বই / মুক্তধারা
নিবিড় সমাজপাঠ ও গভীর সময় বীক্ষণের কবিতা
ভবানীশংকর চক্রবর্তী
কবিতাকে যদি কল্পনাপ্রসূত শব্দ ও ধ্বনি মাধুর্যময় অর্থপূর্ণ উচ্চারণ ভাবি,তাহলে তা জীবনদেবতার পায়ে নিবেদিত অর্ঘ্যদানের মন্ত্র।যদি তাকে সংগ্রামের আয়ুধ ভাবি,তবে তা সমাজজীবনের যাবতীয় প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অগ্নিস্বাক্ষর ।আর যদি তাকে প্রাত্যহিক ও প্রাতিস্বিক যাপনের স্খলন-পতন-বিষাদ-বিরহ-বিমোহনের হৃদয়-উৎসারিত ধ্বনি মনে করি তবে তা নিখিল মানবতার বেদগান।ভাবনা যতই বিচিত্র ও বহুমুখী হোক- না -কেন তার মূল সুর কিন্তু একই সুরে বাঁধা। 'জীবনের যেথা যত ওঠে ধ্বনি' তাকে কান পেতে শোনা আর সেই শ্রুতিকেই আপনমনের মাধুরী মিশিয়ে শব্দধ্বনিময় নান্দনিক সৃজনের নামই কবিতা।সম্প্রতি প্রকাশিত মনোজ-এর ' প্রাণে প্রবাহে ' কাব্যগ্রন্থটি বোধহয় সেই অনুভব ও অভিধার স্বাক্ষর।কবি মনোজ দাস,মনোজ কলমনামেই লিখেছেন কাব্যগ্রন্থটি ।
পঁয়ষট্টিটি কবিতার মধ্যে কবি এঁকে দিয়েছেন তাঁর কল্পনা,মনন,বোধ,
জিজ্ঞাসা ও বীক্ষণের কোলাজ।নানা শব্দ ও বর্ণময় চিত্রকল্পে এবং প্রতীকী ইমেজে ধরা পড়ে কবির নিবিড় সমাজপাঠ ওসময়ানুভবের দীপ্ত মুখচ্ছবি।শব্দে,ব্যঞ্জনায়,
পঙক্তিতে পঙক্তিতে সময়ের স্বর,হৃদয়ের সংবেদন।মনোজের উচ্চারণ কখনো দৃপ্ত প্রতিবাদে,কখনো নম্র বিষণ্ণতায়।কিন্তু কোত্থাও প্রত্যয়হীনতার আভাসটুকু নেই।মনোজ-এর কবিতার স্বরূপ সম্বন্ধে গ্রন্থটির ব্লারবে বলা হয়েছে কবিতাগুলিতে "মানুষের জীবনযন্ত্রণা আছে,মধ্যবিত্তের যাপনের ঘাত-প্রতিঘাত আছে,আন্তর সৌন্দর্যে মগ্ন নিবেদনও আছে।"এই মন্তব্যের আলোকে গুটিকয় উদ্ধৃতির সাহায্যে মনোজ-এর কবিতাকে একটু দেখে নেওয়া যাক -
১।কান্না ঘাম রক্ত মাখামাখি ক্ষরণের পুরো একযুগে
ঘৃণা বিক্ষোভে জনপদ ফোঁসে
পাটা রাস্তায় বিসর্জনের কার্নিভাল জনরোষে
(কার্নিভাল, পৃষ্ঠা- ১০)
২।কাচ ভাঙে ঝনঝন শব্দ ওঠে আবার আবার
নীরব যন্ত্রণার কাজে ভাঙা শব্দ-ভার
(চোদ্দ নম্বর ও কানেস্তারার চার বেড়ের গল্প ,পৃষ্ঠা-৫০)
৩।এখানে কামনার হানাবাড়ি লোল লোভ নগ্ন ইতস্তত
ক্ষতসার অধীনতা পুরুষের তর্জনে লগ্ন ওতপ্রোত
(অন্নকথা ,পৃষ্ঠা-৭১)
সোমকুমার দে'র প্রচ্ছদ ব্যঞ্জনাধর্মী ও দৃষ্টিনন্দন।মুদ্রণ ও বাঁধাই সুন্দর ।কাগজও ভালো।সব মিলিয়ে ছিমছাম বইটিতে সুরুচির ছাপ স্পষ্ট।কবিতাপ্রেমিকদের ভালো লাগার মতো বই।
প্রাণে প্রবাহে
মনোজ
প্রকাশক- একুশ শতক
১৫,শ্যামাচরণ দে স্ট্রিট,
কলকাতা -৭০০০৭৩
মূল্য -১৫০ টাকা
Comments :0