BITM science day

রাতের আকাশে ‘আলো দূষণ’ নিয়ে চিন্তিত বিজ্ঞানীরা

কলকাতা

১৯৩০ সালে ড: সিভি রামন ‘রামন এফেক্ট’ আবিষ্কার করে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন। সেই দিনটিকেই স্মরেণে রাখতেই ১৯৮৬ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারিকে বিজ্ঞান দিবস হিসেবে চিহ্নিত করে তৎকালীন ভারত সরকার। এই দিনটিতে তাই সারা দেশেই বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠান, বা যারা বিজ্ঞান নিয়ে সরাসরি কাজ করে তারা এই দিনটি বিশেষ ভাবে পালন করে থাকে।
বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেক্নোলজিক্যাল মিউজিয়াম বা বিআইটিএম প্রতিবছরই মতোই এবছর ২৮ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞান দিবস পালন করল নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। সকালে বিজ্ঞান পদযাত্রা দিয়ে শুরু করে বিভিন্ন মনীষীদের স্মরণ করা সহ খোলা আকাশের নিচে মজার ছলে বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের সামনে বিজ্ঞানকে তুলে ধরে বিআইটিএম। সঙ্গে ছিল বিজ্ঞান বিষয়ক কুইজও। তাতে বহু স্কুলের পড়ুয়ারা সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহন ও করে।


বৈজ্ঞানিক সিভি রামন যেহেতু আলো নিয়ে কাজ করেছিলেন সেই আলো নিয়ে একটি বিশেষ উপস্থাপনা করেন সিটি কলেজের পদার্থ বিদ্যার প্রাক্তন অধ্যাপক ডঃ ভুপতি চক্রবর্তী। ‘লাইট ইলিউমিনেটস অ্যান্ড দি স্টাডি অফ লাইট এনলাইটেনস’ বিষয় নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। যেমন আলোর বৈজ্ঞানিক দিকগুলো তাদের সামনে তুলে ধরেন তেমনি ব্যবহারিক জীবনে আলোর প্রয়োজনিয়তা। আলো, তাপ এবং শক্তির উৎস নিয়েও বলেন তিনি, তেমনি ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক স্পেক্ট্রাম নিয়েও আলোচনা করেন। ‘রামন এফেক্ট’র মতো আবিষ্কার কিভাবে বিজ্ঞান জগতে পরবর্তী সময়ে নানা দিক খুলে দিয়েছে সেই বিষয়গুলো বলেন তিনি। তবে এই আলোচনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় উঠে আসে তা হল রাতের আকাশ। 


রাতের আকাশ প্রসঙ্গে ডঃ ভুপতি চক্রবর্তী বৈজ্ঞানিক মহলে বহু চর্চিত বিষয় ‘লাইট পলিউশন’ বা আলো দুষণের বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন। শহুরে অঞ্চলে রাতের আকাশে আর তারা দেখা যায় না। বিশেষ করে এলইডি আলোর ব্যবহার এতটাই বেড়ে গেছে যে বিভিন্ন দেশের বড় বড় শহর গুলোতে রাতের আকাশে তারার দেখা প্রায় মেলেই না। অথচ ওই একই সময়ে গ্রামে বা শহুরে আলো থেকে বহু দুরে কোথাও গেলে পরিষ্কার আকাশে তারার দেখা মেলে। বিভিন্ন শহরের ও গ্রামের রাতের আকাশের ছবি দিয়ে তিনি এই তুলনাটিকে আরও স্পষ্টভাবে বোঝান। শহরে আলোর পরিমান অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় পশু, পাখি ও গাছের স্বাভাবিক জীবনের ওপরেও মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। সে কারণে বৈজ্ঞানিকরা এলইডি লাইটের ব্যবহার কমিয়ে হলুদ আলোর ব্যবহার বাড়ানোর কথাই বলছে, বারবার, জানালেন ডঃ ভুপতি চক্রবর্তী। অতিরিক্ত আলোর জন্যই শহরের বাস্তুতন্ত্র অনেকভাবেই ব্যাহত হচ্ছে। তিনি বলেন, এতোটা আলোর ব্যবহারের ফলে শক্তির অপচয় হচ্ছে বলেই বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।
অধ্যাপকের এই বক্তব্যের পর সিভি রামনকে নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি দেখানো হয়। সবশেষে ঘড়ি নিয়ে একটি প্রদর্শীনী হয়। ‘টেকনোলজিক্যাল ইভালিউশন ওফ টাইম কিপিং ডিভাইসেস’ শীর্ষক এই প্রদর্শনিতে দেখানো হয় সময়ের সঙ্গে ঘড়ির আধুনিকিকরন। তাপস কুমার বসুর ব্যক্তিগত সংরক্ষণ থেকে নিয়ে আসা ঘড়ি দিয়েই হয় এই প্রদর্শনী। সেখানে যেমন ১৯২০ সালের ঘড়ি ছিল। তেমনি ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সত্যজিৎ রায়ের ঘড়িও। এছাড়াও রয়েছে দম দেওয়া হাত ঘড়ি, ডিজিটাল হাত ঘড়ি, সঙ্গে আগেকার দিনের ঢং ঢং আওয়াজ করা ঘড়ি। বিভিন্ন রেল ষ্টেশনের ঘড়ি, পকেট ঘড়ি। মিউজিয়াম চত্বরে ছাত্র ছাত্রীদের জন্য এই ঘড়ি প্রদর্শণী চলবে ১৫ মার্চ পর্যন্ত। 


সমগ্র অনুষ্ঠান নিয়ে বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেক্নোলজিক্যাল মিউজিয়ামের ডিরেক্টর শুভব্রত চৌধুরী বলেন ‘আমরা সারা বছরই বিজ্ঞান বিষয়ক অনুষ্ঠান করি। আজকের দিনটিতে তো অবশ্যই বিশেষ ভাবে উদযাপন করা হয়। বিশেষ করে ছাত্র ছাত্রীদের নানা ভাবে বিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট করতে আমরা চেষ্টা করি সেই সঙ্গে অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে’ তবে বিজ্ঞান দিবসে বিশ্বকে রক্ষা করতে প্রত্যেকটি দেশের সরকার ও সাধারণ মানুষকে প্লাস্টিক বর্জন করে আরও বেশী গাছ লাগানোর কথা বলেন তিনি। 

Comments :0

Login to leave a comment