HYDERABAD UNIVERSITY SFI

জাতবিচার-ধর্মান্ধতার ঘাঁটি হয়েছে ক্যাম্পাস, টানা ধরনায় হায়দরাবাদের ছাত্ররা

জাতীয়

HYDERABAD UNIVERSITY SFI ধরনায় হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা।

ক্যাম্পাস জুড়ে চলছে ‘পুজন’। গেরুয়া ঝাণ্ডা লাগিয়ে টানা ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কারের প্রচারে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে ছাত্রদের একতার বোধ। 

পিএইচডি’র জন্য ইন্টারভিউতে বলা হচ্ছে জাত শংসাপত্র দেখাতে। জমা নেওয়াও হচ্ছে। ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, হিন্দু উচ্চবর্ণের না হলেই বৈষম্যের মুখে পড়তে হচ্ছে। লিখিত পরীক্ষায় একশোতে ষাট পাওয়া মেধাবীও ইন্টারভিউতে শূন্য পাচ্ছেন।

চন্দ্রযান-৩ উড়েছে অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে। তেলেঙ্গানায় হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস আর কতটুকুই বা দূর। কিন্তু অবিজ্ঞান, অন্ধত্ব, জাতপাত আর সংকীর্ণ ব্রাহ্মণ্যবাদী বাছবিচারের ঘাঁটি হয়ে উঠেছে এই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। 

গুরুতর এমন একাধিক অভিযোগ তুলে উপাচার্যের দপ্তরের সামনে ঘেরাওয়ে বসে রয়েছে হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ। এই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল এসএফআই-এএসএ-ডিএসইউ জোট। এসএফআই দশ বছর ছাত্র সংসদে নির্বাচিত হয়ে আসছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠনের ইউনিট সভাপতি সোহেল আহমেদ যা জানাচ্ছেন তাতে বোঝা যাবে ‘নতুন ভারত’ বলতে কী বোঝাচ্ছে আরএসএস এবং তার রাজনৈতিক শাখা বিজেপি।     

ছাত্র কল্যাণ সমিতির কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন এক দলিত অধ্যাপক। উগ্র হিন্দুত্ববাদী আরএসএস’র অনুগামী সংগঠন এবিভিপি’র ক্ষোভ ছিল এই অধ্যাপককে নিয়ে। সোহেল জানাচ্ছেন, কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অনুষ্ঠান করে আরএসএস। যাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও সম্পর্ক নেই তারা কেন সরাসরি ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠান করবে? তীব্র ক্ষোভের মুখে পড়ে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়ার নামে ছাত্র কল্যাণ সমিতির কর্মাধ্যক্ষের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই দলিত অধ্যাপককে। 

গত সপ্তাহের শেষে হয়েছিল আরএসএস’র ‘পুজন’-মার্কা অনুষ্ঠান। তারপর ডিন-কে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় তীব্র হয়েছে ক্ষোভ। সোহেল বলেছেন, ‘‘বহু ছাত্রছাত্রীরা এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ। ওই অধ্যাপককে সরানোর পর ক্ষোভ জমাট বেঁধেছে। আমরা শুক্রবার থেকে বসেছি ধরনায়। ক্যাম্পাসে সাম্প্রদায়িক কাজকর্ম চালানো যাবে না। ক্যাম্পাসে চলবে না জাতপাতের সংকীর্ণ বিচার।’’

ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক কৃপা মারিয়া জর্জ বলেছেন, ক্যাম্পাসে অবিরত সাম্প্রদায়িক বিভাজন ছড়ানো হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরাসরি আরএসএস’র পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত। 

ছাত্র সংসদ বলছে, জাতীয় স্তরের প্রবেশিকায় উত্তীর্ণ হলে মিলছে আসন। তবু নির্ধারিত ফি’র বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের। সিইউইটি বা জাতীয় স্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর, দুই স্তরেই এই ব্যবস্থা। কিন্তু যে ফি নির্ধারিত তার চেয়ে বেশি অর্থ দিতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়কে। সবচেয়ে সমস্যা পড়ছেন গরিব এবং নিম্নবিত্ত পরিবারের ছাত্রছাত্রীরা। তাঁদের সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে ফি। 

কিন্তু ক্ষোভের সবচেয়ে বড় কারণ হয়েছে নির্বিচার সাম্প্রদায়িকীকরণ, আরএসএস’র দাপাদাপি আর খোলাখুলি জাতপাতের বিচার। পিএইচডি বাছাইয়ের ঘটনায় জাতের বিচার হয়েছিল, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকে ছাত্র সংসদের প্রশ্নের মুখে মানতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। পরে ঠিক হয় ইন্টাভিউ বোর্ডকে কারও নাম জানানো হবে না কেবল রোল নম্বর থাকবে। 

সোহেল বলছেন, ‘‘এরপরও দেখা যায় ইন্টারভিউ বোর্ডের কাছে জাত পরিচয়ের শংসাপত্র জমা দিতে বলা হচ্ছে। প্রতিবাদের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় পিছু হটেছে অংশত। বলা হয়েছে শংসাপত্র জমার জন্য আলাদা পোর্টাল থাকবে। ইন্টারভিউ’র সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক থাকবে না। যদিও আরএসএস কলকাঠি নাড়বে। কিন্তু ছাত্র আন্দোলন চাপ যে তৈরি করতে পেরেছে তা স্পষ্ট। এই আন্দোলন চলবে।’’

ছাত্র সংসদের সরাসরি অভিযোগ রয়েছে নিবন্ধক এবং পরীক্ষা নিয়ামক এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে। গত সপ্তাহের ঘটনায় একটি সংগঠনকে সামনে রেখে আরএসএস অনুষ্ঠান করেছিল। কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়নি অনুষ্ঠান আরএসএস’র। হাতে নাতে ধরা পড়ে যাওয়ার পর নিবন্ধক এবং উপাচার্য দু’জনেই অনুষ্ঠান বাতিল করতে পারতেন। কিন্তু তা করেনি। নিবন্ধকের পদত্যাগ দাবি করছেন ছাত্রছাত্রীরা। দাবি সিইউইটি’ নির্ধারিত ফি’র বাইরে অর্থ আদায়ের নিঙব বাতিলের। ইন্টারভিউ বোর্ডে জাত শংসাপত্র জমার নিয়ম বিজ্ঞপ্তি জারি করে বাতিল করার দাবিতে অনড় ছাত্রছাত্রীরা।

Comments :0

Login to leave a comment