‘মোদীকে একদিন আমি ফেজ টুপিতে দেখতে চাই।’ মঞ্চ তথা চলচ্চিত্রের নামী অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহ এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছেন। তাঁর কথায়, এ তো কেবল একটা ‘সৌজন্য’। নাসিরুদ্দিনের মতে, মোদী যদি এমনটা করতে পারেন, উনি যদি মুসলিমদের বোঝাতে পারেন যে ‘আপনাদের প্রতি আমার কোনো বিতৃষ্ণা নেই’, তাহলে তা দেশের পক্ষে খুবই উপকারের হবে। সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফলাফলকে তিনি কীভাবে দেখছেন, সঙ্গে দেশের ভবিষ্যতের পক্ষে তিনি কী আশা করছেন, তা নিয়েই প্রখ্যাত সাংবাদিক করণ থাপারের সঙ্গে আলোচনায় এমনটাই বলেছেন বর্ষীয়ান অভিনেতা।
থাপারের এক প্রশ্নের সূত্র ধরে শাহ বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে মোদী খুবই কম কথা বলেন’। তিনি আরও বলেন, মোদী যদি বিশ্বাস করেন যে তিনি ঈশ্বরের দ্বারা প্রেরিত বা নিজেই ঈশ্বর, তাহলে তো ‘সকলেরই দিনের আলোতেও ওকে ভয় পাওয়া উচিত’।
নাসিরুদ্দিনের মতে, মোদী ধরে নিয়েছিলেন ‘তিনি আজীবন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন’। আর এখন তো ক্ষমতার ভাগাভাগি করা তো তাঁর কাছে তো ‘একেবারে তেতো বড়ি গিলে খাওয়ার দশা হবে’। বিজেপি গরিষ্ঠতা হারিয়েছে আর ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ লোকসভার ফল হয়েছে ওদের শুনে যে তাঁর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া ‘উল্লাস করার মতোই ছিল’, একথা গোপন করেননি নাসিরুদ্দিন। তবে তিনি ‘স্বস্তির দীর্ঘশ্বাস’ও ফেলেছেন তিনি।
দ্য ওয়ারের পক্ষ থেকে নাসিরুদ্দিনকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, পুরানো মোদী থেকে নতুন মোদীতে রূপান্তর করা কি সহজ না কি কঠিন হবে? জবাবে বর্ষীয়ান অভিনেতার মনে হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কাজটা কঠিনই হতে পারে। সঙ্গে নাসিরুদ্দিন বলেন, ‘উনি মোটেই ততটা অভিনেতা নন...ওর মাপা হাসি আর কুমিরের কান্না আমাকে কখনোই বিশ্বাস করাতে পারেনি...তিনি নতুন মোদী হওয়ার মতো বিশ্বাসযোগ্য কাজ করতে পারেন না।’
নিজের রাজনৈতিক মতামত দিতে কখনোই দ্বিধা করেন না নাসিরুদ্দিন। এবারও মুখ খুললেন। আশা প্রকাশ করলেন মোদীর বহুবিধ ‘শুভবুদ্ধি উদয়’ নিয়ে। নানান প্রশ্নের জবাবে নাসিরুদ্দিন জানিয়েছেন এদেশের নতুন অধ্যায়ের জন্য নরেন্দ্র মোদীর থেকে তিনি কেমন কেমন পরিবর্তন, কেমন কেমন সৌজন্য আশা করছেন, দেশে কোন কোন বদল তিনি চান, তা নিয়ে। নাসিরুদ্দিন চান, যদি মোদীর তাঁর ভাষণে একটু সংযমী হন, যদি উনি ঘৃণা-ভাষণ বন্ধ করেন, যদি দোষীদের নিয়ে গৌরবান্বিত হওয়া বা তাদের সংবর্ধনা দেওয়ার অবসান হয়, সংসদে আরো মহিলা সাংসদ নির্বাচিত হন। সব শেষে তিনি মনে করেন, মোদী যদি ফেজ টুপি পরে তাকে ঐক্যের বার্তা হিসাবে তুলে ধরেন, যদি তিনি মুসলিমদেরও এই দেশের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসাবে মেনে নেন তাহলে তা দেশের পক্ষে ভালো হবে।
নাসিরুদ্দিন শাহ যদিও নরেন্দ্র মোদীর জোট সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে ক্ষমতা ভাগাভাগি মোদীর জন্যপক্ষে একটি ‘তেতো বড়ি’র মতো হবে এবং ওঁর অহঙ্কারী স্বভাব পরিবর্তনের ইচ্ছাকে বাধা দিতে পারে। নাসিরুদ্দিনের আশা, মোদীর গুরুত্বপূর্ণ শরিকরা ওকে ওর বক্তব্য আর কাজে আরও মধ্যপন্থী হতে প্রভাবিত করতে পারে।
নরেন্দ্র মোদীর মুসলিম বিরোধী বক্তব্যের প্রভাবকে দুঃখজনক বলে মনে করেন নাসিরুদ্দিন শাহ। তিনি বলেন, এটি ভারতীয় মুসলিমদের নিজেদের দেশে নিরাপত্তাহীন এবং অবাঞ্ছিত বোধ করিয়েছে। তাঁর কথায়, এই ঘৃণা ভাষণ মুসলিমদের নিজেদের ‘দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক’ হিসাবে মেনে নেওবার দিকে ঠেলে দিয়েছে আর সাধারণ মানুষের মনেও মুসলিম সম্পর্কে ধারণাটও বদলে দিয়েছে। ধর্মীয় বিষয়ের বদলে মুসলিমদের শিক্ষা আর জ্ঞানার্জনের দিকে মনোনিবেশ করার প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন নাসিরুদ্দিন।
মোদী ৩.০ মন্ত্রিসভায় কোনও মুসলিম প্রতিনিধিত্ব না থাকা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নাসিরুদ্দিন শাহ বলেন, ‘এটা হতাশাজনক, তবে অবাক হওয়ার মতো নয়। মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষ যেন চরম আকার ধারণ করেছে... হামিদ আনসারি (প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি) বলেছিলেন, দেশের মুসলিমদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। এটি এমন কিছু যা আমাদের অর্জন করতে হবে। এটি কেবল হিন্দু বা মুসলিমরা করতে পারবে না। এটা এমন কিছু যা আমাদের একসঙ্গে করতে হবে।’
তাই তিনি মোদীর মাথায় ফেজ টুপি দেখার ইচ্ছেপ্রকাশ করেছেন। বলেন, ‘মোদী মনে হয় মাথা ঢাকতে পছন্দ করেন না। আমি তাঁকে একদিন মাথায় স্কালক্যাপ (ফেজ টুপি) পরে দেখতে চাই। ২০১১ সালে এক অনুষ্ঠানে মৌলবীরা ওকে একটি স্কালক্যাপ উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেটা পরতে অস্বীকার করেছিলেন। সেই স্মৃতি ভোলার নয়। তবে উনি যদি কখনো পরেন, তাহলে বার্তা আসবে, '‘আমি আপনাদের থেকে আলাদা নই'। আপনি আর আমি একই দেশের নাগরিক। আপনাদের প্রতি আমার কোনও বিতৃষ্ণা নেই। তিনি যদি এ দেশের মুসলিমদের এ ব্যাপারটা বোঝাতে পারেন, আমি মনে করি তাহলে ব্যাপারটা সহায়ক হবে।’
Comments :0