Ssc scam

দিনভর ৭ জায়গায় তল্লাশি সিবিআই’র

কলকাতা

 কালীঘাটের কাকু থেকে বেহালার ভজা- ধৃত প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রীর বিধানসভা কেন্দ্রই কি নিয়োগ দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠেছিল? বৃহস্পতিবার দিনভর বেহালায় সিবিআই’র একের পর এক ঠিকানায় তল্লাশি অভিযানের পরে উঠছে সেই প্রশ্নই। 

একইসঙ্গে সিবিআই’র তদন্তর দীর্ঘসূত্রতা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। 
বৃহস্পতিবার সকালেই সিবিআই ঝটিকা তল্লাশি অভিযান চালানো হয় বেহালায় ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলী কাউন্সিলর পার্থ সরকার ওরফে ভজার বাড়িতে। পার্থ চ্যাটার্জির অন্যতম ঘনিষ্ঠ। তদন্তকারী আধিকারিকদের দাবি, এই ব্যক্তির মাধ্যমে নিয়োগ দুর্নীতির বিপুল পরিমাণ টাকা অন্যত্র, ভিনরাজ্যে পাচার হয়েছিল। পার্থ চ্যাটার্জির হয়ে নিয়োগ দুর্নীতির কোটি কোটি টাকা ‘ডিল’ করতেন এই কাউন্সিলর। ইডি সম্প্রতি প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের বিরুদ্ধে যে অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দিয়েছিল তাতেও নাম রয়েছে এই পার্থ সরকার ওরফে ভজার।
ভজার ‘অনুপ্রেরণা’ পার্থ চ্যাটার্জিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল গত বছরের ২২জুলাই। তার ১০ মাস বাদে প্রাক্তন মন্ত্রীর মানি লন্ডারিং, টাকা তোলার অন্যতম শাগরেদ এই তৃণমূল কাউন্সিলরের বাড়িতে তল্লাশি সিবিআই’র! দশ মাস ধরে কেউ কি আদৌ কোনও নথি, দুর্নীতির কাগজপত্র বাড়িতে জমিয়ে রাখবে? তল্লাশির ক্ষেত্রে এই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধান নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।
নিয়োগ দুর্নীতিতে তৃণমূল কাউন্সিলর ভজা ছাড়াও বেহালায় পার্থ চ্যাটার্জির ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী সন্তু গাঙ্গুলি, দীপক সরকারের বাড়িতে, ফ্ল্যাটে চলে তল্লাশি। একইসঙ্গে উত্তর ২৪পরগনার নিউ বারাকপুরে পার্থ চ্যাটার্জির প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক সুকান্ত আচার্য, তৃণমূলের কাউন্সিলর জয়দীপ দাসের বাড়িতেও চলে তল্লাশি। এদিনই সিবিআই’র আর একটি দল অভিষেক ব্যানার্জির ঘনিষ্ঠ, ব্যবসায়িক অংশীদার সেই কালীঘাটের কাকু ওরফে সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রের বেহালার বাড়ি ও ফ্ল্যাটে ম্যারাথন তল্লাশি চালায়। সব মিলিয়ে বৃহস্পতিবার নিয়োগ দুর্নীতি ও কয়লাকাণ্ডে কলকাতা, উত্তর ২৪পরগনার মোট সাতটি ঠিকানায় চলে এই ঝটিকা তল্লাশি অভিযান।