অনির্বাণ দে (বহরমপুর) ও অনিন্দিতা দত্ত (শিলিগুড়ি)
সাধুসন্তদের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মুখর হয়েছেন ভোটের জন্য। মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী ভোটের সঙ্গে ধর্মকে মিশিয়ে রাজনীতি করছেন। মঙ্গলবার এই অভিযোগে সরব হলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। এদিনই শিলিগুড়িতে সন্ন্যাসীদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাকে লজ্জাজনক বলল সিপিআই(এম)-ও।
বহরমপুরে অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘সাধুদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এমনি এমনি বলেননি। ভাবছেন সাধুসন্তদের গালাগালি দিলে সংখ্যালঘু মানুষ খুশি হবে। এই ধরনের নিকৃষ্ট রাজনীতি করতেই উনি অভ্যস্ত।’’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সেই সঙ্গেই বলেছেন, ‘‘না প্রধানমন্ত্রী, না মুখ্যমন্ত্রী, ভোট যখন মানুষের সমস্যা নিয়ে, মানুষের ভালোমন্দ নিয়ে আলোচনা হোক। ভোটের সঙ্গে ধর্মকে মিশিয়ে দিয়ে কী রাজনীতি হচ্ছে বাংলায়।’’
এদিন জমি মাফিয়াদের হাতে শিলিগুড়ি সেবক রোডে রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীদের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনার নিন্দা করেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকার। তিনি বলেন, ‘‘অবিলম্বে ঘটনার সাথে যুক্ত জমি মাফিয়াদের গ্রেপ্তার করতে হবে।’’
সরকারও বলেছেন, ‘‘তৃণমূল নেত্রী এবং বিজেপি নেতা দু’জনেই সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ করে ভোট পেতে চাইছেন।’’
সরকার বলেন, ‘‘শিলিগুড়ি ও ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি এলাকা শাসকদলের মদতপুষ্ট জমি মাফিয়াদের অবাধ বিচরণক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। মাফিয়াদের দাপটে ক্রমাগত শিলিগুড়ি শহর ও সংলগ্ন এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি ঘটছে। শিলিগুড়িকে মাফিয়ামুক্ত করতে এবং শহরের ঐতিহ্যকে বজায় রাখতে দলমত নির্বিশেষে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।’’
শনিবার রাতে শিলিগুড়ি সেবক রোডে চার মাইল এলাকায় রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় একদল জমি মাফিয়া। শুধু তাই নয়, মিশনের পাঁচ সন্ন্যাসী ও নিরাপত্তা কর্মীদর অপহরণ করে নিউ জলপাইগুড়ি রেলস্টেশন সহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় ছেড়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে।
জীবেশ সরকার বলেন, ‘‘ধর্মীয় সেবা প্রতিষ্ঠানটির জমি সংক্রান্ত বিষয়ে মামলা চলছে। রামকৃষ্ণ মিশনের জমির ওপর কবজা করতে এখানকার জমি মাফিয়ারা রাতের অন্ধকারে সন্ন্যাসীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। ভয়ঙ্কর ঘটনা। জমি মাফিয়ারা প্রকাশ্যে এই অঞ্চলে শাসকদলের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে, জমির মাফিয়াবৃত্তি করছে প্রশাসন সবাই চেনে ও জানে। একেবারে ভক্তিনগর থানার সামনের ঘটনা। তবুও পুলিশ কেন জমি মাফিয়াদের গ্রেপ্তার করতে পারছে না। পলিশের ওপরে শাসকদলের নির্দেশ রয়েছে আর যাই হোক মাফিয়াদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।’’
মঙ্গলবার হিলকার্ট রোডে সিপিআই(এম) জেলা দপ্তরে সাংবাদিক বৈঠকে ছিলেন দার্জিলিঙ জেলা সম্পাদক সমন পাঠক, দিলীপ সিং ও নুরুল ইসলামও।
তৃণমূলের প্রশ্রয়ে দালালরাজ, মাফিয়ারাজ শিলিগুড়ি শহর সহ সংলগ্ন এলাকায় উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। শহর জুড়ে দেদার বেআইনি নির্মান কাজ চলছে। কাটমানি থেকে শুরু করে দুর্নীতি, চাকরি চুরি সবকিছুতেই সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠেছে মাফিয়ারা। রামকৃষ্ণ মিশনের ঘটনায় তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই সম্পত্তি সিল করেছে পুলিশ। ফরেন্সিক টেস্ট করা হবে বলছে। কিন্তু একজন মাফিয়াকেও গ্রেপ্তার করা হয়নি।’’
সিপিআই(এম) নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীদের ওপর হামলা জঘন্যতম ঘটনা। শাসকদল ও পুলিশের মদত ছাড়া ঘটনা ঘটতে পারে না। জমি মাফিয়ারা শহরে বেড়ে উঠছে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রচ্ছন্ন মদতে। বাড়ির মালিক রবীন্দ্রনাথ মিত্রের সাথে বহু পুরোনো পরিচয়। তাঁর এই জমিটি রামকৃষ্ণ মিশনকে দিয়েছিলেন। সেখানে শিক্ষা বা সেবা মূলক প্রতিষ্ঠান করার কথা ছিলো। সেই সময় দলিলও করে দেওয়া হয়েছিলো। রাতের অন্ধকারে সন্ন্যাসীদের ওপর এই হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে।’’
তিনি বলেন, ‘‘জমির মাফিয়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরিবর্তে ঘটনায় যুক্ত দালাল প্রদীপ রায়ের হয়ে কাজ করছে পুলিশ।’’
Comments :0