চিট ফান্ডের লুটের মতোই সন্দেশখালির অপরাধকেও মুখ্যমন্ত্রী ভুলিয়ে দিতে চাইছেন। আর অপরাধ থেকে নজর ঘুরিয়ে দিতে বিজেপি হিন্দু-মুসলিম ভাগাভাগির রাজনীতি করছে। সোমবার সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এই অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রশাসনের শীর্ষে বসে মুখ্যমন্ত্রীর এই অপরাধ সাম্রাজ্য চালানোর বিরুদ্ধে মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবেই প্রতিরোধের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ধর্মের নামে ভাগাভাগির রাজনীতি করে তা নষ্ট করার সুযোগ মানুষ বিজেপি’কেও দেবে না।’
এদিনই হেলিকপ্টারে উড়ে সন্দেশখালিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, ‘এখানে টাকার খেলা হয়েছে। মিথ্যা বেশিদিন চলে না। আমি চাই যা হয়েছে, হয়েছে। আমার মনে নেই, ভুলে গেছি।’ সন্দেশখালিতে জমি লুট থেকে মহিলাদের ওপরে অত্যাচারের যাবতীয় অপরাধ ভুলিয়ে দিতে মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রচেষ্টাকে আক্রমণ করে মহম্মদ সেলিম চিট ফান্ডের লুটের পর মমতা ব্যানার্জিরই করা মন্তব্যকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তখন মমতা ব্যানার্জি চিট ফান্ডের লুট করা অর্থ উদ্ধারের বদলে সরকারি তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করে বলেছিলেন, ‘যা গেছে, তা গেছে।’
এদিন সেলিম বলেছেন, চিট ফান্ডে সর্বস্বান্ত মানুষকেও উনি লুটের অপরাধ ভুলিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। উনি রাজ্যের প্রশাসনের শীর্ষে বসে আছেন অথচ একের পর এক অপরাধ, বিশেষত মহিলা, গরিব ও প্রান্তিক মানুষদের বিরুদ্ধে অপরাধে ব্যবস্থা না নিয়ে ভুলে যেতে বলছেন! যারা লুটেরা, অপরাধী, নির্যাতনকারী তাদের অপরাধ জগৎ চালাতে দিচ্ছেন আর ভোট লুটের যন্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছেন। তারপর সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে মিথ্যাচার করে, উপঢৌকন দেওয়ার ভান করে ‘যা হয়েছে, তা হয়েছে’ বলে চাপা দিচ্ছেন।
সেলিম বলেছেন, এই বছরেরই গোড়ায় সন্দেশখালির মানুষ লুট ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু তখন বিজেপি মমতা ব্যানার্জিরই সহযোগী হয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীদের এনে সন্দেশখালি নিয়ে সাজানো ভিডিও প্রচার করে জমিদখলের প্রকৃত অপরাধ থেকে নজর ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছিল, হিন্দু-মুসলিম ভাগাভাগি করতে অপপ্রচার করেছিল। ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে প্রস্তুত সন্দেশখালির মানুষ সেই সুযোগ আর দেবে না।
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টারে চেপে সন্দেশখালি সফর এবং প্রতিশ্রুতির বন্যা সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী এর আগে হিঙ্গলগঞ্জে গিয়েছিলেন মিড ডে মিলের টাকায় হেলিকপ্টারে উড়ে। সন্দেশখালিতে এবার কোনও প্রকল্পের টাকায় গেলেন? কালীঘাটের তোলাবাজির টাকায় গেলে অন্য কথা ছিল, তফসিলি জাতির উন্নয়নের টাকায় হেলিকপ্টারে চেপেছেন বলে শোনা যাচ্ছে। সরকারি টাকায় সফর করে সিপিআই(এম)’র বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মিথ্যা প্রচার করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী বোগাস প্রতিশ্রুতি দিয়েই থাকেন, তা নিয়ে বলার কিছু নেই। দেড় বছরে ওই এলাকায় আবাসের দেড় লক্ষ ঘর করবেন বলছেন এখন। তাহলে এতদিন করেননি কেন? চোদ্দ বছরে না করে এখন অঙ্ক কষে ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে দেড় বছরের কথা বলছেন? মিষ্টি হাবের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গরিব মানুষের অর্থনৈতিক দুর্দশা মিটবে না। মুখ্যমন্ত্রীর বাহিনী সন্দেশখালির মানুষের জল, জমি কেড়ে নিয়েছে। তাদের শাস্তি দেওয়ার হিম্মৎ পুলিশ প্রশাসনের হয়নি, কারণ তারাই তৃণমূলের সম্পদ। মুখ্যমন্ত্রী সন্দেশখালিতে যাওয়ার আগে সন্দেশখালির আদিবাসীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তাদের জমি কেড়ে জল ঢুকিয়ে দিচ্ছে তৃণমূলের বাহিনী। জমির দলিল বদলে দেওয়া হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে ভূমি দপ্তরের মন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী জানেন না কাদের মাধ্যমে এসব হচ্ছে?
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মঙ্গলবারই সন্দেশখালিতে যাওয়ার ঘোষণা করেছেন। এই সম্পর্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর সুজন চক্রবর্তী বলেন, মমতা ব্যানার্জি বিরোধী দলের নেত্রী থাকাকালীন যা করেছিলেন, শুভেন্দু অধিকারী তাঁর পাশে থেকে তাই শিখেছেন, এখন বিজেপি নেতা হয়ে তাই করছেন। মুখ্যমন্ত্রীর পরেই উনি যাবেন বলছেন, কিন্তু সেটা তো নির্দিষ্ট অঙ্ক কষে, মানুষের পাশে থাকার জন্য নয়। রেখা পাত্রকে নিয়ে অনেকরকম প্রচার করেছিলেন, কিন্তু মাঝের এতদিন ধরে সন্দেশখালিতে যাননি কেন?
সুজন চক্রবর্তী বলেন, সন্দেশখালিতে শিবু শাহাজাহানদের বেআইনি কার্যকলাপের শরিক হতে রাজি হননি বলে বিডিও’কে মেরে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, আমি তাঁকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম, মুখ্যমন্ত্রী যাননি। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর পোষা গুন্ডাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, নিজের প্রশাসনের অফিসারদের পাশেও দাঁড়াননি।
Salim on Mamata's Sandeshkhali speech
চিট ফান্ডের লুটের মতো সন্দেশখালির অপরাধকেও ভুলিয়ে দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী: মহম্মদ সেলিম
×
Comments :0