কিছু বলছ সুবীর? সুবীর আপন মনে বিড় বিড় করে বলে ‘নিষিদ্ধ আলোর বৃত্তে এসে একা হয়ে যায় মধুমাস/ অন্ধকারে যেমন নির্বাসনে থাকে পৃথিবীর প্রাচীন ঘাস...’
Comments :0