অন্যকথা
ভাইফোঁটার প্রাচীন কাল্পনিক উপকথা
তপন কুমার বৈরাগ্য
মুক্তধারা
ভাইফোঁটা কার্তিকমাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে অনুষ্ঠিত
হয়।
এটা প্রীতির উৎসব।বঙ্গে ইহা ভাইফোঁটা বা ভ্রাতৃদ্বিতীয়া
নামে পরিচিত। বাংলার বাইরে অনেকে ইহাকে ভাইদুজ বলে। বোনেরা ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেবার সময় বলে ওঠে---
ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা
যম দূয়ারে পড়লো কাঁটা
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা।
এইদিন বোন ভাইকে ফোঁটা দিলে ভাইয়ের আর মৃত্যু
ভয় থাকে না।এটা একটা মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান।ষোড়োশপচারে
ঘিয়ের প্রদীপ জ্বেলে ধান দূর্বা সহকারে ,ভাইয়ের পছন্দ মতন
মিষ্টি দিয়ে, এই মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান পালিত হয়।
এইদিন যমুনার জলে স্নান করলে সর্ব বিপদ থেকে রক্ষা
পাওয়া যায়। ভাইফোঁটা সম্পর্কে দুটো প্রাচীন কাহিনি
আছে ।তার একটা হলো ধরিত্রীর পুত্র ছিলেন নরকাসুর।
তিনি ছিলেন স্বর্গ- মর্ত্য-পাতালের অধিশ্বর।তিনি ছিলেন
অত্যাচারী শাসক। শ্রীকৃষকে দ্বারকা নগরটা বিশ্বকর্মা তৈরী করে
দিয়েছিলেন।এই রকম একটা নগর নরকাসুর বিশ্বকর্মাকে
তৈরি করে দিতে বললেন।বিশ্বকর্মা কিছুতেই রাজি হলেন
না।নরকাসুর জোর করে বিশ্বকর্মার বোনকে ধরে নিয়ে গেলেন।
বিশ্বকর্মা বোনকে উদ্ধারের জন্য শ্রীকৃষ্ণের কাছে অনুরোধ
করলেন। নরকাসুর নারীদের উপর খুব অত্যাচার করতেন।
এটা শ্রীকৃষ্ণের বোন সুভদ্রা পছন্দ করতেন না। সুভদ্রা দাদাকে
বললেন --এই নারীদের রক্ষা করার দায়িত্ব তোমাকেই নিতে
হবে ।সুভদ্রা জানতেন নরকাসুরের কারাগারে ১৬০০০জন
নারী বন্দি আছে।সুভদ্রা দাদাকে বললেন--এদের উদ্ধার করে
তোমাকে নিয়ে আসতেই হবে।দুদিন পরে যখন তুমি ফিরে
আসবে তখন তোমাকে নিয়ে আমি একটা প্রীতির উৎসব
শুরু করব।শ্রী কৃষ্ণ জানতে চায়লেন- কি সেই উৎসব?
সুভদ্রা মৃদু হেসে জবাব দিলেন --তুমি ফিরে এসো তারপরে
বলব।
শ্রীকৃষ্ণ যুদ্ধ যাত্রা করলেন।বরাহ রূপ ধরে দুদিন ভয়াবহ
যুদ্ধের পর শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুরকে বধ করলেন।১৬০০০জন
নারীকে তাঁদের নিজ নিজ স্থানে পৌঁছে দিয়ে তিনি দ্বারকায়
ফিরে এলেন।সময়টা ছিলো কার্তিকমাসের শুক্লপক্ষের
দ্বিতীয়া তিথি।বোন সুভদ্রা ষোড়োশপচারে ঘিয়ের প্রদীপ
জ্বেলে শ্রীকৃষ্ণের কপালে ফোঁটা দিলেন।শ্রীকৃষ্ণ খুব খুশি
হয়ে বললেন---আজ থেকে এই উৎসবের নাম
দিলাম---ভ্রাতৃদ্বিতীয়া।
Comments :0