BIMAN BASU

তৃণমূলের সঙ্গে সমঝোতা নয়, কমরেড কল্যাণ মুখার্জির স্মরণসভায় বিমান বসু

জেলা

BIMAN BASU গণশক্তি পত্রিকার তহবিলে চেক তুলে দেওয়া হচ্ছে বিমান বসুর হাতে।

বিজেপি এবং তৃণমূল উভয়কেই জন বিচ্ছিন্ন করতে হবে। বাড়াতে হবে জনসংযোগ। এই কাজ করেই কমরেড কল্যাণ মুখার্জির স্মৃতির প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানাতে হবে। প্রবীণ সিপিআই(এম) নেতা এবং রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু শনিবার খড়দহ রবীন্দ্র ভবনে এ কথা বলেছেন। প্রয়াত সিপিআই(এম) নেতা কমরেড কল্যাণ মুখার্জির স্মরণে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন তিনি। পার্টির উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির আহ্বানে হয়েছে এই সমাবেশ। 

বিমান বসু বলেন, ‘‘দেশকে রক্ষা করতে সর্বশক্তি দিয়ে বিজেপি’র বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে। কিন্তু পশ্চিমবাংলার উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে, এখানে বিজেপি বিরোধী লড়াইতে তৃণমূলের সঙ্গে বোঝাপড়া হবে না। কেরালার রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বামপন্থী ফ্রন্ট এলডিএফ’র বিরোধী কংগ্রেস জোট ইউডিএফ। তাই কেরালাতে বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে বামফ্রন্টের বোঝাপড়া হবে না। আবার ত্রিপুরাতে কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়া হলেও তৃণমূলের সঙ্গে সম্ভব নয়।’’ 

বসু বলেন, ‘‘একটি ক্ষেত্রেও দেখা যাবে না যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নির্দিষ্টভাবে আরএসএস বিরোধী কোনও কথা বলেছেন। আরএসএস জানে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে তৃণমূল কংগ্রেসকে কিছু কথা বলার সুযোগ দিতে হবে।’’

সিপিআই(এম) ২৩ তম পার্টি কংগ্রেসের ঘোষিত সিদ্ধান্তের উল্লেখ করে বিমান বসু বলেন, ‘‘রাজ্যগুলির বিশেষ পরিস্থিতি বিশ্লেষণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশের প্রধান শত্রু বিজেপি’র বিরুদ্ধে সংগ্রামে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে সিপিআই(এম)।’’ 

বিমান বসু ছাড়াও স্মরণ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী  ড. অসীম দাশগুপ্ত , সিপিআই(এম) উত্তর ২৪ পরগনা  জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী, পার্টিনেতা তড়িৎ বরণ তোপদার, জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য ঝন্টু মজুমদার, পার্টির খড়দহের দুই এরিয়া কমিটির সম্পাদক সজল গুহ এবং বাবন সরকার, কমরেড কল্যাণ মুখার্জির কন্যা কল্পিতা। কমরেড কল্যাণ মুখার্জি স্মরণে প্রস্তাব পাঠ করে বক্তব্য রাখেন স্মরণসভার সভাপতি মানস মুখার্জি ।

স্মরণসভায় ছিলেন ছিলেন কমরেড কল্যাণ মুখার্জির স্ত্রী রিঙ্কু মুখার্জি, ডাঃ গৌতম মুখার্জি এবং পলাশ দাশ সহ সিপিআই(এম)’র জেলা নেতৃবৃন্দ, সিআইটিইউ নেতা সুভাষ মুখার্জি, দেবাঞ্জন চক্রবর্তী 

শুরুতে কমরেড কল্যাণ মুখার্জির সংগ্রামী জীবনের কর্মকান্ড নিয়ে বড় পর্দায় তথ্যচিত্র প্রদর্শনী ও শ্রদ্ধা জানিয়ে হৃদয়গ্রাহী নৃত্য আলেখ্য মঞ্চস্থ হয়। ভারতীয় গণনাট্য সংঘের সৃজন শাখা, খড়দহ শাখার শিল্পীরা গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন । 

বিমান বসু মণিপুরের জাতি দাঙ্গার প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করেন। রাজ্যগুলির বিভিন্ন ধরণের জাতি, উপজাতি, মানুষের খাদ্যাভাস ভাষা সম্পর্কে বর্ণনা করেন বিমান বসু। তিনি বলেন, ‘‘আরএসএস পরিচালিত বিজেপি সরকার চায় পার্থক্য থেকে বিরোধ এবং তা থেকে সংঘর্ষ হোক। ভারতবর্ষে ধর্মের ভিত্তিতে প্রয়োজনে জাতপাত ও ভাষার ভিত্তিতে বিভাজন সৃষ্টির নীতি নিয়ে চলে আরএসএস।’’ 

 

মৃণাল চক্রবর্তী বলেন , মেরুকরণ ও জিগির সর্বস্ব রাজনীতি দেশ ও রাজ্যের মানুষের ক্ষতি সাধন করে শোষক শ্রেণীকে সাহায্য করছে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের শাষক দলকে বিচ্ছিন্ন করতে  নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে কাজ চালিয়ে কমরেড কল্যাণ মুখার্জি কে শ্রদ্ধা জানাতে হবে।

 

অসীম দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের বিকল্প নীতি কি ভাবে শহরাঞ্চলে প্রয়োগ করা যায় সেই ভাবনা ও  কর্মকান্ডে কমরেড কল্যাণ মুখার্জির অবদান ছিল। খড়দহ স্টেশন রোডের উড়াল পুল তৈরির প্রচেষ্টা, জল জমা দূর করতে খড়দহ খালে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্প, বলরাম হাসপাতাল অধিগ্রহণ, ইলেকট্রো স্টিল সম্প্রসারণ করে কর্মসংস্থান, বিদ্যালয়গুলিকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত করা, সর্ববৃহৎ খড়দহের পুষ্প প্রদর্শনী, আধুনিক প্রেক্ষাগৃহ রবীন্দ্র ভবন গড়ে তোলার কাজে সাধারণ মানুষকে শামিল করেন।’’ 

কমরেড কল্যাণ মুখার্জির পিতা সমাজ সংগঠক ও কমিউনিস্ট সংগঠক কমরেড কেদার মুখার্জির কথা উল্লেখ করে তড়িৎ বরণ তোপদার বলেন, ‘‘সৃজনশীলতা,  একাগ্রতা, প্রতিটি কাজের আগে পরিকল্পনা, প্রশ্নাতীত সততা ও নিষ্ঠা  কমরেড কল্যাণ মুখার্জি কে নেতৃত্বের পর্যায়ে নিয়ে এসেছিল।’’ 

Comments :0

Login to leave a comment