আর জি করের ঘটনার ন্যায়বিচারের দাবিতে দিল্লিতে বুধবার রাতে বিক্ষোভ দেখান রাজধানীর সমস্ত বড় হাসপাতালের রেসিডেন্ট ডাক্তাররা। তাঁরা বঙ্গ ভবনের সামনে মোমবাতি হাতে বিক্ষোভ দেখান। এই বিক্ষোভ কর্মসূচির কথা মঙ্গলবার রাতে ঘোষণা করেছিল জয়েন্ট দিল্লি রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন (আরডিএ)।
এদিনের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে শামিল হন এইমস, সফদরজঙ, আরএমএল, জিটিবি, মৌলানা আজাদ, লেডি হার্ডিঞ্জ সহ বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হয় এদিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি। আর জি করের ঘটনায় যে সকল চিকিৎসকরা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তাঁদের সমর্থনেই এই প্রতিবাদ। প্রতিবাদকারীরা এদিন বলেন, ‘‘তাঁদের দাবি একটাই ‘জাস্টিস ফর অভয়া’। ওই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা যেন আর না ঘটে। গত দশ দিন ধরে আমাদের সহকর্মীরা কলকাতায় অনশন করছেন। রাজ্য সরকার এখনও ১০ দফা দাবি মেনে নেয়নি। সেই দাবি আরও জোরদার করতে এদিন প্রতিবাদ রাজধানীর বঙ্গ ভবনের সামনে।’’
এমনিতে আর জি কর হাসপাতালের ঘটনার প্রতিবাদে গোটা দেশেই চিকিৎসকদের বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু হয় ১২ আগস্ট। ২২ আগস্ট দিল্লি সহ অন্যান্য রাজ্যের চিকিৎসকরা সাময়িকভাবে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন সুপ্রিম কোর্টের আশ্বাসের ভিত্তিতে। শীর্ষ আদালত আশ্বস্ত করেছিল যে, ন্যায়বিচার ত্বরান্বিত হবে। কিন্তু চিকিৎসকদের অভিযোগ, ‘‘এর পরেও তদন্ত একবিন্দু অগ্রসর হয়নি। কোনও ধরনের ‘অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট’ প্রকাশ্যে জানানো হচ্ছে না। সেটা আরও স্পষ্ট হয়েছে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে ওই মামলার শুনানিতেই। বিষয়টি চিকিৎসক সহ স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত। বিশেষত মহিলা কর্মীদের নিরাপত্তা।’’ তাঁরা অভিযোগ করেছেন, ‘‘আশ্বাসের ভিত্তিতে আমরা বিক্ষোভ প্রত্যাহার করা নিলেও এখন মনে হচ্ছে আমরা প্রতারিত হয়েছি। আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে আদৌ সংবেদনশীল কি না কর্তৃপক্ষ, সে সম্পর্কে সংশয় দেখা দিয়েছে।’’ এমনকি সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে গঠিত জাতীয় টাস্ক ফোর্স’র ‘গয়ংগচ্ছ’ মনোভাব নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে আরডিএ। ওদিকে ৫০ দিন পেরিয়ে গেলেও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনও গঠনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলো না বলেও তাঁরা অভিযোগ করেছেন। এরই পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ সরকারও অনশনরত জুনিয়র ডাক্তারদের দাবিপূরণে কোনও সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ করছে না বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
আরডিএ বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলন করতে চলেছে। বলা হয়েছে, এই চলতি আন্দোলনের ফলে যদি কোনও স্বাস্থ্যকর্মীর প্রাণনাশ কিংবা ক্ষতি হয়ে যায় তাহলে তাঁরা সব ধরনের চিকিৎসা পরিষেবা থেকে নিজেদের সরিয়ে নেবেন প্রতিবাদ হিসাবে। এমনকি জরুরি পরিষেবা থেকেও বিরত থাকবেন। এক আন্দোলনকারী চিকিৎসকের বক্তব্য, ‘চিকিৎসকদের দাবি পূরণে ব্যর্থ রাজ্য সরকার। আবার এই ঘটনায় একমাত্র দোষী হিসাবে সিবিআই চার্জশিটে নাম উঠে এসেছে একমাত্র সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের। ফলে এই ঘটনায় আরও কারা জড়িত সেই নাম সামনে আসছে না। দীর্ঘদিন ধরে যে প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে কোনোরকম ব্যবস্থা নেয়নি রাজ্য প্রশাসন। তাই যতদিন না পর্যন্ত সরকার দশ দফা দাবি মেনে নেবে ততদিন পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।’
এদিকে, কলকাতায় জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন বুধবার ১২ দিনে পা দিলো। ১০ দাবি আদায়ে তাঁরা অনড়। এই অনশন শুধু কলকাতায় নয়, লক্ষ্ণৌয়ের কিং জর্জ মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তার দিব্যাংশ সিং এবং কেজিএমইউ’র রণবিজয় প্যাটেল দু’দিন ধরে অনশন করছেন স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার দাবিতে। এখন সারা দেশে ১০ জন জুনিয়র ডাক্তার অনশন করছেন। এছাড়াও ৭ জন ইতিমধ্যে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে জুনিয়র ডাক্তাররা সুপ্রিম কোর্টের শুনানির ঢিলেমি এবং সিবিআই’র তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে হতাশ। যেভাবে গোটা বিষয়টি চলছে তাতে জুনিয়র ডাক্তারদের ধারণা হচ্ছে, অগ্রগতি সেভাবে তাঁদের পক্ষে যাচ্ছে না।
Banga Bhawan Doctors
বিচারের দাবিতে দিল্লির বঙ্গ ভবনের সামনে বিক্ষোভে রেসিডেন্ট ডাক্তাররা
×
Comments :0