মুক্তধারা
অন্যকথা
অসীম সম্পর্কে কিছু কথা
অনির্বাণ দাস
অসীম বলতে কি বোঝায় ? অসীম আসলে কি, অসীম কত রকমের? অসীম বলে কিছু আছে কিনা? অসীম বিষয়ে এমন ধরণের নানা প্রশ্ন বহু বছর ধরে চলে আসছে, এমন কি হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসছে। সঠিক উত্তর অথবা শেষ উত্তর আজও মেলেনি। কোনদিন মিলবে কিনা তাও আজ আর কেউ বলতে পারছে না। কেউ কেউ উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছেন, কিন্তু কেউই কিন্তু বলছেন না যে তার উত্তরটাই পরিপূর্ণ বা শেষ উত্তর। বলা যেতে পারে এখনও পর্যন্ত তাই ঠিক, পরে পালটাবে কিনা জানি না। এখনও পর্যন্ত অঙ্কবিদরা অসীম সম্পর্কে যে ধারণা গড়ে তুলেছে তা সংক্ষেপে চর্চা করি।
সাধারণ লোকের অসীম খুবই সাধারণ। কোনও একটি পিঁপড়ের তুলনায় হিমালয় পর্বত অসীম। আবার হিমালয় পর্বতের তুলনায় সৌরমন্ডলের আয়তন অসীম। সৌরমন্ডলের তুলনায় নক্ষত্রপুঞ্জের আয়তন অসীম, নক্ষত্রপুঞ্জের আয়তন অসীম, নক্ষত্রপুঞ্জের আয়তনের তুলনায় অতি নক্ষত্রপুঞ্জের আয়তন অসীম, অতি নক্ষত্রপুঞ্জের তুলনায় অতি অতি নক্ষত্র পুঞ্জ অসীম। এইভাবে অতি-অতি-অতির দিকেই চলতে থাকে , যার কোনও দিন শেষ নেই, সেই অসীম। এ অসীম সাধারণ, খুবই সাধারণ, দুর্বোধ্য অসীম নয়, ভয়াবহ অসীম নয়, অঙ্ক শাস্ত্রের অসীম নয়। একেবারে সাদামাটা তুচ্ছ। সাধারণ ব্যবহারিক কাজে যে অসীম নিয়ে আমরা নাড়াচাড়া করি তা বোঝা যায়, ধরা যায়- এগুলি ব্যবহারিক অসীম।
অঙ্কবিদ লোবাচেভস্কি, বলিয়াই, রিম্যান, গ্রাসম্যান, আইনস্টাইনের আবিষ্কারগুলিতে আমরা জানতে পেরেছি বিশ্বে টাইম, স্পেস সবই বাঁকা। এ বিশ্বে সরলরেখা বলে কিছুই নেই।
আমাদের স্যার (জেঠু) বিষয়টা বোঝায় এমন ভাবে - কেউ যদি নাক বরাবর প্রচন্ড বেগে চলতে থাকেন, তার সেই চলার শেষ হবে না, অনন্তকাল ধরেই চলবে, চলার শেষ দিন আর আসবে না, তবে মজার বিষয় হল এভাবে চলতে চলতে যাত্রা শুরুর জায়গায় চলে আসবে। বারবার চক্রাকারে ঘরে চলতে থাকবে, কিন্তু চলার পথটা অসীম, কিন্তু চক্রাকার বলে সসীম।এটা একই সাথে অসীম এবং সসীম, গণিতের ভাষায় পরিমাপযোগ্য অসীম। বাস্তবে ফুলের মালার মত, শুরুও নেই শেষও নেই।
স্যার আমাদের (জেঠু) বলে - অঙ্কবিদদের অঙ্ক চিন্তায় অনুভূতিতে নাকি খুবই জটিল, ভয়াবহ এবং দুর্বোধ্য এক অসীম আছে, এর ব্যবহার নেই, বাস্তবে নেই, চেহারায় নেই, এই আছে এই নেই, অঙ্কের যোগ-বিয়োগের নিয়ম কিছুই খাটে না, কি অদ্ভুত !
তারপর স্যার (জেঠু) অসীম নিয়ে মজার একটা হিসাব দেখাল। অসীম লেখা হয় α চিহ্ন দিয়ে। তাহলে , α + α = α, আবার α – α = α, যোগ বিয়োগের নিয়ম খাটল না।
আবার, ১ – ১ + ১ – ১ + ১ – ১ + ১ – ১ + ১ – ১ + ১ ...... কত হবে?
(১ – ১) + (১ – ১) + (১ – ১) + (১ – ১) + (১ – ১) + ......
= ০ + ০ + ০ + ০ .........= ০
অন্যভাবে, (১+১+১+১... ) – (১+১+১........) = α + α = α
তাহলে, আগে বিয়োগ পরে যোগ করলে উত্তর শূন্য, আগে যোগ পরে বিয়োগ করলে উত্তর α ।
আর নিতে পারছি না। এই ছোট মাথায় আর কত ধরবে ?
Comments :0