বারাবনির আসনবনি গ্রামে একজন সিপিআই(এম) কর্মীকে নৃশংসভাবে খুন করেছে দুষ্কৃতীরা। কমরেড রাম কোড়া(৩৭) নামে এই পার্টিকর্মী গত সোমবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি। পরদিন সকালে তাঁর রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। মৃতের মুখে রক্ত ছিল। গলায় ছিল ক্ষতচিহ্ন। মৃতের দাদা নুনি পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান, এলাকায় সিপিআই(এম) নেতা বাসুদেব কোড়া অভিযোগ করেন, তাঁর ভাইকে খুন করা হয়েছে। গ্রামজুড়ে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায়। গ্রামবাসীদের দীর্ঘ বিক্ষোভের মুখে পুলিশ তদন্তে নামতে বাধ্য হয়। তদন্তে পুলিশ কুকুরও নামানো হয়।
সিপিআই(এম) পশ্চিম বর্ধমান জেলা কমিটির সম্পাদক গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জি এই খুনের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে উপযুক্ত তদন্ত করে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই ঘটনা নিন্দা জানানোর কোনও ভাষা নেই। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে শাসকদলের দুষ্কৃতীরা পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করছে। নিহত কমরেড রাম কোড়া আমাদের পার্টিকর্মী ছিলেন। তিনি নির্বাচনের দিন বুথে পোলিং এজেন্টের কাজ করতেন।
আসানসোল (উত্তর) থানা এলাকায় বারাবনি বিধানসভা কেন্দ্রের নুনি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত আসনবনি গ্রামের নিহত পার্টিকর্মী কমরেড রাম কোড়ার (৩৭) পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে সিপিআই(এম) জেলা নেতৃত্ব। কমরেড রাম কোড়া পার্টি পরিবারের সদস্য ছিলেন। প্রতিটি নির্বাচনেই তিনি বামফ্রন্ট প্রার্থীর পোলিং এজেন্টের কাজ করতেন। পার্টি ও বামফ্রন্টের বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় ছিলেন। তিনি রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ ও দিনমজুরের কাজ করতেন। তাঁর দাদা বাসুদেব কোড়া একবছর নুনি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন। পাঁচ বছর উপপ্রধানও ছিলেন। কমরেড রাম কোড়ার স্ত্রী, এক পুত্র ও এক কন্যা রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে জানা গেছে, এদিন সকাল সাড়ে ৭টায় বারাবনির নুনি পঞ্চায়েতের আসনবনি গ্রামে জঙ্গল ঘেরা জায়গায় দেহটি পড়ে থাকতে দেখেন গ্রামবাসীরা। পরিচিত হওয়ায় তাঁরাই রামের বাড়িতে খবর দেন। পরিবারের সদস্যেরা দেহ শনাক্ত করার পরে থানায় খবর পাঠানো হয়। আসানসোল উত্তর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেহটি উদ্ধার করে। এরপরেই গ্রামে চাঞ্চল্য ছড়ায়। বাসুদেব কোড়া এদিন পুলিশকে জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ভাই বাড়ি থেকে বেরোন। রাতে বাড়ি ফেরেননি। পরিবারের সদস্যেরা রাতে খোঁজাখুঁজিও করেছিলেন। তারপরে এদিন বাড়ি থেকে প্রায় দু’শো মিটার দূরে একটি জঙ্গল ঘেরা জায়গায় দেহটি পড়ে থাকতে দেখা যায়। বাসুদেবের অভিযোগ, “গলায় কাটা দাগ ও শরীরের নানা অংশে আঘাত দেখে মনে হচ্ছে ভাইকে খুন করা হয়েছে। দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার আবেদন জানাচ্ছি।” একই দাবি করেছেন গ্রামবাসীরও। তাঁদের দাবি, এলাকায় রামের কোনও শত্রু রয়েছে, এমন কথা তাঁরা জানতেন না।
ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (সেন্ট্রাল) কুলদীপ সেনাওয়ানে-সহ অন্য পুলিশকর্তারা। ডিসি বলেন, “দেহে আঘাতের চিহ্ন দেখে প্রাথমিকভাবে খুন বলে মনে হচ্ছে। সবদিক খোলা রেখেই পুলিশ তদন্ত করছে। দুষ্কৃতীরা দ্রুত ধরা পড়বে।” ঘটনাস্থলে পুলিশ-কুকুর দিয়েও তল্লাশি চালানো হয়।
পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য পার্থ মুখার্জি, জেলা কমিটির সদস্য মনোজ দত্ত ও জয়দীপ চক্রবর্তী এবং সিপিআই(এম) বারাবনি এরিয়া কমিটির সম্পাদক তপন দাস
বারাবনির অসনবনি গ্রামে বুধবার সকালেই যান। তাঁরা পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান এবং ভবিষ্যতে পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
পার্থ মুখার্জি এদিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, পার্টি পরিবার। দলের মিছিল, সভায় তাঁরা নিয়মিত যোগ দিতেন। রাম কোড়াও প্রতিটি ভোটে বামফ্রন্টের পোলিং এজেন্ট হন। খুনের নেপথ্যে রাজনৈতিক কারণ উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বড় কথা হলো, পঞ্চায়েত ভোটের আগে এলাকায় একজন যুবক খুন হয়ে গেলেন। তা সন্ত্রাসেরই পরিবেশ তৈরি করছে।
Comments :0