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা নাগাদ এই সুজয় ভদ্রের বেহালার বাড়িতে হানা দেয় সিবিআই। সেই সঙ্গে তাঁর আরও একটি ফ্ল্যাটেও তল্লাশি চালানো হয়। ঘণ্টা চারেক ধরে চলে এই তল্লাশি। উদ্ধার হয় বেশ কিছু নথিপত্র, একাধিক অ্যাডমিট কার্ড, কয়েক লক্ষ টাকা। কালীঘাটের কাকুর দু’টি ফোনও নিয়ে যান তদন্তকারী আধিকারিকরা। সিবিআই আধিকারিকরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরেই সুজয় ভদ্র সাংবাদিকদের বলেন- তাঁর দু’টি ফোন নিয়ে গিয়েছে সিবিআই। আর মিলেছে একটা অ্যাডমিট কার্ড। মিউনিসিপ্যাল সার্ভিস কমিশনে পরীক্ষা দিয়েছিলেন তাঁর শ্যালিকার ছেলে, সেই অ্যাডমিট কার্ডই। তবে এই সিবিআই’র একটি সূত্র থেকে জানানো হয় এই দাবি সত্য নয়। তবে তাঁর বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধার নিয়ে জবাব দিতে রাজি হননি কালীঘাটের কাকু। জানিয়েছেন, তাঁর এক দিদি হাসপাতালে ভর্তি, তাই বাড়িতে টাকা ছিল।
তবে পার্থ চ্যাটার্জির অন্যতম শাগরেদ হিসাবে যে পার্থ সরকার ওরফে ভজা কার হয়ে কাজ করতো তা এমনকি বেহালার সাধারণ বাসিন্দারাও প্রকাশ্যে জানাচ্ছেন। পার্থ চ্যাটার্জির বিধায়কের কার্যালয়ে বসেও চলতো এই নিয়োগ দুর্নীতি। বিপুল টাকা, সম্পত্তির মালিক এই প্রোমোটার তৃণমূলী কাউন্সিলর। ভিনরাজ্যে হোটেলও আছে ভজার। কিছুদিন আগেই ইডি কুন্তলকাণ্ডে যে চার্জশিট দায়ের করেছিল তাতে স্পষ্ট উল্লেখ করা ছিল – কুন্তল ঘোষ ১২৮ জনকে প্রাইমারিতে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য মাথাপিছু ৮ লক্ষ টাকা করে নিয়েছিল। মোট আদায়কৃত টাকা থেকে ২৫ লক্ষ টাকা নিজের কমিশন হিসাবে নেওয়ার পরে বাকি টাকা এই পার্থ সরকার ওরফে ভজা, পার্থ চ্যাটার্জির প্রাক্তন ওএসডি প্রবীর ব্যানার্জি, প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক সুকান্ত আচার্য, পার্থ চ্যাটার্জির ঘনিষ্ঠ দীপক সরকারকে দিয়েছিলেন। সেই টাকার পরিমাণ ১০ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা।
সেই পার্থ সরকার ওরফে ‘ভজা’ র বেহালার লোকনাথ আবাসনের ফ্ল্যাটেই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তল্লাশি চালায় সিবিআই। আদপে সেই পার্থ চ্যাটার্জির পাড়া নাকতলার বাসিন্দা এই প্রোমোটার। গত কর্পোরেশন ভোটে পার্থ চ্যাটার্জি তাঁকে টিকিট দেন। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে পার্থ চ্যাটার্জির শাগরেদ হিসাবেই বেহালায় দাপট। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনেও তাঁর দাপট। তৃণমূলেরই একাংশের দাবি বেহালা জুড়ে যে কোন নির্মাণকাজে টাকা দিতে হত ভজাকে। কোটি কোটি টাকার মালিক।
পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আপ্ত সহায়ক সুকান্ত আচার্যের নিউ ব্যারাকপুরের বাড়িতেও এদিন চলে সিবিআই’র তল্লাশি অভিযান। এর আগে কয়েক দফায় জেরার মুখে পড়েছিলেন সুকান্ত আচার্য। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বাগ কমিটির রিপোর্টেও সুকান্ত আচার্যের বিরুদ্ধে নিয়োগ সহ দুর্নীতিতে সরাসরি যুক্ত থাকার অভিযোগ জানা গেছে তাঁর মোবাইল ফোনও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ইডি’র চার্জশিটেও উল্লেখ ছিল এই ব্যক্তির নাম। চাকরি দেওয়ার নাম করে অযোগ্যদের ইন্টারভিউতে ডাকার ব্যবস্থার অন্যতম মাথা ছিল এই ব্যক্তি।
 

Comments :0

Login to leave a comment