BOOK / MUKTADHARA — SUBINAY MISHRA — 26 JANUARY 2024

বই / মুক্তধারা — ভারতীয় নারীরা ভালো নেই / সুবিনয় মিশ্র — ২৬ জানুয়ারি ২০২৬

সাহিত্যের পাতা

BOOK  MUKTADHARA  SUBINAY MISHRA  26 JANUARY 2024

বই   

মুক্তধারা

ভারতীয় নারীরা  ভালো নেই
সুবিনয় মিশ্র


কাগজে-কলমে একবিংশ শতকে ভারতীয় নারীদের উন্নতির কথা ফলাও করে বলা হলেও তাদের মলিনতা কোনোভাবেই আর ঢাকা যাচ্ছে না। একটা সময় পর্যন্ত নারীরা ছিলেন গৃহবন্দি। সেই বন্দিদশা ঘোচাতে তাদের বহু সময় লেগেছে। তরপরেও অতিক্রম করতে হয়েছে নানা সামাজিক বাধা। কিন্তু সেই অসম লড়াইটা কি শেষ হয়েছে? না। এখনও অপমানে জর্জরিত মেয়েরা তাদের কাজের স্বীকৃতি হিসাবে প্রাপ্ত মেডেল প্রতিবাদ স্বরূপ সরকারের ঘরে ফেরত দিচ্ছেন অথবা রাস্তার উপরে বিছিয়ে রেখে আসছেন আমাদের সোনার মেয়েরা।
আমরা যতই পূজার্চনা করে মূর্তির প্রাণ প্রতিষ্ঠা করি না কেন পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্য বজায় রাখার ঐতিহ্যকে রেওয়াজি আয়োজনে পরিণত করার প্রকল্প কিন্তু থেমে নেই। সমাজে নারীরাই যে সবচেয়ে বেশি নিপিড়ীত ও শোষিত, বিশিষ্ট সাংবাদিক নীলাঞ্জনা তাঁর বইতে অসংখ্য উদাহরণ তুলে তা দেখিয়েছেন। সাবিত্রীবাই ফুলে, মহাশ্বেতা দেবী, অমৃতা প্রীতমদের কেন লড়তে হয়েছিল সেকথাও তুলে ধরেছেন। ঔপনিবেশিক যুগেও লড়াই করে তারা অর্জন করেছেন ভোটাধিকার সহ সম্পত্তির অধিকার তবুও বৈষম্য ঘোচেনি।

 
লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে অগ্রসর নারীরা আজও অনেকে মনে করেন যে তারা লড়াই করছেন যে অধিকারের দাবিতে তার ফলে তাদের নাতী নাতনীরা এতে একদিন ঠিক পুরষ্কৃত হবেন। কারণ ততদিনে পুরুষের বোধদয় হবে, তারা নারীদের পাশে এসে দাঁড়াবেন। কিন্তু এই বইয়ের লেখক জানাচ্ছেন, সুদিনের কথা থাক, একেবারে সাম্প্রতিক সময়েও ভারতীয় মেয়েরাই বিশ্বে সবচেয়ে বেশি খেটে চলেছেন। তাদের মধ্যে যাঁরা বিশেষ পেশা বেছে নেবার সুযোগ পান তারাও প্রকৃত অর্থে পরাধীন। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নানাবিধ চাপ সামলে গায়ে-গতরে খেটে পরিবারের সদস্যদের হাতে মুঠো ভরে টাকা তুলে দিলেও মুক্তি নেই তাদের। ঘরে শিশুর পরিচর্যা, সদস্যদের যত্নআত্তি সবই তাদেরই করতে হবে। যেখানে একটু আগেই হয়তো কোনও এক নারী নিজের সমস্ত শক্তি বাইরে নিংড়ে দিয়ে এলেন উপার্জনের তাগিদে, গেরস্থালির কাজটাও ঘরে ফেরার পর তাদেরই কেন সেরে দিতে হবে এমন বেয়াড়া প্রশ্ন করা যাবে না। প্রতিদিন গড়ে ২৯৯ মিনিট ঘর-গেরস্থালী থেকে শুরু করে ১৩৪ মিনিট পরিচর্যার কাজে ব্যয় করতে হয় ভারতীয় নারীকে। ৮২ শতাংশ গার্হস্থ্য দায়িত্ব পালন করতে হয় তাদেরই। কাজের চাপে তারা স্কুল ছেড়ে দেন অনেকেই। শেষে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্নও পরিত্যাগ করতে হয়। এমনকি মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়েদেরও এভাবে স্মার্ট মেয়ে হয়ে ওঠার তারিফ করা হয়। এর ফলে নারীদের একাংশ নিজেদের ‘সুপার ওমেন’ ভাবতে শুরু করেন। শরীরকে উপেক্ষা করে পরিবারকে খুশি রাখতে বাড়িতে ক্রমাগত মিথ্যা বলে চলেন যে তারা ভালো আছেন। আসলে তারা ভালো নেই। তারা স্বাধীন কোনও ব্যক্তিও নন, বোঝা। লেখকের প্রশ্ন, আর কতদিন এভাবে তারা দিন গুজরান করে যাবেন? বাইরে কি ঘটছে তা কিছুটা হয়তো সকলের নজরে কমবেশি পড়ে। কিন্তু বাড়ির ভেতরে কি ঘটছে সেটাও প্রকাশ্যে আসা দরকার। নারীর অস্তি্ত্বের লড়াইয়ের নানা জানা অজানা বিষয়কে তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। 
Lies Our Mothers Told Us : The Indian Woman’s burden
Nilanjana Bhowmick. Aleph Book , Rs.478/-

 

Comments :0

Login to leave a comment