Aidwa conference at thiruvanantapuram

সব মহল্লার কথা নিয়েই সম্মেলনে প্রস্তুত মহিলারা

জাতীয়

ত্রিবান্দ্রম স্টেশনের উলটোদিকে পুন্নর শ্রীধর পার্ক। স্টেশনের বাইরে পা রাখতেই চোখ যাবে সাদা পতাকায় সুসজ্জিত এই উদ্যানে। যেন জ্বলজ্বল করছে রাতের অন্ধকারে। শুধু এই পার্ক নয়, গোটা শহরই যে সেজে উঠেছে, তা টের পাওয়া গেল কিছুদূর এগতেই। পতাকা, ব্যানার, হোর্ডিং, কাট আউটে কার্যত ঢাকা পড়েছে প্রতিটি মোড়। মঙ্গলবার রাত থেকেই বেশ উৎসবের আমেজ কেরালার রাজধানী শহরে। দীর্ঘ ৩৬ পর ফের দক্ষিণের এই রাজ্যে হচ্ছে সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সর্বভারতীয় সম্মেলন। এবার ১৩ তম সম্মেলন। ১৯৮৬ সালে সংগঠনের দ্বিতীয় সম্মেলন হয়েছিল তিরুবনন্তপুরমে। এবার সমতার লক্ষ্যে একতার লড়াইয়ের স্লোগানকে সঙ্গী করে শুক্রবার থেকে শুরু হয়ে সম্মেলন চলবে আগামী সোমবার পর্যন্ত। পঁচিশ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৮৫০ জন প্রতিনিধি যোগ দেবেন সম্মেলনে। সম্মেলন স্থল টেগোর হলের নামকরণ করা হয়েছে এমসি জোসেফাইন নগর। সম্মেলন উদ্বোধন করবেন বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী এবং কেরালা কলামণ্ডলমের চ্যান্সেলর মল্লিকা সারাভাই।   
আরএসএস-বিজেপি যখন মহিলাদের অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে, তাঁদের পিছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, তখন এ‌আইডিডব্লিউএ’র এই সম্মেলন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। লাখো লড়াইয়ের মাটি কেরালায় দাঁড়িয়ে গোটা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মহিলাদের আরও বেশি করে এক সুতোয় গাঁথতে চাইছে তারা। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলার বার্তা দিয়ে বুধবার দুপুরে আয়ুর্বেদা জংশন মোড়ে সম্মেলনের আয়োজক কমিটির অস্থায়ী অফিসে সাংবাদিক বৈঠক করে সংগঠনের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মারিয়ম ধাওয়ালে বলেন, ‘‘কেরালায় আমাদের সংগঠন খুবই শক্তিশালী। দীর্ঘদিন ধরে লড়াই-আন্দোলনকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে কেরালার ভূমিকা অনস্বীকার্য। কেরালা থেকেই গোটা দেশ জানুক, মোদী রাজত্বে মেয়েদের কী অবস্থা। একেবারে তৃণমূল স্তর থেকে রাজ্যস্তর পর্যন্ত ৪০ হাজার ছোট-বড় সম্মেলন হয়েছে এ বছর। মে মাস থেকে শুরু হওয়া এই সম্মেলনে বাদ পড়েনি কোনও ছোট মহল্লা। কেন্দ্র এবং রাজ্যে বিজেপি’র নীতির বিরুদ্ধে মহিলাদের ক্ষোভ আমরা উপলব্ধি করেছি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, অপুষ্টি, ভেঙে পড়া রেশন ব্যবস্থা কীভাবে মহিলাদের এবং তাঁদের শিশু সন্তানদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে, সেই দুঃখ ভাগ করে নিয়েছেন ওঁরা। মহিলারা অনেকাংশে কাজ পাচ্ছেন না। আর পেলেও তাঁদের এমন কাজের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, যেখানে বেতন বা ভাতা অত্যন্ত কম। এমন ঘটনাও রয়েছে, যেখানে দু’বছর পর্যন্ত ভাতা পাননি মহিলারা, অথচ প্রতিদিন কাজ করতে হয়েছে। বিজেপি রাজত্বে মহিলাদের উপর ভয়ঙ্কর শারীরিক অত্যাচারের ঘটনা ঘটে চলছে প্রতিদিন। আর ধর্ষকদের কীভাবে বাঁচানো যায় বিজেপি সরকার সেই ছক কষে চলছে। স্বাধীনতা দিবসের দিন লালকেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রী মহিলাদের সম্ভ্রমের বার্তা শুনিয়ে বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তি দিয়ে দেন। স্বাধীনতার ৭৫ বছরে এই কি মহিলাদের উপহার দেওয়া হলো? সাম্প্রদায়িক রাজনীতির মাধ্যমে মহিলাদের একতা ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করছে বিজেপি। কিন্তু আমরা আশাবাদী, আগামী দিনেও আমরা আমাদের মূল্যবোধ ধরে রাখতে পারব এবং আরও বেশি অংশের মহিলাদের ঐক্যবদ্ধ করতে পারব।’’ মহিলাদের এই ভয়াবহ পরিস্থিতির পাশাপাশি বিজেপি লাগাতার সংবিধান-গণতন্ত্রের উপর যে আক্রমণ নামিয়ে আনছে, তা-ও উঠে আসবে সম্মেলনের আলোচনায়। সেইসঙ্গে মাদক ব্যবহারের আধিক্য, কুসংস্কার সহ একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন মহিলারা। সামগ্রিকভাবে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের মহিলা বিরোধী, জনবিরোধী এবং সাম্প্রদায়িক নীতির প্রভাব নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে। 
মহিলা নেত্রী সুভাষিনী আলি সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করে বিজেপি’র নৃশংসতা তুলে ধরেন। হরিয়ানায় বিজেপি সরকারের মন্ত্রীর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ উঠলেও সরকারের ব্যবস্থা না নেওয়া, দিল্লিতে বর্ষশেষের রাতে এক মহিলার উপর নির্মম অত্যাচার চললেও অমিত শাহের পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। এদিন একটি ক্যালেন্ডারও প্রকাশ করা হয়েছে। 
বিকালে শহরের অন্য প্রান্তে ভিজেটি হল থেকে শুরু হয় মিছিল। সম্মেলন উপলক্ষে এই হলের নামকরণ করা হয়েছে ক্যাপ্টেন লক্ষ্মী নগর। লাল-সাদা বেলুন উড়িয়ে, মালয়ালি বাজনা চেণ্ডা, চিঙ্গারি মেলম বাজিয়ে প্রায় হাজার দেড়েক মহিলা অংশ নেন পদযাত্রায়। হাঁটেন ঘণ্টাখানেক। মায়ের কোলে ছোট্ট আয়িশুও ছিল মিছিল আলো করে। সাংবাদিক বৈঠকের পাশাপাশি মিছিলেও উপস্থিত ছিলেন রাজ্য ও জাতীয় স্তরের নেতৃবৃন্দ। মিছিল শেষ হয় আয়োজক কমিটির অফিসের সামনে। মাঝে পোলায়ামে ফ্লাশ মবে অংশ নেয় একদল স্কুল পড়ুয়া। এই পদযাত্রা শেষ হলে দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানে ঐতিহ্যবাহী মালয়ালি নৃত্য ‘তিরুভাথিরা’ সকলের মন জয় করে নেয়।

 

ছবি : অচ্যুৎ রায়
 

Comments :0

Login to leave a comment